রেজোয়ান বিশ্বাস
গোয়েন্দাদের ধারণা, রাজধানীর শতাধিক বাড়িতে জঙ্গি ঘাঁটি গেড়ে অবস্থান করছে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জেএমবির সদস্যরা। তারা বিস্ফোরক মজুদ করে নাশকতা চালানোরও প্রস্তুতি নিচ্ছে। সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আটটি জোনের উপ-কমিশনারসহ সব থানার পুলিশকে এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। এসব জঙ্গির বিরুদ্ধে শিগগিরই তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করবে পুলিশ। ডিএমপি সদর দপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ ব্যাপারে ডিএমপি সদর দপ্তরের উপ-কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, রাজধানী কেন্দ্রিক জঙ্গিরা ঘাঁটি গেড়ে নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশে এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। এ কারণে অনেকেই ক্ষিপ্ত হতে পারে।
ডিএমপি সদর দপ্তরের উপ-কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান আরো বলেন, সম্প্রতি শাহ আলী এলাকার একটি জঙ্গি ঘাঁটি থেকে গ্রেনেড, বিস্ফোরক ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ রকম আরো ঘাঁটি থাকতে পারে। এ ব্যাপারে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, জঙ্গিদের ব্যাপারে বাড়ির মালিকদের আরো সতর্ক হতে হবে।
এদিকে রাজধানীর মিরপুরের শাহ আলী এলাকার জঙ্গি ঘাঁটি থেকে গত শুক্রবার বিপুল বিস্ফোরক ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। শাহ আলী থানার ওসি আবদুল লতিফ জানান, উত্তর বিশিলের ৭০/ক নম্বর বাড়ি থেকে বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। আসামি করা হয়েছে মেসে অবস্থানকারী অজ্ঞাতনামা চারজনকে। মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশ হেফাজতে হস্তান্তরেরও প্রস্তুতি চলছে। ওসি বলেন, বাড়ির মালিক, ভাড়াটিয়াসহ এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বললেও তাঁরা যুবকদের নাম-পরিচয় জানাতে পারেননি। তাদের গ্রেপ্তারে এখনো তল্লাশি
চালানো হচ্ছে।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, শাহ আলীর বিস্ফোরকের মজুদকারীরা জঙ্গি ভাগ্নে শহীদের পরিচিত হতে পারে। এর আগে কদমতলী এলাকা থেকে উদ্ধারকৃত গ্রেনেড, বিস্ফোরক ও অস্ত্রের সঙ্গে শাহ আলী থেকে উদ্ধারকৃত বিস্ফোরক দ্রব্যের মিল রয়েছে। জেএমবির আমির মাওলানা সাঈদুর রহমানও গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে রাজধানীর প্রত্যন্ত অঞ্চলকেন্দ্রিক জেএমবির ঘাঁটি রয়েছে বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। মাহবুবুর রহমান জানান, জেএমবি নেতা ভাগ্নে শহীদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে আনা হবে। তাকে বিপুল বিস্ফোরকের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, শাহ আলী এলাকা থেকে বিস্ফোরক ও গ্রেনেড উদ্ধারের পর ধারণা করা হচ্ছে জঙ্গিরা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। উদ্ধারকৃত গ্রেনেডটি খুবই শক্তিশালী। ওই গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত হলে ওই বাড়ি ধসে পড়ার সম্ভাবনা ছিল। এতে অনেক প্রাণহানি ঘটত। এ ছাড়া উদ্ধারকৃত ৪০ কেজি বিস্ফোরক দিয়ে শতাধিক বোমা বানানো যায়। বিভিন্ন ইস্যুতে নাশকতামূলক হামলা চালাতে গ্রেনেড হামলা চালানো হতে পারে বলেও গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে। সিটি স্পেশাল ব্রাঞ্চ, গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ, এনএসআই ও র্যাবসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা এ ব্যাপারে তদন্ত করছে।
এদিকে ডিএমপি সদর দপ্তরের নির্দেশনাবলী সংবলিত এক লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, রাজধানীকেন্দ্রিক জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মহানগরীতে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলোর নাশকতামূলক তৎপরতা বন্ধে সম্প্রতি বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে পুলিশি টহল। জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করতে সম্ভাব্য আশ্রয়স্থলে ব্লক রেইড দেওয়া হবে। বাইরে থেকে রাজধানীতে জঙ্গিদের প্রবেশ ঠেকাতে প্রত্যেক এন্ট্রি পয়েন্টে চেকপোস্ট স্থাপন করা হবে।
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন