সেলিম জাহিদ
জামায়াতের প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানের পালিয়ে থাকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পাঁচ দিন ধরে তিনি পালিয়ে আছেন।
আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে বেড়ানোটা একটি ধর্মভিত্তিক দলের নেতার পক্ষে কতটা সমীচীন সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এদিকে রফিকুল ইসলাম খানকে ধরতে এ পর্যন্ত পাঁচটি জায়গায় অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
মামলার বাদী তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব রেজাউল হক চাঁদপুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'যেহেতু ইসলামকে তাঁরা (জামায়াত নেতারা) নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে, সুতরাং তাঁদের পক্ষে আত্দগোপন করাটা অস্বাভাবিক নয়। এ আত্দগোপনের মধ্য দিয়ে তাঁর (রফিকুল) অন্যায়টাই প্রমাণ হয়েছে।'
গত মার্চে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী বিদেশ সফরে গেলে তিনি আর ফিরবেন কি না সে নিয়ে নানা গুঞ্জন ওঠে। ওই সময় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, 'জামায়াতের একজন নেতাও কোথাও পালিয়ে যাবেন না। এ দেশেই তাঁরা জন্মেছেন, এ দেশেই তাঁরা মরবেন।'
জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম এক প্রশ্নের জবাবে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'রফিকুল ইসলাম খান দেশ থেকে পালিয়ে যাননি। তিনি পুলিশের হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে আপাতত সরে আছেন।' এর আগে গত ৩০ জুন সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, 'এই মামলার আসামি রফিকুল ইসলাম খান ঢাকাতেই আছেন। সময় হলেই তাঁকে দেখা যাবে।'
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রফিকুল ইসলাম খান হাইকোর্টের গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আত্দগোপন করে আছেন। আগাম জামিন নেওয়ার জন্য তিনি দু-একদিনের মধ্যে সুবিধাজনক সময়ে উচ্চ আদালতে হাজির হবেন। সেখানে ব্যর্থ হলে তার পরই নিম্ন আদালতে আত্দসমর্পণ করবেন। বার্ষিক ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষে আজ রবিবার হাইকোর্ট খুলছে।
জানা গেছে, জামায়াত সিদ্ধান্ত নিয়েই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার মামলার প্রধান আসামি ঢাকা মহানগর ছাত্রশিবির (দক্ষিণ) সভাপতি আ স ম ইয়াহিয়াকে ২৯ জুন ঢাকার মুখ্য মহানগর আদালতে পাঠিয়েছিল। ওই দিন মামলার পাঁচ আসামির আদালতে হাজির হওয়ার দিন ধার্য ছিল। জামিন না পাওয়ার আশঙ্কায় দলীয় সিদ্ধান্তেই জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও ঢাকা মহানগর আমির রফিকুল ইসলাম খান সেদিন আদালতে হাজির হননি। বিকেলে আকষ্মিক তিন নেতাকে গ্রেপ্তার করার পর দলীয় সিদ্ধান্তেই আত্দগোপন করেন রফিকুল ইসলাম খান। ইচ্ছা ছিল হাইকোর্ট থেকে তাঁরা আগাম জামিন নেবেন। কিন্তু হাইকোর্ট বন্ধ থাকায় জামায়াত নেতারা সে সুযোগ পাননি। এদিকে মুখ্য মহানগর আদালত তৎক্ষণাৎ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করায় পুলিশ তা সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর করে।
জামায়াতের নেতারা জানান, যে মামলায় দলের তিন শীর্ষস্থানীয় নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন, সেই মামলার অপর আসামি দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর শাখার আমির রফিকুল ইসলাম খান ঢাকায়ই আছেন। তাঁর সঙ্গে জামায়াতের নেতাদের যোগাযোগ আছে। কিন্তু পুলিশ গত পাঁচ দিন ধরে তাঁর কোনো হদিস পাচ্ছে না। তাঁর সন্ধানে ২৯ জুন রাতে পুলিশ পুরানা পল্টনে ঢাকা মহানগর জামায়াত কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে ফিরে যায়।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার একটি মামলায় গত ২৯ জুন জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে গ্রেপ্তার করে। একই মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি রফিকুল ইসলাম খানকে পুলিশ গতকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপকমিশনার মনিরুল ইসলাম গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এ পর্যন্ত চার-পাঁচটি জায়গায় আমরা অভিযান চালিয়েছি, কিন্তু অভিযান সফল হয়নি।' রফিকুল ইসলাম খানকে ধরতে গোয়েন্দা পুলিশ সর্বাত্দক চেষ্টা চালাচ্ছে বলে তিনি জানান।
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন