2 August 2010

জামায়াতের চার নেতাকে কারাগারে রাখার নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ০২-০৮-২০১০

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় চার নেতাকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারাগারে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আজ সোমবার বেলা ১০টা ৪২ মিনিটে এ আদেশ দেন।

এঁরা হলেন—জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লা।
একই সঙ্গে এ চারজনের ব্যাপারে তাঁদের আইনজীবীদের করা তিনটি আবেদনের ওপর কবে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে তা নির্ধারণ করতে ৪ আগস্ট দিন ধার্য করছেন ট্রাইব্যুনাল। আজ দুপুরে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মো. শাহিনুর ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

আইনজীবীদের করা আবেদনগুলো রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিদের সরবরাহ করা হয়েছে বলেও রেজিস্ট্রার জানান।

ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণ ও নিরাপত্তা: সকাল নয়টা ৫৫ মিনিটে কড়া পুলিশ প্রহরায় পুরোনো হাইকোর্ট ভবনে স্থাপিত ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে প্রথমবারের মতো নিজামী, মুজাহিদ, কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লাকে নিয়ে আসা হয়। প্রিজন ভ্যান থেকে নামিয়ে তাঁদেরকে নয়টা ৫৮ মিনিটে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

রমনা অঞ্চলের উপপুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় জানান, ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্বে ছিলেন শতাধিক পুলিশ সদস্য।

এ ছাড়া সাদা পোশাকে পুলিশের বিশেষ শাখার বিপুলসংখ্যক সদস্যও ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন। ট্রাইব্যুনালের প্রবেশমুখে দুটি আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেক্টর ও দুই পাশে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়। এজলাসের প্রবেশমুখে একটি আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর বসানো হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আগতদের দেহ তল্লাশি করে প্রবেশের অনুমতি দেন।
গণমাধ্যম কর্মী, পর্যবেক্ষক ও আইনজীবীদের রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে অনুমতিপত্র (পাস) সংগ্রহ করতে হয়।

এজলাসে চার নেতা: ১০টা ২৮ মিনিটে নিজামী, মুজাহিদ, কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লাকে নেওয়া হয় এজলাসে। এরপর এজলাসের কাঠগড়ায় (ডকে) চার নেতাকে নেওয়া হয় এবং ওখানে রাখা চারটি চেয়ারে তাঁরা বসেন। এ সময় নিজামী, মুজাহিদ ও কাদের মোল্লার পরনে সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি ছিল। আর কামারুজ্জামানের পরনে ছিল শার্ট-প্যান্ট। নিজামীর হাতে পানির বোতল এবং কাদের মোল্লার হাতে পানি ও জায়নামাজ ছিল। উপস্থিত বিএনপি ও জামায়াতের আইনজীবীরা তাঁদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। তিন মিনিটের ব্যবধানে ১০টা ৩১ মিনিটে এজলাসে আসেন বিচারপতিরা। এ সময় আসামিসহ এজলাসে উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে যান।

আসন গ্রহণের পর: বিচারপতিদের আসন গ্রহণের পর আইনজীবী জয়নাল আবেদিন ও তাজুল ইসলাম নিজামী, মুজাহিদ, কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লার পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য ওকালতনামা জমা দেন। এ সময় ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান দুই আইনজীবীর কাছে জানতে চান, ‘আপনাদের বক্তব্য কী?’ তিনটি আবেদনের কথা জানিয়ে আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ইতিপূর্বে চারজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিসংক্রান্ত আদেশ প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করা হয়েছে। চারজনের প্রতি অভিযোগ ও এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের আদেশের অনুলিপি সরবরাহের জন্য এবং চারজনের পক্ষে মনোনীত পরিবারের সদস্যদের আমমোক্তারনামা (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে।’ এ সময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালের নিজস্ব বিধি-বিধান রয়েছে। ওই বিধান অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে আবেদন জমা দিতে হবে।’ ট্রাইব্যুনাল বলেন, সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি গোলাম আরিফ টিপু জানান, সন্দেহভাজনদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। তাঁরা ডকে আছেন।

ট্রাইব্যুনালের আদেশ: ট্রাইব্যুনাল ১০টা ৩৫ মিনিটে আদেশ দেওয়া শুরু করেন। ট্রাইব্যুনাল বলেন, সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষ তাদের হাজির করেছেন। এর আগে তাঁদের প্রতি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিসংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। দাখিল করা ওই প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেছেন, বিভিন্ন মামলায় তাঁরা কারাগারে থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা তামিল করা যায়নি। চারজনকে কারাগারে রাখার নির্দেশ দেওয়া হলো। আদালতের এ আদেশ কারা কর্তৃপক্ষের কাছে সরবরাহ করতে বলা হয়। এ পর্যায়ে আইনজীবী তাজুল ইসলাম চার নেতার সঙ্গে কথা বলতে সময় প্রার্থনা করেন। জবাবে আদালত বলেন, ‘আজ নয়।’

প্রস্থান পর্ব: ১০টা ৪১ মিনিটে জামায়াতের চার নেতাকে আদালতের ডক থেকে সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে ট্রাইব্যুনালের পেছনের দরজা দিয়ে প্রিজন ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ১০টা ৪২ মিনিটে এজলাস ত্যাগ করেন বিচারপতিরা।

আদেশের পর: আদেশের পর বেলা ১১টার দিকে তাজুল ইসলাম বলেন, আদালতের নির্দেশে তিনটি আবেদন রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। শুনানির দিন এখনো নির্ধারিত হয়নি।
গোলাম আরিফ টিপু বলেন, সন্দেহভাজনদের আজ আদালতে হাজিরের দিন ধার্য ছিল। আদালত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারাগারে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

বিচার পর্যবেক্ষণ করতে ট্রাইব্যুনালে আসা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের চার নেতা বিচারের মুখোমুখি হলেন। তাঁরা এজলাস, বিচারক ও বিচারকক্ষ দেখলেন। এটা সত্য ও ন্যায়ের অসাধারণ প্রকাশ।

প্রসঙ্গত, এর আগে ২৯ জুলাই এই চার নেতাকে আজ ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ নির্দেশ দেন।

অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তে গত ২২ জুলাই জামায়াতের এই চার নেতাকে গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য প্রসিকিউশন শাখায় আবেদন করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। আবেদনটি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা ২৫ জুলাই ট্রাইব্যুনালে জমা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল ২৬ জুলাই শুনানির দিন ধার্য করেন। ওই দিন ট্রাইব্যুনাল চারজনের প্রতি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন