এস এম মঈনুল ইসলাম, বরিশাল
জামায়াতের দুই নেতার নিয়ন্ত্রণে চলছে বরিশালের বানারীপাড়া থানা জামে মসজিদ। এর মধ্যে জেলা কমিটির শুরা সদস্য ও উপজেলা কর্মপরিষদের সদস্য মো. শাহা আলম ওই মসজিদের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য এবং ইমাম হিসেবে নিযুক্ত। আর জামায়াতের রোকন ডা. মো. হানিফ মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক; যদিও থানা জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি (পদাধিকার বলে) সংশ্লিষ্ট থানার ওসি। দাপ্তরিক কাজে তিনি ব্যস্ত থাকায় ডা. হানিফই মসজিদ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
অভিযোগ রয়েছে, এ দুই জামায়াত নেতা মাঝেমধ্যেই নামাজ শেষে মসজিদে জামায়াত নেতাদের নিয়ে গোপন বৈঠকে বসেন। এমনকি মসজিদের পেছনে ইমাম শাহা আলমের বাসায় প্রায়ই তাঁদের নিয়ে বৈঠক হয়। পুলিশের জামায়াতবিরোধী অভিযানের যেকোনো খবর ইমামের মাধ্যমেই দলীয় নেতারা পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া মসজিদের আয়-ব্যয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে ছলচাতুরীর অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে বানারীপাড়া ফেরিঘাটসংলগ্ন থানা মার্কেটের পরিচালনার দায়িত্বেও রয়েছেন মসজিদের ইমাম।
এ বিষয়ে বানারীপাড়া থানার সদ্য বিদায়ী ওসি (বর্তমানে বেতাগী থানায় কর্মরত) মো. ফারুকুল হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'শুনেছি, তিনি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে কোন পদে আছেন, তা জানা নেই। মসজিদ মার্কেট পরিচালনার দায়িত্বে থাকার কারণে ২০০৯ সালের শেষ দিকে তাঁর কাছ থেকে মসজিদ ও মার্কেটের আয়-ব্যয়ের হিসাব নেওয়া হয়েছিল। ওই সময় নির্মাণ ব্যয় বাবদ কত টাকা খরচ হয়েছে, এর কোনো স্বচ্ছ হিসাব দিতে পারেননি তিনি। উল্টো মসজিদের কাছে প্রায় লাখ টাকা পাবেন বলে দাবি করেন ইমাম।'
এদিকে মসজিদ পরিচালনায় জামায়াত নেতাদের ভূমিকার বিষয়ে জানতে চাইলে থানার বর্তমান ওসি (তিনি ছুটিতে আছেন) মো. মেসবাউদ্দিন মুঠোফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'শাহা আলম জামায়াত নেতা কি না এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। মসজিদ মার্কেট ও মসজিদ পরিচালনার দায়িত্ব ওসি হিসেবে নিজেই পালন করছি।' এ প্রসঙ্গটি একান্তই তাঁর দাপ্তরিক উল্লেখ করে এ বিষয়ে তিনি আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
জামায়াতের বরিশাল জেলা (পশ্চিম) কমিটির সহকারী সেক্রেটারি ও বানারীপাড়া উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির আবুল কালাম আজাদ বলেন, ২০০৯-১০ সালের জন্য শাহা আলম বরিশাল জেলার শুরা সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু তা কার্যকর করা হয়নি। তবে তিনি উপজেলা রোকন হিসেবে রয়েছেন। অন্যদিকে ডা. মো. হানিফ একবার জামায়াতের রোকন হওয়ার জন্য প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু তাঁকে নির্বাচিত করা হয়নি। জামায়াতের কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই উল্লেখ করে জামায়াত নেতা ও মসজিদের ইমাম মো. শাহা আলম বলেন, 'মাদ্রাসায় পড়াশোনা ও বানারীপাড়া এতিমখানায় চাকরির সুবাদে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়লেও বর্তমানে জামায়াতের সব পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছি।' বরিশাল জেলার শুরা সদস্য নির্বাচিত হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, 'জেলা কমিটি শুরা সদস্য নির্বাচিত করেছিল সত্য, কিন্তু ওই পদে থাকতে রাজি হইনি।' কয়েক বছর আগে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা ছিল স্বীকার করে ডা. মো. হানিফ বলেন, 'বর্তমানে হোমিও চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত থাকায় জামায়াতের কর্মকাণ্ডে সময় দিতে পারি না।'
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন