নিজস্ব প্রতিবেদক
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে বড় ধরনের নাশকতার প্রস্তুতি নিয়েছে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। নাশকতার পরিকল্পনার মধ্যে আছে মহাসড়ক অবরোধ করে হাজার পাঁচেক গাড়ির চাবি কেড়ে নিয়ে এবং রেললাইনের স্লিপার তুলে ফেলে অন্তত এক মাসের জন্য ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও অন্যান্য স্থানের যোগাযোগব্যবস্থা অচল করে দেওয়া। এ জন্য অস্ত্র, বোমা ও বিস্ফোরক সংগ্রহ করেছেন শিবিরের নেতা-কর্মীরা। গত এক সপ্তাহে ঢাকা-রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা শিবির নেতা-কর্মীরা জিজ্ঞাসাবাদে এ রকম তথ্য দিয়েছেন বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র দাবি করেছে।
সূত্র জানায়, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১০ হাজার লোক জড়ো করে যানবাহন আটকে পাঁচ হাজার গাড়ির চাবি কেড়ে নেওয়া এবং রেললাইনের স্লিপার উপড়ে ফেলাসহ নানা পরিকল্পনার কথা ফাঁস করেছে আটক শিবির ক্যাডাররা। শিবিরের কেন্দ্রীয় ক্রীড়া সম্পাদক মিয়া মুজাহিদ জিজ্ঞাসাবাদে জানান, নাশকতার কাজে অর্থ সহায়তা করছেন মিশন গ্রুপের পরিচালক মীর সাখাওয়াত। এ ছাড়া রিমান্ডে থাকা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদও জিজ্ঞাসাবাদে শিবিরের পরিকল্পনা সম্পর্কে অনেক তথ্য দিয়েছেন। তিনি শিবিরের অনেক ক্যাডারের নামও প্রকাশ করেছেন বলে সূত্রটি দাবি করেছে।
পুলিশ জানায়, দেশে হরতাল আহ্বান করার পরিকল্পনাও ছিল শিবিরের। শিবির নেতা মিয়া মুজাহিদ গোয়েন্দাদের জানান, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে সড়ক অবরোধ করে গাড়ির চাবি কেড়ে নেওয়ার মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। একই সঙ্গে ঢাকায় প্রবেশের অন্য পথগুলোতেও অবরোধের পরিকল্পনা ছিল। এমনকি রেল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য কিছু জায়গায় লাইন থেকে স্লিপার তুলে ফেলার পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁরা।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ নাশকতার পরিকল্পনা সম্পর্কে অনেক তথ্য দিয়েছেন। পরে পুলিশ অভিযানে নেমে শিবিরের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছে অনেক অবৈধ অস্ত্র আছে বলে গ্রেপ্তার হওয়া শিবির ক্যাডাররা স্বীকার করেছে। একটি অস্ত্র উদ্ধারও করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, এসব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কিছু বোমা তারা নষ্ট করে ফেলেছে বলে দাবি করলেও তাদের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।
গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, তাদের সর্বশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া শিবির ক্যাডার আবদুল্লাহ ওমর নাসির ওরফে শাহাদত হোসেনের কাছ থেকে অস্ত্রটি উদ্ধার হয়। ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল শুক্রবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস-সংলগ্ন কাজলা এলাকা থেকে শাহাদতকে গ্রেপ্তার করে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই রাতেই ডিবির একটি দল রাজধানীর ৪৩/এ দক্ষিণ সায়েদাবাদে শিবিরের গোপন অফিসে অভিযান চালায়। ছয়তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় শিবিরের অফিস কাম মেসের ড্রয়িং রুম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। পরে টিভি-বাক্সের ভেতর থেকে ম্যাগাজিনসহ একটি নাইন এমএম পিস্তল উদ্ধার করা হয়। শাহাদত নিজে ঢাকায় এসে অস্ত্রটি দলের এক নেতার কাছে রেখেছিল বলে পুলিশকে তথ্য দেয়। ওই মেস থেকেই ফরিদুল কবীর নামের আরেক শিবির ক্যাডারকেও আটক করে পুলিশ।
ডিবির সহকারী পুলিশ কমিশনার এস এম রফিকুল ইসলাম জানান, শাহাদত ভয়ংকর এক সন্ত্রাসী। উদ্ধার করা অস্ত্রটি সে-ই রাজশাহী থেকে ঢাকায় নিয়ে আসে।
গোয়েন্দা পুলিশের আরেকটি সূত্র জানায়, জামায়াত নেতা আলী আহসান মুজাহিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে খুলনার সাবেক সংসদ সদস্য মিয়া গোলাম পরওয়ারের ভাই শিবিরের কেন্দ্রীয় ক্রীড়া সম্পাদক মিয়া মুজাহিদকে এর আগে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মিয়া মুজাহিদ নাশকতার পরিকল্পনাকারীদের অন্যতম। গোয়েন্দাদের তিনি জানান, নাশকতার কাজে অর্থ সহায়তা করেছেন মিশন গ্রুপের উদ্যোক্তা পরিচালক মীর সাখাওয়াত। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় মীর সাখাওয়াত এবং সাবেক শিবির নেতা শাকিল আহমেদ ও আবদুল্লাহ আল মাসুমকে। রিমান্ডে নিয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে গোয়েন্দা পুলিশ।
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন