ওয়াসেক বিল্লাহ্ | তারিখ: ০২-০৭-২০১০
জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় তিন নেতার গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের কাছে নালিশ করছে দলটি। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে বিক্ষোভ করেছেন জামায়াতের প্রবাসী নেতা-কর্মীরা। জাতিসংঘের সদর দপ্তরের সামনেও বিক্ষোভ করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা। তাঁরা সরকারের বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের অভিযোগ আনছেন।
দলের আমির মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের গ্রেপ্তারের বিষয়টিকে দলটির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান হিসেবে দেখছে জামায়াত। তাঁদের গ্রেপ্তারের পর দলের জ্যেষ্ঠ নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, এ টি এম আজহারুল ইসলাম, তাসনীম আলমসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলার পর জামায়াতের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্কও বিরাজ করছে।
পাশাপাশি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে তাঁর সহযোগিতা চেয়েছেন জামায়াতের নেতা কামারুজ্জামান ও কর্মপরিষদের সদস্য সৈয়দ আবদুল্লাহ্ মোহাম্মদ তাহের।
খালেদা জিয়া কী বলেছেন জানতে চাইলে আবদুল্লাহ্ মোহাম্মদ তাদের বলেন, ‘ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) বিস্ময় ও সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। এ নিয়ে কী করা যায়, সে বিষয়ে পরামর্শ করে জানাবেন বলে আমাদের বলেছেন।’
বিদেশের সঙ্গে যোগাযোগ: আবদুল্লাহ্ মোহাম্মদ তাহের প্রথম আলোকে বলেন, ‘জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেওয়ার ঘটনায় দেশের ভেতরে-বাইরের মানুষ উদ্বিগ্ন। আমরা এর প্রতিবাদে দেশে মিছিলও করতে পারছি না। মিছিল শুরু করলেই পুলিশ এসে তাড়া করে। এ অবস্থায় আমরা বা আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধুবান্ধব যারা আছি, তারা বিদেশের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।’
জামায়াতের নেতারা বিদেশিদের কী বলছেন জানতে চাইলে তাহের বলেন, ‘আমাদের ওপর নির্যাতন চলছে, হয়রানিমূলক মামলা দিচ্ছে, পুলিশ নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে—আমরা তাঁদের এ কথাগুলো জানানোর চেষ্টা করছি।’
দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পশ্চিমা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ও বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগকারী জ্যেষ্ঠ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেকেই আমাদের কাছ থেকে খোঁজ-খবর নিচ্ছে, জানতে চাইছে। আমাদের নেতাদের কী কারণে ধরা হয়েছে, তাঁদের কোথায় রাখা হয়েছে—এসব বিষয়ে দূতাবাসগুলো খোঁজ-খবর নিচ্ছে। ঢাকার জাতিসংঘ কার্যালয় থেকেও আমাকে টেলিফোন করা হয়েছে, খোঁজ নিয়েছে।’
বিদেশে প্রতিবাদ: মুহাম্মদ কামারুজ্জামান জানান, গত বুধবার ইংল্যান্ডে বাংলাদেশি দূতাবাসের সামনে অবস্থান করে জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ও নিউইয়র্ক শহরেও প্রতিবাদ করা হয়েছে। জাতিসংঘের সদর দপ্তরের সামনেও প্রতিবাদ জানানোর প্রস্তুতি চলছে।
কারা এসব কর্মসূচি পালন করছে জানতে চাইলে কামারুজ্জামান বলেন, ‘প্রবাসী যারা আছে, তাদের মধ্যে যারা আমাদের ভালোবাসে তারাই এসব করছে।’
আবদুল্লাহ্ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘যেসব দেশে প্রকাশ্যে কর্মসূচি পালন করা যায়, সেসব দেশে আমরা কর্মসূচি পালন করব। এর বাইরেও নানা দেশে ঘরোয়া পর্যায়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে। সৌদি আরবেও আমাদের কাজ চলছে।’
দেশে কর্মসূচি পালনের চেষ্টা: গতকাল জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতারা দলীয় কার্যালয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন। বৈঠকে দেশে যথাসম্ভব কর্মসূচি পালন করার কথা বলেন নেতারা। একজন নেতা বলেন, দেশের ভেতরে আন্দোলন না হলে বিদেশে আন্দোলন দিয়ে কিছু হবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার পরিকল্পিতভাবে জামায়াতকে ধ্বংস করে দিতে চাইছে। সরকার আমাদের ওপর সর্বাত্মক অভিযান শুরু করেছে। পরিস্থিতি দ্রুত খারাপের দিকে যাচ্ছে। তবে জামায়াত গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করে যাবে। সরকারকে কোনো রকম সুযোগ দেওয়া হবে না।’
মুহাম্মদ কামারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের লোকদের চরম ধৈর্য ধারণ করতে বলেছি। সরকার বাড়াবাড়ি করুক, আমাদের তরফ থেকে যেন কোনোরূপ সুযোগ তৈরি করে দেওয়া না হয়, সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখতে কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন