ফারুক যোশী, ম্যানচেস্টার থেকে
যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারের একটি ট্রাভেলস এজেন্সির বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্দসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শহরের লংসাইটে অবস্থিত 'কসম' নামের এই ট্রাভেলস এজেন্সির মালিক হলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের ছোট ছেলে মোমেন আযমী। তিনি জালিয়াতি ও প্রতারণা করে গ্রাহকদের লক্ষাধিক পাউন্ড হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। হাইড শহরের একজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর কাছ থেকেই আযমী হাতিয়ে নিয়েছেন ২৬ হাজার ৮০০ পাউন্ড। এ বিষয়ে হাইড পুলিশ স্টেশনে একটি মামলাও করেছেন ওই ব্যবসায়ী। মামলাটির তদন্ত চলছে বলে জানা গেছে।
মামলা দায়েরকারী নাসির খান সোয়েব গত শনিবার তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইজি সলিউশনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ৮৮ জন মুসলি্লকে ওমরা হজের জন্য পাঠাতে তিনি একটি ভালো প্রতিষ্ঠান খুঁজছিলেন। এ খবরটি জেনে মোমেন আযমী তাঁকে ফোন করে একটি ভালো অফার দেন। নিজের ব্যবসায়িক নীতি অনুযায়ী সোয়েব ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে অগ্রিম পাওয়া (ডিপোজিট) অর্থ থেকে চার হাজার পাউন্ড আযমীকে দেন। পরে আরো পাঁচ হাজার পাউন্ড দিলে আযমী তাঁকে কিছু টিকিটের বুকিং রেফারেন্স দেন। এই রেফারেন্স পাওয়ার পর সোয়েব আরো দুই কিস্তিতে ১৭ হাজার ৮০০ পাউন্ড পরিশোধ করেন। অর্থ দেওয়ার পর সন্দেহ হলে তিনি অনলাইনে লিবিয়ান এয়ারলাইনসে খোঁজ নেন। কিন্তু এরকম রেফারেন্সের কোনো হদিস না পেয়ে তিনি এয়ারলাইনসে ফোন করেন। লিবিয়ান এয়ারলাইনস কর্মকর্তারা জানিয়ে দেন যে এরকম রেফারেন্সের কোনো বুকিং তাদের এয়ারলাইনসে নেই। এরপর তিনি আযমীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কম্পিউটারে ভাইরাস ঢুকে যাওয়ার যুক্তি দেখান।
সোয়েব বলেন, 'সন্দেহ হয় আযমী পরিকল্পিতভাবে লিবিয়ান এয়ারলাইনসের টিকিট বুকিং ফরম্যাট ব্যবহার করে জালিয়াতির উদ্দেশ্যে বুকিং রেফারেন্স তৈরি করেন। এ অবস্থায় আমি এলাকার কিছু মানুষ এমনকি এখানকার জামায়াত সংশ্লিষ্ট কিছু মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এ যোগাযোগের পর আযমী ২৬ হাজার ৮০০ পাউন্ডের একটি চেক আমার হাতে তুলে দেন। কিন্তু এই চেক ব্যাংক কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়। পরে কমিউনিটির কয়েকজন নেতার উপস্থিতিতেই একটি পেমেন্ট প্লান তৈরি করা হয়, যাতে আযমীর দস্তখত আছে। আযমী এতে উল্লেখ করেন ২২ জুলাই ১০ হাজার পাউন্ড, ১৫ আগস্ট ১০ হাজার পাউন্ড এবং ৩১ আগস্ট আরো ছয় হাজার ৮০০ পাউন্ড পরিশোধ করবেন। কিন্তু প্রথম পেমেন্টের দিনই তিনি কেঁদে-কেটে জানিয়ে দেন তাঁর এখন সে উপায় নেই এবং তিনি অর্থ পরিশোধ করতে পারবেন না। তিনি এখন চাকরি খুঁজছেন এবং চাকরি পেলে এ অর্থ পরিশোধ করবেন।'
এ অবস্থায় সোয়েব ১৯ জুলাই হাইড পুলিশ স্টেশনে আযমীর বিরুদ্ধে একটি প্রতারণা মামলা করেন।
এ বিষয়ে জানার জন্য মোমেন আযমীকে বারবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
সোয়েব সংবাদ সম্মেলনে জানান, এরই মধ্যে তাঁর ক্লায়েন্টদের জন্য প্রায় ৩৮ হাজার পাউন্ড তাঁকে পরিশোধ করতে হয়েছে। কারণ আগে বুক করা টিকিটের চেয়ে এখন পিক পিরিয়ডে টিকিটের মূল্য অনেক চড়া। নিজের ব্যবসায়িক সুনাম ও ব্যক্তিগত ইমেজ অক্ষুণ্ন রাখতে তিনি বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ধার করে ক্লায়েন্টদের কাউকে টিকিট কিনে দিয়েছেন, কাউকে অর্থ ফেরত দিতে হয়েছে।
ম্যানচেস্টারের আরো কয়েকজন ব্যবসায়ীর কয়েক হাজার পাউন্ড মোমেন আযমী হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ম্যানচেস্টারের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী জানান, আযমীর কাছে তাঁর পাওনা আছে প্রায় ১৪ হাজার পাউন্ড। লন্ডনের দুটো ট্রাভেলস এজেন্সির একটি পাবে ১৮ হাজার পাউন্ড, অন্যটি পাবে আট হাজার পাউন্ড। গুজরাটের একজন ব্যবসায়ীর পাওনা আছে ১৯ হাজার পাউন্ড।
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন