5 July 2010

বিএনপির কৌশল: জামায়াতের পাশে থাকলেও দায় নেবে না যুদ্ধাপরাধের

রফিকুল ইসলাম মন্টু

জামায়াতের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের মুক্তি দাবিতে আন্দোলনে দলটির পাশে থাকবে বিএনপি। তবে জামায়াতের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের যে অভিযোগ উঠেছে, এর দায় বিএনপি নেবে না। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের শরিক জামায়াতের এই সংকটে সরাসরি কোনো ভূমিকা না নিয়ে কৌশলে সরকারকে চাপের মুখে রাখার চেষ্টা করবে প্রধান বিরোধী দল। যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব না দেখিয়ে সঠিক বিচারের দাবি নিয়ে অনড় অবস্থানে থাকবে দলটি।

যুদ্ধাপরাধের বিচার থেকে জামায়াত নেতাদের বাঁচাতেই বিএনপি তাদের মুক্তি দাবি করছে বলে সরকারি দল যে অভিযোগ তুলেছে, তা নাকচ করে দিয়েছেন বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় নেতারা। তাঁরা দাবি করেছেন, এ বিষয়ে বিএনপির ভিন্ন অবস্থান রয়েছে। চারদলীয় জোটের শরিক হিসেবে জামায়াত নেতাদের মুক্তি চেয়েছে বিএনপি। একটি ইস্যুর সঙ্গে আরেকটি ইস্যু সম্পৃক্ত করার পক্ষে নন তাঁরা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গতকাল রবিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'জামায়াত চারদলীয় জোটের শরিক। দলটির শীর্ষ নেতাদের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ থেকে বাঁচানোর জন্য যে আমরা তাঁদের মুক্তি দাবি করেছি, এটা ভাবা ঠিক হবে না। জামায়াত নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তার করার পর বিএনপি চেয়ারপারসন ও মহাসচিব বিবৃতিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আমরা আগেও বলেছি, বিএনপি যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিপক্ষে নয়। তবে এটা হওয়া উচিত সঠিক প্রক্রিয়ায়।'

বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, 'আমরা একটার সঙ্গে আরেকটা ইস্যু গুলিয়ে ফেলতে চাই না। জামায়াত নেতাদের মুক্তি চাওয়া যে যুদ্ধাপরাধের পক্ষ নেওয়া_এটা ভাবা ঠিক হবে না। আমরাও যুদ্ধাপরাধের বিচার চাই। কিন্তু আমাদের দাবি একটাই_এই বিচার যাতে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার না হয়। আমরা চাই আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিচার।'

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, 'জামায়াত নেতাদের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আমরা জোটের শরিক একটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের মুক্তি চাইতেই পারি। এই মুক্তি দাবির সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের কোনো সম্পর্ক নেই। তাছাড়া সরকার তো এখন যুদ্ধাপরাধের বিচার থেকেই সরে এসেছে। তারা এখন মানবতাবিরোধী বিচার করতে চায়। তাহলে মির্জা আব্বাসের বাসায় তাণ্ডব, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির ওপর অত্যাচার কোন মানবতার মধ্যে পড়ে?'

দলীয় সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়টি আলোচনায় আসার পর থেকেই প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এ বিষয়ে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবতে শুরু করে। চারদলের শরিক জামায়াতের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ থাকলেও বিষয়টিকে কৌশলে সমাধান করার চিন্তা করে বিএনপি। সে কারণে এ বিষয়ে দলের মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের প্রথম বক্তব্য ছিল, 'আমরা যুদ্ধাপরাধের বিচার চাই, তবে এটা যেন রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত না হয়।'

জামায়াতের কারণে যুদ্ধাপরাধের দায় যাতে কোনোভাবেই বিএনপির ঘাড়ে গিয়ে না পড়ে, সে বিষয়ে দলটি সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে। শুরু থেকেই তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। এরই মধ্যে দলটির নেতারা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার বিষয়ে সরকারের বক্তব্য স্পষ্ট নয়। তারা এক সময় বলছে যুদ্ধাপরাধের বিচারের কথা, আবার বলছে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের কথা। এ নিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে বলে প্রধান বিরোধী দলের দাবি। অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দলের কয়েকজন নেতা আওয়ামী লীগের ভেতরে অবস্থানকারী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আগে করার দাবি তুলেছেন।

বিএনপির সূত্রগুলো জানিয়েছে, ধারাছোঁয়ার বাইরে থেকে বিএনপি যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে তাদের অবস্থান ঠিক করবে। তারা সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে অভিযোগ গঠন করা হলে এসব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরবে। একই সঙ্গে সঠিক বিচারের দাবি জানাবে। আর কৌশল হিসেবে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নির্যাতনের বিষয়টি জনগণের সামনে তুলে ধরবে বিএনপি।

সূত্র জানায়, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের অবনতি ঘটলেও জোটের শরিক হিসেবে তারা কোনোভাবেই এ সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন রাখতে চায় না। জামায়াতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক অপেক্ষাকৃত কম হলেও শীর্ষ পর্যায়ে তাঁদের ব্যক্তিগত যোগাযোগ রয়েছে। শরিক হিসেবে যেকোনো সংকটে বিএনপি জামায়াতের পাশে থাকলেও যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে দলটি সতর্ক থাকবে বলে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন