26 July 2010

ওয়েবসাইট ও ফেইসবুকে জামায়াত নেতাদের মুক্তির পক্ষে আন্দোলন

নিজস্ব প্রতিবেদক

'ফ্রি জামায়াত লিডারস' নামে একটি ওয়েবসাইট খুলে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের মুক্তির পক্ষে প্রচারণা শুরু করেছে জামায়াত নেতাদের মুক্তি আন্দোলন। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে খোলা হয়েছে বিশেষ পাতা। সংবাদপত্রের অনলাইন সংস্করণের আদলে ওই ওয়েবসাইট ও ফেইসবুকের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার ছাড়াও বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিরুদ্ধে গণগ্রেপ্তার ও জুলুম-নির্যাতন চলছে বলে দাবি করা হয়েছে।

ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগ এ ওয়েবসাইটের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে বলেছে, জামায়াতের শুভাকাঙ্ক্ষীরাই এ ওয়েবসাইট খুলেছে। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে জামায়াত-শিবিরের বর্তমান ও সাবেক কর্মীরা এই ওয়েবসাইট ও ফেইসবুকের মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। জানা যায়, ১ জুলাই ফ্রি জামায়াত লিডারস (freejamatleaders.com) ডোমেইনটির সার্ভার ইন্টারনেটে নিবন্ধন করা হয়েছে প্রাইভেসি প্রোটেক্টের (privacyprotect.org) নামে। এই সংগঠনের নামে আরো প্রায় তিন হাজার ১৯৭টি ডোমেইন আছে। তবে প্রাইভেসি প্রোটেক্ট ওয়েবসাইটে বলা ডোমেইনের প্রকৃত মালিকের কাছে অ্যাডমিন, টেকনিক্যাল বা বিলিং সংক্রান্ত যোগাযোগে যে অনলাইন ফরম রয়েছে তাতে বলা হয়েছে, 'প্রাইভেসি প্রোটেক্ট কোনো ডোমেইনের মালিক নয়। সংগঠনটি ডাকযোগে আসা চিঠিপত্র ডোমেইনের প্রকৃত মালিকের পক্ষে গ্রহণ করে না।' তবে ডোমেইনটির অ্যাডমিন, টেকনিক্যাল বা বিলিং সংক্রান্ত যোগাযোগের জন্য ঠিকানা দেওয়া হয়েছে : 'PrivacyProtect.org, Domain Admin (contact@privacyprotect.org), P.O. Box 97, Moergestel null, 5066 ZH, NL, Tel. +45.36946676|' জানা গেছে, এ ঠিকানাটি নেদারল্যান্ডসের। ডোমেইন টুলস ডট কমের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রাইভেসি প্রোটেক্ট ডট অর্গ-এর নামে খোলা হলেও নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা দিয়েছে এডবি্লউএসপি (AWSP) সাংকেতিক নামধারী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। আগামী বছরের ১ জুলাই এই ডোমেইনটির নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত শনিবার পর্যন্ত প্রায় আড়াই লাখ ব্যক্তি ওই সাইটে ঢুকেছেন। এর মধ্যে ৯২ দশমিক ৬ শতাংশ সাইটটি দেখেছেন বাংলাদেশ থেকে। শনিবার বিকেল ৫টায় ওই সাইটটিতে ব্যানার হেডিংয়ে লেখা ছিল_'এই গ্রেপ্তার নেহাৎ ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া আর কিছু নয়।' এ ছাড়া সংবাদপত্রের অনলাইন সংস্করণের আদলে পৃষ্ঠা বিন্যাসে প্রকাশিত প্রধান প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল 'রিমান্ড শেষে জেলহাজতে যাওয়ার আগে মাওলানা নিজামী : ইসলাম উৎখাত ও দেশকে করদরাজ্য বানানোর লক্ষ্যেই বিরোধী নেতাদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি। জঙ্গি নেতা সাইদুরের সঙ্গে দেখা হওয়া এবং জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য অসত্য।' এ ছাড়া সাইট ব্যবহারকারীরা যেন জামায়াতের নেতাদের মুক্তির দাবিতে গণস্বাক্ষর ও মন্তব্য লিখতে পারেন সে সুযোগও এতে রয়েছে।

ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সদস্য কামরুল ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সম্ভবত ৩ জুলাই ওই ওয়েবসাইট খোলা হয়েছিল। জামায়াতের শুভাকাঙ্ক্ষীরাই এটি খুলেছে।' তিনি আরো বলেন, ১৩ জুলাই রাত ২টার পর তারা আর ওই সাইটে ঢুকতে পারেননি। তবে আবার কবে তা খোলা হয়েছে তা তিনি জানেন না বলে দাবি করেন। তবে জামায়াত নেতাদের মুক্তি আন্দোলনের ওয়েবসাইটটিতে দেখা গেছে, ২১ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই তারিখে তাতে খবর ও ছবি সংযোজন করা হয়েছে। এর আগে ৩ থেকে ১৩ জুলাই তারিখে খবর ও ছবি সংযোজন করা হয়।

জানা গেছে, এ ওয়েবসাইটের সঙ্গে নিজামী, সাঈদী, মুজাহিদ মুক্তি আন্দোলন নামে ফেইসবুকের একটি পৃষ্ঠার লিঙ্ক রয়েছে। শনিবার বিকেল পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ২৬০ জন ওই পৃষ্ঠা পরিদর্শন করে 'লাইক' অপশনে ক্লিক করেছেন। ফেইসবুকের ডিসকাশন বোর্ডে গত শনিবার পর্যন্ত 'মুক্তি' শিরোনামে ১১টি পোস্ট ছিল। এর মধ্যে একটিতে এ টি এম কামারুজ্জামান নামের এক ব্যক্তি লিখেছেন, 'আন্দোলন কখন শুরু হবে? হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে আমাদের প্রিয় নেতাদের মুক্ত করতে হবে। দ্রুত করতে হবে। ধৈর্যের সব বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। আর কত ধৈর্য ধরতে হবে?' ফেইসবুক পৃষ্ঠাটিতে শনিবার বিকেল পর্যন্ত ছবির ১০টি অ্যালবাম ও ১৪টি লিংক ছিল। জানা গেছে, গত শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরায় 'বাংলাদেশ ওয়াচ অস্ট্রেলিয়া ইনকরপোরেটেড' নামে এক সংগঠনের ব্যানারে জামায়াত ও বিএনপির সমর্থকরা মানববন্ধন করা ছাড়াও বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। এ স্মারকলিপির কপি অস্ট্রেলিয়া সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছেও পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও ওয়েবসাইট ও ফেইসবুক ভিত্তিক প্রচারণা চলছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফেইসবুকে নিজামী, সাঈদী ও মুজাহিদ মুক্তি আন্দোলন নামে পৃষ্ঠা 'ভালো লেগেছে' বলে মন্তব্যকারীরা প্রধানত শিবির কর্মী। এ ছাড়া কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজ শাখার শিবিরকর্মীরা ফেইসবুকের মাধ্যমে জামায়াত নেতাদের মুক্তির পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন