5 July 2010

নতুনরূপে লন্ডনের জামায়াতপন্থীরা: বিভ্রান্তিকর প্রচারণা, কাল লোক ভাড়া করে হাইকমিশন ঘেরাও!

লন্ডন সংবাদদাতা

বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করতে লন্ডনের জামায়াত-শিবিরচক্র এখন মরিয়া। গত ২২ জুন 'জাস্টিস কনসার্ন' নামের একটি ভুঁইফোড় সংগঠন গড়ে তারা লন্ডনের লর্ডস হাউসে বিতর্কিত সেমিনারের আয়োজন করেছিল। এর আসল উদ্দেশ্য শেষ মুহূর্তে ফাঁস হয়ে যাওয়ায় উদ্যোগটি ভেস্তে যায়। এবার মাঠে নেমেছে আরেকটি নতুন সংগঠন_'সেইভ বাংলাদেশ'।

জানা গেছে, মতিউর রহমান নিজামীর জামাই ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম ও জামায়াত নেতা ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা সমপ্রতি 'সেইভ বাংলাদেশ' গঠন করেন। ২০০৯ সালের ১৯ আগস্ট জামায়াতের এক নেতার নাতি সেইভবিডি ডটকম নামে একটি ডোমেইন নিবন্ধন নিয়ে গত ফেব্রুয়ারি থেকে সেখানে জামায়াতের পক্ষে প্রপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ডোমেইনটি কার নামে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে, এ-সংক্রান্ত তথ্যও গোপন রাখা হয়েছে। সমপ্রতি এই সাইটকে কেন্দ্র করে শিবিরের সাবেক কর্মীদের দিয়ে 'সেইভ বাংলাদেশ' গঠন করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র মতে, গত ২৯ জুন বাংলাদেশে জামায়াতের তিন শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী গ্রেপ্তার হওয়ার পর রাতারাতি সংগঠনটি গঠন করা হয়। এরপর সংগঠনের পক্ষ থেকে ২ জুলাই শুক্রবার জুমার নামাজের পর ইস্ট লন্ডন মসজিদসহ যুক্তরাজ্যের সব বড় মসজিদের সামনে জামায়াত নেতাদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে উসকানিমূলক বক্তব্যসহ লিফলেট বিলি করা হয়। লিফলেট বিলি করার কাজে সাবেক শিবিরকর্মীদের পাশাপাশি বিএসজিএস নামে জামায়াত মালিকানাধীন একটি কলেজের ছাত্র এবং কর্মচারীদের ব্যবহার করা হয়েছে।

সেইভ বাংলাদেশের নামে প্রচারিত বাংলা ও ইংরেজিতে ছাপা চার রঙা লিফলেটে আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে আপত্তিকর বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া যুক্তরাজ্য বিএনপির সমর্থন পাওয়ার আশায় লিফলেটে বিএনপি নেতা তারেক রহমান এবং সমপ্রতি গ্রেপ্তার হওয়া দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বিভিন্ন কথা লেখা আছে।
এই লিফলেটের মাধ্যমে 'সেইভ বাংলাদেশ' গ্রেপ্তারকৃত তিন জামায়াত নেতার মুক্তির দাবিতে কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামীকাল ৬ জুলাই মঙ্গলবার লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে টেক্সট বার্তা প্রেরণ, গণস্বাক্ষর অভিযান এবং জাতিসংঘসহ বিশ্বের সব মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে স্মারকলিপি পেশ।

কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামীকাল সকাল ১১টায় লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন ঘেরাও করা হবে। জানা গেছে, এই ঘেরাও অনুষ্ঠানে লোকসমাগম ঘটানোর ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। লন্ডনের বাইরের অন্যান্য শহর থেকেও জামায়াতের নেতাকর্মীরা যাতে ঘেরাও অনুষ্ঠানে যোগ দেন, এজন্য সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। এর পাশাপাশি গত বছর টায়ার-৪ ভিসার অধীনে পড়তে গিয়ে বিপদে পড়া ছাত্রদেরকেও নানা সুবিধার বিনিময়ে ঘেরাও অনুষ্ঠানে যোগ দিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ঘণ্টাপ্রতি ১০ পাউন্ড প্রদান এবং দুপুরের খাওয়া এবং যাতায়াত খরচের বিনিময়ে অনেক ছাত্রই এই ঘেরাও কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছেন বলে জানা যায়।

নর্থ লন্ডন কলেজের ছাত্র মেহেদি আহমেদ এই প্রতিবেদককে জানান, 'তাঁরা প্রতিঘণ্টায় ১০ পাউন্ড দেবে বলে জানিয়েছে। আমরা অনেকেই এরকম আমন্ত্রণ পেয়েছি। তবে সবাই ঘৃণাভরে তা প্রত্যাখ্যান করেছি।' লন্ডন ইস্ট ব্যাংক কলেজের ছাত্র মহিউদ্দিন চৌধুরী রাসেল বলেন, 'জামায়াতের সঙ্গে জড়িত লোকেরা জানিয়েছে, ঘণ্টাপ্রতি ১০ পাউন্ডই শুধু নয়, আগামী দিনেও আন্দোলন এবং জনমত তৈরিতে কাজে লাগলে বিপদে-আপদে তারা আমাদের সাহায্য করবেন। তবে তাঁদের এই আহ্বানে কতজন ছাত্র যাবেন বলা মুশকিল। এই প্রজন্ম রাজাকারদের ঘৃণা করে।'

ব্রিট কলেজের ছাত্র সারওয়ার হোসেনও স্বীকার করেছেন, তাদের কলেজের কিছু ছাত্রকে এরকম প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, 'ছাত্ররা আর্থিক দুর্দশায় আছে। তাই টাকা দিয়ে হয়তো তারা কিছু ছাত্রকে সঙ্গে নিতে পারবে। কিন্তু আমি যাদেরকে চিনি, তাদের অনেকেই বলেছে, না খেয়ে থাকবে, কিন্তু তবুও জামায়াতের সঙ্গে শো-ডাউনে যাবে না।'

অভিজ্ঞ মহল মনে করছে, এসব কর্মসূচিতে লন্ডন জামায়াতের বড় নেতারা দৃশ্যত সামনে আসবেন না, বরং সাবেক শিবিরকর্মী এবং তরুণ জামায়াত নেতাদের মাধ্যমে বিভিন্ন নামে আরো সংগঠন তৈরি করে তাঁরা ভবিষ্যতে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন