সেলিম জাহিদ
একসঙ্গে দলের তিন শীর্ষ নেতা নিজামী, সাঈদী ও মুজাহিদের পর আরো কয়েকজন নেতার গ্রেপ্তার আতঙ্কে গভীর হতাশা নেমে এসেছে জামায়াতে। প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও নেতাদের সঙ্গে একান্ত আলাপে এই চিত্র উঠে এসেছে।
জানা গেছে, জামায়াতের আরো অন্তত তিনজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে শিগগিরই গ্রেপ্তার করা হতে পারে। এ সঙ্কটে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান নেতৃত্ব দলের একান্ত বাধ্যগত ছাত্রশক্তি ইসলামী ছাত্রশিবিরের ওপর ভরসা করেই সরকারকে প্রতিরোধের স্বপ্ন দেখছে। জামায়াতের বিপর্যয়ে এখন ছাত্রশিবিরই একমাত্র ভরসা কি না জানতে চাইলে তেমনই ইঙ্গিত করে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ রেজাউল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন 'তাতো অবশ্যই।'
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলায় গত ২৯ জুন বিকেলে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন।
গত পাঁচ দিনে দলটির নেতা-কর্মীরা শীর্ষস্থানীয় তিন নেতার মুক্তির দাবিতে বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভ করলেও সরকারের দৃষ্টিগ্রাহ্য হওয়ার মতো জোরালো কোনো প্রতিবাদ করতে পারেনি। এমনকি জামায়াতের সব জেলা ও উপজেলা কেন্দ্র-ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারিয়েট সূত্র জানিয়েছে, জামায়াতের তিন নেতার মুক্তির দাবিতে সারা দেশে শিবিরের ১১৭টি সাংগঠনিক শাখার মধ্যে ১০৫ শাখা শক্তভাবে বিক্ষোভ করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, শিবিরকে সম্মুখ সারিতে রেখে ধীরে ধীরে মাঠ তাঁতানোর চেষ্টা করছে জামায়াত। গত শনি ও রবিবারে শিবির ঢাকা এবং চট্টগ্রামে এর ইঙ্গিতও দিয়েছে। তিন নেতার মুক্তির দাবিতে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম শেষে এ সপ্তাহেই তারা অবরোধসহ আরো কিছু কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা করতে যাচ্ছে।
তিন নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার পর গত শনিবার জামায়াতের আদর্শ সমর্থক এই ছাত্র সংগঠন প্রথমবারের মতো রাজধানীর ফকিরেরপুল মোড় ও নয়াপল্টন সড়কে ইটপাটকেল ছুড়ে আগামীতে পুলিশের মুখোমুখি হওয়ার জানান দিয়েছে। জনমনে আতঙ্ক ছড়াতে শিবির কর্মীরা দাহ্য তরল পদার্থ ঢেলে রাস্তায় আগুনও ধরিয়ে দেয়। পরদিন রবিবার শিবির চট্টগ্রামে বেপরোয়া ভাঙচুর ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। এর আগে ছাত্রশিবির জামায়াত নেতাদের মুক্তি না দিলে 'দেশ অচল' করে দেওয়ার প্রচ্ছন্ন হুমকি দেয়।
শিবির সভাপতি বলেন, 'আমাদের যে জনশক্তি আছে, চাইলে এখনই দেশ অচল করে দেওয়া যায়। তবে আমরা এখনই শক্তি ক্ষয় করবো না।' সকালে ডাক দিলে দুপুরে ২০-২৫ হাজার ছাত্র রাস্তায় জড়ো করা কোনো ব্যাপারই না বলে দাবি করেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেন হত্যার পর থেকে এ পর্যন্ত জামায়াত-শিবিরের ওপর সরকারের দমনমুখী দৃঢ় অবস্থানের কারণে দলটির কেন্দ্র থেকে প্রান্তিক পর্যায়ের কর্মীরা ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে ওঠেছে। দলীয় কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পুলিশের বেধড়ক লাঠিপেটা ও একের পর এক নতুন মামলায় জড়ানোয় জামায়াতের বয়স্ক নেতা-কর্মীদের একটি বড় অংশ ভয় ও হাতাশায় পড়ছে। তবে দলটির নেতারা কোনো রকমের হতাশার কথা স্বীকার করেন না।
জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেন, 'যাঁরা আল্লাহর শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন, অংশগ্রহণ করেন_তাঁরা জুলুম-নির্যাতন মেনে নিয়েই আন্দোলনে শরিক হন। দুনিয়ার যে কোনো ভীতি তাঁদের কাছে তুচ্ছ।'
এ বিষয়ে জামায়াত দলীয় সংসদ সদস্য ও দলের ঢাকা মহানগর শাখার সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, 'আমাদের কর্মীরা চাঙা আছে। তারা শক্তভাবেই মাঠে নামতে চায়, কিন্তু আমাদের পলিসি ডেসট্রাক্টিভ নয়। আমরা লংটার্ম মুভমেন্ট দাঁড় করাতে চাই।'
শিবির সভাপতি মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, 'খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের পর মনে হয়েছে দেশে বিএনপি নেই। শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের পর বাতাসও নড়েনি। বাস্তবতা হচ্ছে তারাই তো এখন দোর্দণ্ড প্রতাপে ক্ষমতায়। সুতরাং বর্তমান প্রেক্ষাপটই শেষ কথা নয়।' তিনি সর্বশক্তি নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার কথা জানান।
সামগ্রিক হতাশাজনক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমদ বলেন, 'দেখা যাক, আল্লাহ ভরসা। দুনিয়ার মানুষ তো অনেক কিছুই করে। আল্লাহ তো একজন আছেন।'
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন