20 July 2010

জিজ্ঞাসাবাদে জামায়াত নেতারা: তারেক দুর্নীতিবাজ বলেই জোটের আজ এ পরিণতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

তারেক জিয়া চরম দুর্নীতিবাজ, তাঁর জন্যই বিএনপি-জামায়াত জোটের এই পরিণতি। তারেক বিএনপির কাণ্ডারি হলে ভবিষ্যতে এই দলটির সঙ্গে রাজনীতির মাঠে থাকা জামায়াতের জন্য হয়তো অসম্ভব হবে। রিমান্ডে থাকা জামায়াত নেতারা বিএনপির সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ককে এভাবেই মূল্যায়ন করেছেন বলে একটি সূত্র দাবি করেছে। জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে জড়িত একটি সূত্র জানায়, বিএনপি ও জামায়াত দুটি দুই মেরুর দল হলেও সম্পর্ক কিভাবে হলো তা জামায়াত নেতাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। জবাবে জামায়াত নেতারা বলেন, একটি পর্যায় পর্যন্ত গিয়ে আগানো সম্ভব হচ্ছিল না। অনেক জায়গায় রাজনৈতিক তৎপরতা চালানোও কঠিন ছিল তাদের জন্য। এসব কাটিয়ে উঠতে এবং রাজনৈতিকভাবে জামায়াতের অবস্থান শক্তিশালী করতেই বিএনপির সঙ্গে জোট বাধা হয়। জামায়াত নেতারা আরো বলেছেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানই জামায়াতকে প্রকাশ্যে রাজনীতির সুযোগ দিয়েছিলেন। তাই তাঁরা তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। পরে জামায়াত নিজের মতো করে চলার চেষ্টা করে।

সূত্রমতে, বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কের ফলাফল মূল্যায়ন করতে গিয়ে জামায়াত নেতারা বলেছেন, লাভ-ক্ষতি দুটোই হয়েছে। লাভ হলো তাঁরা সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়েছেন। আর ক্ষতি হলো, বিএনপির ব্যাপক দুর্নীতির কারণে জামায়াতের গায়ে গন্ধ লেগেছে। জিজ্ঞাসাবাদকারীরা জানতে চান, বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে সরকারি চাকরির নিয়োগের ক্ষেত্রে জামায়াত না বিএনপি লাভবান বেশি। তবে এই প্রশ্নের জবাবে তাঁরা চুপ করে থাকেন। জিজ্ঞাসাবাদকারীদের একজন এ সময় বলেন, তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায় জামায়াত লাভবান বেশি। 'এ ছাড়া আপনাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে।' তার পর নেতারা কোনো উত্তর দেননি।

মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী জিজ্ঞাসাবাদকালে গোয়েন্দাদের কাছে দাবি করেন,
'জামায়াতে যোগদানের পর আমার ভাবমূর্তি খারাপ হয়েছে। একসময় বিশ্বের ৫০টি দেশে ওয়াজ করেছি। সৌদি বাদশাহর অতিথি হয়ে কয়েকবার সৌদি আরব সফর করেছি। আগে দেশের কোথাও ওয়াজ হলে এক এক বছর আগে লোকজন আমাকে বুকিং দিত। আর এখন ওয়াজ করতে গেলে লোকজন দা-লাঠি নিয়ে তাড়া করে। ওয়াজ মাহফিলের মঞ্চে ভাঙচুর চালায়।'

সাঈদীর দেওয়া এই বক্তব্য সম্পর্কে নিজামী ও মুজাহিদ জানান, সাঈদী অনেক আগে থেকেই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। দলের নেতারা ছাড়া অন্য কেউ তা জানত না। '৮০ সালের দিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়াজ মাহফিলে বক্তৃতা করে খ্যাতি অর্জন করে 'ইত্তেহাদুল উম্মাহ' নামের একটি সংগঠনের আড়ালে সাঈদী জামায়াতের হয়ে কাজ করতেন। তখন তিনি জামায়াতের 'রুকন' ছিলেন এবং '৮৯ সাল পর্যন্ত তিনি ওই পদে বহাল ছিলেন। কিন্তু কখনো তাঁকে প্রকাশ্য রাজনীতিতে ডাকা হতো না। চারদিকে নামডাক বেড়ে যাওয়ার পর ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, খেলাফত মজলিসসহ বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন সাঈদীকে তাদের দলে টানার চেষ্টা করে। তখন সাঈদীকে জামায়াতের 'শুরা সদস্য' করে প্রকাশ্যে রাজনীতিতে আনা হয়।

সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া ঠেকাতে জামায়াত বিশেষ একটি টিমও গঠন করেছিল। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি তাদের সঙ্গে না থাকায় তিন নেতা হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তিন জামায়াত নেতার মধ্যে নিজামী ও সাঈদী মানসিকভাবে খুবই দুর্বল প্রকৃতির বলেও জিজ্ঞাসাবাদকারী সূত্রে জানা গেছে।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন