সেলিম জাহিদ
দলের প্রথম সারির পাঁচ নেতাকে গ্রেপ্তারের পর জামায়াতে ইসলামীর অন্য কেন্দ্রীয় নেতারাও গ্রেপ্তার আতঙ্কে ভুগছেন। যেকোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন আশঙ্কায় তাঁরা নিজ নিজ সাংগঠনিক দায়িত্ব গুছিয়ে রাখছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তারের আশঙ্কা থাকায় জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান অস্থায়ী নেতৃত্ব দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী ও কর্মপরিষদের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের সঙ্গে পরামর্শ করে আপৎকালীন অন্তত আরো দুই ধাপের নেতৃত্ব প্রস্তুত করেছেন। গ্রেপ্তারের নতুন ঘটনা ঘটার পর তাঁরা দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আরো নেতাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা সব ধরনের ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত আছি। জামায়াত আদর্শভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠিত দল। লিডারশিপে সাময়িক ক্রাইসিস হলেও সাংগঠনিক পদ্ধতিতেই নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে।'
প্রসঙ্গত, গত ২৯ জুন জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার একটি মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর ওই রাতেই দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে পরিবর্তন হয়। দলের দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মকবুল আহমদ ভারপ্রাপ্ত আমির ও তৃতীয় জ্যেষ্ঠ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব নেন। এই পরিবর্তনের বিষয়টি গ্রেপ্তারের আগেই জামায়াত আমির নিজামী দলের গঠনতন্ত্রে দেওয়া ক্ষমতাবলে ঠিক করে যান।
ইতিমধ্যে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল পদমর্যাদার আরো দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লাকে পল্লবী থানায় দায়ের করা একাত্তরের গণহত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দলের অন্তত আরো পাঁচজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে যেকোনো সময় গ্রেপ্তার করা হতে পারে। অবশ্য সরকারি সূত্র ও সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থা এ ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে রাজি হয়নি।
গ্রেপ্তারের এ তালিকায় সাবেক জামায়াত আমির গোলাম আযম, নায়েবে আমির আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ, মাওলানা আবদুস সুবহান, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর নাম রয়েছে বলে গুঞ্জন আছে। তিন দিন ধরে মীর কাসেম আলীর পেছনে সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে বলে জামায়াত সূত্র দাবি করেছে।
সূত্র জানিয়েছে, রিমান্ডে গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জামায়াতের পাঁচ শীর্ষ নেতার দেওয়া কিছু তথ্য যাচাই করার স্বার্থে আরো কয়েকজন নেতাকে হেফাজতে নিতে চায় পুলিশ। তবে তা এখনই, না আরো কদিন পর_তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, রিমান্ডে পাঁচ শীর্ষ নেতার জবানবন্দি নেওয়ার পর তৃতীয় দফায় উলি্লখিতদের মধ্য থেকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে।
পাঁচ শীর্ষ নেতার পর নতুন করে গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় থাকা সম্ভাব্য নেতাদের নিয়ে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী ও কর্মপরিষদের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা কয়েকবার বৈঠক করেছেন। পল্লবীর গণহত্যার মতো এ ধরনের কোনো মামলায় এ টি এম আজহারুল ইসলাম গ্রেপ্তার হলে দলের অপর দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও ডা. শফিকুল ইসলামের মধ্য থেকে একজন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পেতে পারেন। অধ্যাপক মুজিব কদিন ধরে মাঠে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।
ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগসহ বড় কোনো মামলা না থাকায় এ পদে পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম। প্রয়োজনে আপৎকালীন দায়িত্ব পাবেন জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির অধ্যাপক নাযির আহমদ। তবে সংকট সৃষ্টি হলে কে কোন দায়িত্ব পালন করবেন তা নির্ধারণ করার গঠনতান্ত্রিক কর্তৃত্ব আমিরের। সে হিসেবে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত আমির প্রয়োজন পড়লে নিজ ক্ষমতাবলে তা প্রয়োগ করবেন।
সূত্র জানিয়েছে, নেতৃত্বের এই ছকেও চিড় ধরলে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ থেকে নতুন নেতৃত্ব আসবে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি অধ্যাপক তাসনীম আলম, ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, হামিদুর রহমান আযাদ এমপি, নুরুল ইসলাম বুলবুল, মাওলানা আবদুল হালিম, চট্টগ্রাম মহানগর আমির শামসুল ইসলাম এমপি, সিলেট মহানগর আমির এহসানুল হক যুবায়ের প্রমুখ উঠে আসবেন। রাজশাহী মহানগর আমির অধ্যাপক আতাউর রহমান ও খুলনা মহানগর আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার মুক্তি পেলে আপৎকালীন সময়ে তাঁরাও কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেতে পারেন।
দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেন, 'ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব সম্পর্কে আপনাকে বলব কেন?'
তিনি বলেন 'জামায়াতে ইসলামী একটি পরীক্ষিত ও পুরাতন দল। জামায়াতের নেতারা যদি সরকারের রোষানলে পড়েন, জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়ে গ্রেপ্তার হন; তাহলে যাঁরা থাকেন, তাঁরাই দল চালাবেন।'
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান জোর দিয়ে বলেন, 'জামায়াতের নেতৃত্ব শূন্য করা যাবে না। একজন রুকনকে আমির বানালে তিনিও জামায়াতকে পরিচালনা করতে পারবেন। কারণ জামায়াত যে আন্দোলন করে তা পরিচালনা করেন মহান আল্লাহ।'
হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, 'কোনো দলকে নির্যাতন করে শেষ করা যায় না। জাসদ, জাগপার মতো দলকেও শেষ করা যায়নি। জামায়াতকেও শেষ করা যাবে না।'
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন