25 July 2010

কর্ণফুলী পেপার মিলের জমি দখল করে জামায়াত নেতার খামার

রাশেদুল তুষার, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে কালুরঘাট সেতুসংলগ্ন এলাকায় কর্ণফুলী নদী ঘেঁষে প্রায় সাড়ে ২২ একর জায়গাজুড়ে কর্ণফুলী পেপার মিলের (কেপিএম) বাঁশ সংগ্রহ কেন্দ্র। কাগজ উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে বিভিন্ন জায়গা থেকে বাঁশ এনে এখানে রাখা হয়। সরকারি এই জমির পাঁচ একর জায়গায় গড়ে উঠেছে বেসরকারি ডেইরি, পোলট্রি, মৎস্য ও কৃষি খামার। সাইনবোর্ড ঝোলানো হয়েছে 'একতা বহুমুখী খামার'। এর পাশাপাশি নদীর পাড় ভরাট করে চলছে 'বালুমহাল' করার প্রস্তুতি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, একটি সংঘবদ্ধ চক্র ছয় বছর আগে সরকারি জমি দখল করে খামার গড়ে তোলে। এর নেতৃত্বে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় এক নেতা। তিনি অবৈধ দখলের কথা স্বীকারও করেছেন।

জেলা রাজস্ব বিভাগ গত ১৩ মে সাত দিনের মধ্যে অবৈধ খামার সরিয়ে দখল ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু নোটিশের দুই মাস পেরিয়ে গেলেও অবৈধ দখলদাররা সরে যায়নি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, কালুরঘাট শিল্প এলাকার ওই পাঁচ একর জমির দাম প্রায় ১৫ কোটি টাকা।

এ ব্যাপারে কেপিএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরুল হকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

তবে উপব্যবস্থাপক সালেহ আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা বিভিন্ন সময় জমির দখল ছেড়ে দেওয়ার জন্য তাদের নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু এরপরও দখল না ছাড়ায় জেলা প্রশাসনের সাহায্য নিতে বাধ্য হয়েছি।' তবে কেপিএমের বর্তমান কোনো কর্মকর্তা এ দখলের সঙ্গে জড়িত নয় বলে তিনি দাবি করেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ জাকির হোসেন কেপিএমের অভিযোগের ভিত্তিতে দখলকারীদের নোটিশ দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। সময় পার হয়ে গেলেও ব্যবস্থা গ্রহণ না করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমরা নোটিশ দেওয়ার পরই দখলকারীরা তাদের বক্তব্য প্রদান করেছে। এটা যাচাই-বাছাইয়ের পরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

জানা গেছে, ২০০৩ সালে তৎকালীন বিএনপিসমর্থিত সিবিএ সভাপতি আবদুল মোতালেব চৌধুরী কালুরঘাট বাঁশকেন্দ্রের প্রায় পাঁচ একর জায়গা কেপিএমের কাছ থেকে এক বছরের জন্য ইজারা (লিজ) নেন। তিনি জসিম উদ্দিন সরকার নামের স্থানীয় এক জামায়াত নেতার কাছে জমিটি সাব-লিজ দেন। পরে জসিম উদ্দিন সরকার 'একতা বহুমুখী খামার' নামে একটি সমিতি গঠন করে ওই জায়গায় পুকুর কেটে ডেইরি, পোলট্রি, মৎস্য ও কৃষি খামার শুরু করেন।

গত বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দখল করা পাঁচ একর জায়গাজুড়ে তিন বিঘা আয়তনের তিনটি পুকুর কেটে মাছ চাষ করা হয়েছে। আশপাশের খালি জায়গায় চাষ করা হয়েছে সবজি। এছাড়া কর্ণফুলী নদীর পাড় প্রায় ২০ ফুট ভরাট করা হয়েছে। চলছে 'বালুমহল' করার প্রস্তুতি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাবেক সিবিএ নেতা আবদুল মোতালেবের নামে লিজ নেওয়া কাপ্তাই নতুন বাজার সড়কের পাশের প্রায় দুই একর জায়গাও এখন রয়েছে অবৈধ দখলে। কোটি টাকার এই সরকারি সম্পত্তি মোতালেব যাদের কাছে সাব-লিজ দিয়েছেন তাদের কয়েকজন সেখানে পাকা ভবন তৈরি করেছেন।
কেপিএম সূত্র জানায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কেপিএমের দখলকৃত অন্যান্য জায়গা উদ্ধার হলেও মোতালেবের নামে লিজ নেওয়া জায়গাগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। কেপিএমের কিছু কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার কারণে জমিগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না।

জামায়াত নেতা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন সরকার জমি লিজ না নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, 'আমরা মোতালেবের কাছ থেকে অনেকটা মৌখিক লিজ নিয়েছি। অনেকটা না বুঝেই নদী ভরাট করা থেকে শুরু করে খামার তৈরি করা পর্যন্ত প্রায় ৭০-৮০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি। কর্তৃপক্ষ চাইলে আমাদের জায়গা ছেড়ে দিতেই হবে। তবে আমরা বিনিয়োগ উঠানোর জন্য ২-১ বছর সময় চাইছি। এ কারণে নোটিশ পাওয়ার পরও দখল ছাড়িনি।'

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন