14 July 2010

নিজামী-মুজাহিদ ও সাইদুরকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় দুই নেতাকে জেএমবিপ্রধান সাইদুর রহমানের মুখোমুখি করে একসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন গোয়েন্দারা। সাইদুর রহমানকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে আনা হয়। পরে সন্ধ্যায় তাঁকে জামায়াত নেতাদের মুখোমুখি করা হয়। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সাইদুরকে দেখামাত্র জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ মাথা নিচু করে ফেলেন।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার তৌহিদুর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, ডিবি পুলিশ বিকেল ৩টায় জেএমবির আমির সাইদুর রহমানকে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে নিয়ে গেছে।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সাইদুরকে কারাগার থেকে মিন্টো রোডে নিয়ে আলাদাভাবে বসানো হয়। আগে রিমান্ডে দেওয়া তাঁর স্বীকারোক্তিগুলো এ সময় তাঁকে শোনানো হয়। সাইদুরকে জানানো হয়, তিনি জামায়াত নেতাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার যেসব কথা বলেছেন, সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে জামায়াত নেতারা বলেছেন, তাঁরা কিছুই জানেন না। কখনো আবার তাঁরা নীরব থেকেছেন। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সাইদুরের কাছে জানতে চান, তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন কি না। জবাবে সাইদুর দাবি করেন, তাঁর দেওয়া কোনো তথ্যই মিথ্যা নয়।

জিজ্ঞাসাবাদকারীরা জানতে চান, সাইদুর এসব কথা জামায়াত নেতা নিজামী, মুজাহিদ ও সাঈদীর সামনে বলতে পারবেন কি না। সাইদুর হ্যাঁ-সূচক জবাব দিলে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনজনের মধ্যে কার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভালো। সাইদুর বলেন, 'নিজামী সাহেবের সঙ্গে আমার পুরনো সম্পর্ক। তিনি অনেক ঠাণ্ডা প্রকৃতির লোক। মুজাহিদ সাহেব অনেক সময় নিজের কথা থেকে সরে যান। আর সাঈদী সাহেবের সঙ্গে একাধিকবার কাজের ব্যাপারে কথা হয়েছে। তিনি একরোখা লোক।'

সাইদুর রহমানকে পরে নিজামী ও মুজাহিদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সাইদুরকে দেখামাত্র দুই জামায়াত নেতা মাথা নিচু করে ফেলেন। তাঁদের দেখে সাইদুরই প্রথম কথা বলা শুরু করেন। জামায়াতের দুই নেতাকে সালাম দিয়ে তাঁদের সঙ্গে হাত মেলানোর চেষ্টা করেন তিনি। তখন একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, 'হুজুর, আপনারা সবাই মিলে আমাদের একটু সহযোগিতা করেন।' জামায়াত নেতাদের উদ্দেশে একজন জিজ্ঞাসাবাদকারী বলেন, 'আপনারা তো অনেক কিছু বলতে চাচ্ছেন না, নীরব থাকেন। কিন্তু সাইদুর সাহেব এখনো বলছেন, তিনি সব ঠিক বলেছেন।' এ সময় সাইদুর বলেন, 'হ্যাঁ, সবকিছু ঠিক।'
তিনি মুজাহিদকে দেখিয়ে বলেন, 'উনার কথা ও কাজের অনেক ক্ষেত্রে মিল পাওয়া যায় না। উনি মাঝেমধ্যে নিজের কথা নিজেই উল্টিয়ে ফেলেন।' এ সময় মুজাহিদ চুপ করে থাকেন।

সাইদুর বলতে থাকেন, 'শুধু আমি কেন, শাস্তি হলে আপনার বা আপনাদের দলের অনেকেরই হওয়া উচিত। জিহাদ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলবেন, আর বিপদে পড়লে চিনবেন না, তা তো হতে পারে না।' সূত্র জানায়, উত্তরাঞ্চলের রুকন বা সদস্য পর্যায়ের ২৫ জামায়াত নেতার জেএমবি সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া জামায়াতের কাছ থেকে জেএমবির অর্থ পাওয়ার তথ্যটিও নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে। এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে সাইদুরকে আবারও জামায়াত নেতাদের মুখোমুখি করা হতে পারে।

তিনজনের রিমান্ড বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন : কালের কণ্ঠের সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদক জানান, জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রিমান্ডে নেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং দুটি মামলায় তাঁদের রিমান্ডের আদেশ বাতিল করার জন্য গতকাল হাইকোর্টে আবেদন করেছেন তাঁদের আইনজীবীরা। বিচারপতি সৈয়দ মো. দস্তগীর হোসেন এবং এ কে এম জহিরুল হকের বেঞ্চ আজ বুধবার এ বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন। তবে ওই আবেদনের ওপর শুনানি না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে এর আগে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ মেনে চলতে বলা হয়েছে।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন