6 July 2010

জামায়াতের চোরাগোপ্তা হামলার আগাম বার্তা - তবু পুলিশের পাঁচজন শীর্ষ কর্মকর্তা একসঙ্গে ছুটিতে!


একরামুল হক ও হামিদ উল্লাহ, চট্টগ্রাম | তারিখ: ০৬-০৭-২০১০


জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমানসহ তিন নেতার মুক্তির দাবিতে দলের নেতা-কর্মীরা চট্টগ্রাম নগরে চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে পারেন—এ ধরনের আগাম বার্তা ছিল নগর পুলিশের কাছে। তার পরও এ সময় নগর পুলিশের পাঁচজন শীর্ষ কর্মকর্তা একসঙ্গে ছুটিতে গেছেন। পুলিশের সমন্বয়হীনতার কারণে জামায়াত-শিবির ওই দিন চোরাগোপ্তা হামলা চালানোর সুযোগ পেয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রোববার জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা নিজামীসহ তিনজনের মুক্তির দাবিতে হঠাৎ হালিশহর পিসিপুল এলাকা থেকে মিছিল বের করেন। মিছিল থেকে গাড়ি ও পিসি সড়কের দুই পাশের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালানো হয়।

নগর পুলিশ সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার থেকে পাঁচ দিনের ছুটিতে ছিলেন অতিরিক্ত কমিশনার। বৃহস্পতিবার থেকে চার দিনের ছুটিতে যান কমিশনার। শনি ও রোববার দুই দিনের ছুটিতে ছিলেন উপ-পুলিশ কমিশনার (বন্দর) কুসুম দেওয়ান। সহকারী কমিশনার (গোয়েন্দা) মো. জাহাঙ্গীর আলম শুক্রবার থেকে চার দিনের ছুটিতে। এ ছাড়া হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত চার দিনের টানা ছুটিতে ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, শীর্ষ তিন নেতার মুক্তির দাবিতে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা চট্টগ্রামে সভা-সমাবেশ করতে পারেন—এমন আগাম সংবাদ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এমনকি পুলিশের কাছেও ছিল। বিষয়টি পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জমানও স্বীকার করেন। জামায়াতের চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কার আগাম খবর জানার পরও পুলিশ কমিশনারের ছুটিতে যাওয়া এবং তাঁর অধস্তন চার কর্মকর্তার ছুটি মঞ্জুর করা নিয়ে প্রশাসনে নানা গুঞ্জন চলছে। কমিশনার প্রথম আলোকে বলেন, ‘চোরাগোপ্তা হামলার খবর আমরা আগাম জেনেছি। তাই নগর পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’ অতিরিক্ত কমিশনার ছুটিতে, একই সময় আপনি ছুটিতে গেলেন কেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের কি সামাজিক জীবন নেই? আমরা কি ছুটিতে যাব না?’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি হেসে বলেন, ‘আমি চট্টগ্রামে না থাকলে ওরা হামলা করে, থাকলে সাহস পায় না। তাহলে তো আমি হিরো।’

জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সমন্বয়হীনতা নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তর উদ্বিগ্ন। পুলিশ কমিশনার ও অতিরিক্ত কমিশনার একসঙ্গে ছুটিতে যাওয়ায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ভারপ্রাপ্ত কমিশনারের দায়িত্ব দেওয়া হয় চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) মো. আসাদুজ্জমান মিয়াকে। নগর পুলিশ প্রশাসনে ডিআইজিকে দায়িত্ব দেওয়া নজিরবিহীন ঘটনা বলে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা স্বীকার করেন।

সিঙ্গাপুর মার্কেট থেকে পরিকল্পনা: হালিশহরের সিঙ্গাপুর মার্কেট থেকে হামলা-ভাঙচুরের পরিকল্পনা হয়। মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল আলম এতে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফরিদের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বড় হাতিয়া ইউনিয়নে।

জানা গেছে, সিঙ্গাপুর মার্কেটে ব্যবসা শুরুর পাশাপাশি ফরিদ জামায়াতের জন্য কাজ করেন। মার্কেটের বেশির ভাগ ব্যবসায়ীর বাড়ি জামায়াত-অধ্যুষিত সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায়। মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নাসির উদ্দিনের বাড়িও সাতকানিয়ায়। তিনিও ভাঙচুরের পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন বলে পুলিশ সন্দেহ করছে। রোববার বিকেলে ফরিদকে গ্রেপ্তার করা হলেও নাসির পলাতক। গতকাল পুলিশ তাঁকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে।

মার্কেটের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, মিছিল শুরুর আগে মার্কেটে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা জড়ো হন। আবার ২০-২৫ জন পিসিপুল এলাকা থেকে গাড়ি ভাঙচুর করে দৌড়ে মার্কেটে ঢোকেন।

নগর পুলিশের ডবলমুরিং জোনের সহকারী কমিশনার তানভির আরাফাত বলেন, ‘আকস্মিক মিছিল ও ভাঙচুরের নেপথ্যে যে চার-পাঁচজনের নাম আমরা পেয়েছি, ফরিদ তাদের অন্যতম। এদের মধ্যে নাসিরও আছে।’

সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের জামায়াতের সাংসদ ও চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির আ ন ম শামসুল ইসলাম দাবি করেন, ফরিদের এসব কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমি জানি না। ফরিদ-নাসির ব্যবসায়ী হলেও রাজনৈতিক পরিচয় থাকা অপরাধ নয়।’

আটক আরও ১০১: গতকাল ১২টা পর্যন্ত পুলিশ নগরের হালিশহর, ডবলমুরিং, আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আরও ১০১ জনকে আটক করেছে। এ নিয়ে আটকের সংখ্যা দাঁড়াল ১৪৩। রোববার বিকেলে হালিশহর পিসিপুল এলাকা থেকে জামায়াত আকস্মিক মিছিল বের ৫০-৬০টি গাড়ি ও দোকানপাট ভাঙচুর করে। স্থানীয় জনগণের সহায়তায় পুলিশ ৪২ জনকে আটক ও সাতটি গুলিসহ একটি শাটারগান উদ্ধার করে।
ডবলমুরিং জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) এস এম তানভির আরাফাত বলেন, আটক ব্যক্তিদের যাচাই-বাছাই শেষে গ্রেপ্তার দেখানো হবে। অভিযান চলছে।’ ভাঙচুরের ঘটনায় হালিশহর থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে এবং ডবলমুরিং থানায় বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়।

অতিরিক্ত কমিশনারকে প্রত্যাহার: রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তরের এক আদেশে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. আবদুল জলিল মণ্ডলকে প্রত্যাহার করা হয়। তাঁকে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে।

জলিল মণ্ডল বলেন, ‘সরকারের আদেশ অবশ্যই মেনে নেব। তবে প্রত্যাহারের কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।’

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন