13 July 2010

রিমান্ডে গোলাম মাওলার মুখোমুখি নিজামী-মুজাহিদ, আজ সাইদুর ও তিন জামায়াত নেতাকে একসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ

মাসুদ কার্জন

জামায়াতের তিন শীর্ষ নেতা_নিজামী, মুজাহিদ ও সাঈদীর সঙ্গে আজ সোমবার মুখোমুখি করা হচ্ছে জেএমবির আমির সাইদুর রহমানকে। এর আগে সাইদুরের কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য যাচাই বাছাই করতেই জামায়াত ও জেএমবির নেতাদের একসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রথমে আলাদা, পরে পর্যায়ক্রমে একসঙ্গে চারজনকে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

ওদিকে রবিবার রাতে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা ড. সৈয়দ গোলাম মাওলাকে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মুখোমুখি করা হয়।

রমনা থানায় দায়ের করা ফারুক হত্যা মামলায় আদালত গতকাল নিজামীকে চার দিনের পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। এ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত আগেই নিজামীর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন। পল্টন থানার তিন মামলায় ৯ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল সোমবার তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়।

এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, জেএমবিপ্রধান সাইদুর রহমান জিজ্ঞাসাবাদে জামায়াত-জেএমবি সম্পর্কের গোপন রহস্য ফাঁস করেন। সরাসরি অর্থ সহায়তা দেওয়া ছাড়াও বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে জেএমবিকে ব্যবহার করতে চেয়েছিল জামায়াত। উত্তরাঞ্চলে পাঁচটি জেলার জামায়াতের সদস্য (রুকন) পর্যায়ের ২৫ জন একই সঙ্গে সরাসরি জেএমবির জন্য কাজ করছে, সাইদুরের দেওয়া এসব তথ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিতে তাঁদের মুখোমুখি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সাইদুরের মোবাইল কল রেকর্ড থেকে জামায়াত নেতাদের সঙ্গে তাঁর একাধিকবার যোগাযোগের ব্যাপারে গোয়েন্দাদের কাছে নিশ্চিত তথ্য আছে। মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদকালে এসব তথ্য যাচাই করা হবে। আদালত গতকাল সাইদুরের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

জিজ্ঞাসাবাদকারীদের একটি সূত্র জানায়, মানসিকভাবে অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছেন জামায়াত নেতারা। তবে এখনো নিজেকে চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করছেন মুজাহিদ। নিজামী ও সাঈদী এমনিতে স্বাভাবিক থাকলেও জিজ্ঞাসাবাদের সময় কিছু জানতে চাইলে তাঁরা ভয় পেয়ে যান। অনেক সময় রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার কথা বলেন তাঁরা। বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বিভিন্ন সময় তাঁদের নেওয়া পরিকল্পনার কথা জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তাঁরা প্রথমে দাবি করেন, জামায়াত নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক একটি দল। এ সময় গোয়েন্দারা নানা তথ্য হাজির করেন। তা দেখেই তাঁদের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।

জিজ্ঞাসাবাদকারীরা অনেক সময় আলাপের ছলে জামায়াত-শিবির সম্পর্কে জানতে চান তাঁদের কাছে। রবিবার রাতে একপর্যায়ে তাঁদের কাছে জিজ্ঞাসাবাদকারীরা বলেন, 'আপনাদের ছাত্র সংগঠন শিবির তো প্রতিপক্ষের রগ কাটে।' এ সময় তাঁরা উত্তরে বলেন, 'এসব মিডিয়ার গুজব বা প্রচারণা। অভিযোগ আসার পর এসবের তদন্ত করেও কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।' তখন জিজ্ঞাসাবাদকারীরা বলেন, 'আপনারা চাইলে কিছু প্রমাণ হাজির করতে পারি'। প্রথমে তাঁরা চুপ করে থাকেন, পরে উত্তরে জামায়াত নেতারা বলেন, 'আরপিও অনুযায়ী এখন তো শিবির অনেকটা স্বাধীন সংগঠন। ফলে দায়-দায়িত্ব আর জামায়াতের ঘাড়ে পড়ে না।'

পরে জামায়াত সম্পর্কে জানতে চাইলে তিন নেতাই অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েন। সম্প্রতি জামায়াতের মধ্যে মতবিরোধ আসলে কী জানতে চাইলে তাঁরা তিনজনই মতবিরোধের কথা স্বীকার করেন। তাঁদের দাবি, এসব বিরোধের মূলে হচ্ছে মীর কাসেম আলী। কাসেম আলী এর আগেও একবার বিরোধের সূচনা করেছিল। কাসেম আলী কেন বিরোধ সৃষ্টি করছে_এ রকম প্রশ্নের জবাবে তাঁরা দাবি করেন, টাকার জন্য। এ ছাড়া নেতৃত্বের একটি লোভও আছে তাঁর। তাঁদের গ্রেপ্তারের আগ মুহূর্তেও দলের ভেতরের বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। কামারুজ্জামান ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি হওয়ার ইচ্ছে করেছিলেন। কিন্তু তা না হতে পারায় তিনি একটু আলাদা হয়ে যান। অন্যদিকে জামায়াতের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত আমির ও সেক্রেটারি জেনারেলের নেতৃত্বে অন্য একটি গ্রুপ আছে। তবে তারা আসলেই তাঁদের মুক্তি চাচ্ছে।

আরেক কর্মকর্তা জানান, জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় তিন নেতা গ্রেপ্তারের পর নাশকতার অনেক পরিকল্পনার বিষয়ে তথ্য পেয়েছেন তাঁরা। মহাসড়ক অবরোধ, গাড়ি ভাঙচুরসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছিল জামায়াত-শিবির। তাদের একটি অংশ এখনো সক্রিয়। তারা এখনো বিভিন্ন পরিকল্পনা আঁটছে।

গোলাম মাওলা-নিজামী-মুজাহিদ কুশল বিনিময় : এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, রবিবার রাতে গোলাম মাওলাকে জামায়াতের শীর্ষ দুই নেতার মুখোমুখি করা হয়। দেখা হওয়ামাত্র তাঁরা একে অন্যের সঙ্গে সালাম ও কুশল বিনিময় করেন। এ সময় উপস্থিত গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তাঁদের কাছে জানতে চান, 'আপনারা কী পূর্ব পরিচিত?' উত্তরে তারা বলেন, 'খুব বেশি নয়, তবে জানাশোনা আছে। এ সময় গোলাম মাওলার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য সম্পর্কে জামায়াত নেতাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু কোনো প্রশ্নের পুরোপুরি উত্তর দেননি তাঁরা। প্রশ্ন করলেই জামায়াত নেতারা বলেন, জানা নেই। ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তা রবিবার বিকেলে জানান, রিমান্ড শেষে সোমবার সন্ধ্যায় গোলাম মাওলাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গতকাল সোমবার কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মতিউর রহমান নিজামীকে সরাসরি কোর্ট-হাজতে নিয়ে রাখা হয়। কিছুক্ষণ পরই মহানগর হাকিম আলী হোসাইনের আদালতে রমনা থানার মামলার শুনানি শুরু হয়। মামলার তদন্তকারী মতিউর রহমান নিজামীকে আগে মঞ্জুর করা চার দিনের রিমান্ডের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করেন। এ সময় নিজামীর আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক সুস্থতাসাপেক্ষ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেন। আদালত নিজামীর আইনজীবীর আবেদন নাকচ করে তাঁকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার অনুমতি দেন।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন