20 July 2010

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: জোট সরকারের আট বছরে ২৩ কোটি টাকার দুর্নীতি!

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আট বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৩ কোটি ২২ লাখ টাকার দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে। ২০০১ সাল থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে জনবল নিয়োগ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কার্যক্রম, শিক্ষা প্রকল্প এবং প্রকৌশল খাতে এসব দুর্নীতি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। গত সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে এ প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়েছে।

সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ফাইসুল ইসলাম ফারুকী, অধ্যাপক এম আলতাফ হোসেন এবং উপউপাচার্য অধ্যাপক কে এ এম শাহাদত হোসেন মণ্ডল ও অধ্যাপক মামনুনুল কেরামত এসব দুর্নীতির জন্য দায়ী বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক এম লুৎফর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী আবদুর রহিম, পিজিডি ইন আইটি প্রকল্প পরিচালক খাজা জাকারিয়া আহমেদ চিশতী এবং লিগ্যাল সেলের সহকারী রেজিস্ট্রার তাজুল ইসলামকেও দায়ী করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তদন্ত প্রতিবেদনটি পাঠানো হবে বলে উপাচার্য জানিয়েছেন।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত প্রশাসনের দুর্নীতি তদন্ত করতে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এর আহ্বায়ক ছিলেন শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) পরিচালক অধ্যাপক এম এন্তাজুল হক। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগ, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ছাড়াও সেবাখাত ও অন্য খাতগুলোয় এসব অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে। গত সোমবার এ প্রতিবেদন উপাচার্যের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।'

জানা গেছে, তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০০৩ সালের এপ্রিল-মে মাসে কোনো ধরনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই দলীয় বিবেচনায় ৫৫৩ জন কর্মচারীর নিয়োগ প্রদান করে। ২০০৯ সালের মে মাস পর্যন্ত এসব কর্মচারীর বেতন ভাতা বাবদ সাত কোটি তিন লাখ ৭৫ হাজার ৪৩৫ টাকা ব্যয় হয়। প্রতিবেদনে এটি অনিয়ম ও দুর্নীতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এসব নিয়োগের আগে কোনো মঞ্জুরি নেওয়া হয়নি। নিয়োগের ক্ষেত্রে ঘুষ গ্রহণেরও অভিযোগ রয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিরোজা খাতুন নামের একজন কর্মচারী তদন্ত কমিটিকে জানান, কয়েকজনের চাকরির জন্য তিনি সাবেক উপউপাচার্য ড. শাহাদাৎ হোসেন মণ্ডলকে আট লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন। অবশ্য সাবেক প্রো-ভিসি কমিটির কাছে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এ ছাড়া উন্নয়ন ও পরিকল্পনা দপ্তরের অধীনে উন্নয়ন খাতে আট কোটি ৬১ লাখ ৪৩ হাজার টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে শহীদ হবিবুর রহমান হল পুনর্নির্মাণ, ৫০ শয্যার এমফিল ডরমেটরি এবং কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে এসি সংযোজন বাবদ এ দুর্নীতি করা হয়েছে। ২০০০-০১ এবং ২০০৩-০৪ অর্থবছরে বই ও জার্নাল কেনার জন্য দুই কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হলেও এ খাতে এক কোটি ৫২ লাখ টাকা খরচ করা হয়। প্রকৌশল দপ্তর হিসেবের বাইরে শুধু টিএসসি ভবন নির্মাণ বাবদ চার লাখ ৪৬ হাজার ৪৪৩ টাকা খরচ করেছে। এ ছাড়া অন্য ১৭টি নির্মাণ কাজের জন্য এ দপ্তর দুই কোটি ২৩ লাখ ২৩ হাজার ৪১৫ টাকা অবৈধভাবে পরিশোধ করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া প্রকল্প পরিচালকের গাফিলতির ফলে ২০০২-২০০৫ সালের মধ্যে পিজিডি ইন আইটি প্রোজেক্টে ৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। লিগ্যাল সেল ১৪ লাখ টাকা বিভিন্ন জনকে অবৈধভাবে প্রদান করেছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটি সাবেক দুই উপাচার্যসহ অন্যদের কাছে কৈফিয়ত তলবের সুপারিশ করেছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এম সোবহান বলেন, 'এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সুপারিশক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।'

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন