15 July 2010

জিজ্ঞাসাবাদে ভাগ্নে শহীদ: একটি দলের সহযোগিতা নিতে চাইছিল জেএমবি

বগুড়া অফিস

জেএমবির বর্তমান সাংগঠনিক প্রধান আনোয়ার আলম খোকা ওরফে ভাগ্নে শহীদের নেতৃত্বে সংগঠনের সদস্যরা দেশে বড় ধরনের নাশকতা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া ভাগ্নে শহীদ জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, নাশকতা চালাতে তারা একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা নেওয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু সমপ্রতি ওই দলটি সরকারের টার্গেটে পড়ে যাওয়ায় তারা সরাসরি জেএমবিকে সহযোগিতা করতে চায়নি। এ কারণে জেএমবি হামলা চালানোর জন্য কিছুটা দেরি করার সিদ্ধান্ত নেয়।

বগুড়ার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির গতকাল বুধবার কালের কণ্ঠকে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, 'জেএমবি দেশের ১২ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির 'হিটলিস্ট' তৈরি করেছিল। ভাগ্নে শহীদ লিস্টের সবার নাম প্রকাশ করেছে। তালিকার সবাই রাষ্ট্র পরিচালনার সঙ্গে সমপৃক্ত। জেএমবির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে দেশে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসত।'

কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ভাগ্নে শহীদকে গতকাল বগুড়ার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে পাঠানো হয়। পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানালে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগেই শহীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও গুলি রাখার অভিযোগে অস্ত্র আইনে বগুড়া সদর থানায় একটি মামলা করে পুলিশ। জামাই রফিকসহ ভাগ্নে শহীদের অন্য পাঁচ সহযোগীকে গাইবান্ধার আদালতে পাঠিয়ে চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। ওই পাঁচজনের বিরুদ্ধে নাশকতা সৃষ্টি ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানায় দুটি মামলা হয়েছে। আদালত জঙ্গিদের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করার পর পুলিশ ও জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলের কর্মকর্তারা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন।

বগুড়ার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ভাগ্নে শহীদ জানিয়েছে, জেএমবির সাবেক আমির শায়খ আব্দুর রহমানের সময় তৈরি করা ১০ বছরের কর্মপরিকল্পনা অনুসারে তারা কার্যক্রম চালাচ্ছিল। দলে একজনের অনুপস্থিতিতে বা কারো মৃত্যু হলে তৈরি হয় নতুন নেতৃত্ব। কিন্তু কাজ চলে পুরনো পরিকল্পনা অনুসারে। সমপ্রতি পুলিশের অভিযান জোরদার হওয়ায় জেএমবির শীর্ষ নেতারা ছদ্মবেশে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করে নতুন সদস্য তৈরির কাজে নামে। গ্রামের লোকজনকে দলে ভেড়ানোর জন্য মাঠে নামে তারা। দুর্গম এলাকাগুলোতে আস্তানা করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পেঁৗছানোই ছিল তাদের টার্গেট।'

পুলিশ সুপার জানান, জিজ্ঞাসাবাদে ভাগ্নে শহীদ বলেছে, সে কখনো নিজে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে না। অন্যের ফোন ব্যবহার করে সাংকেতিক ভাষায় তারা পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। জেএমবির আমির সাইদুর গ্রেপ্তার হওয়ার পর ঢাকা থেকে তার কাছে মোবাইলে মেসেজ আসে, হুজুর অসুস্থ। সব কর্মকাণ্ড বন্ধ। মোবাইলের সিম বন্ধ করে দাও। পরে কথা হবে। ওই মেসেজ পর্যায়ক্রমে সবার কাছে পেঁৗছে যায়।

ভাগ্নে শহীদ নিজেকে এসএসসি পাস বলে দাবি করলেও পুলিশ জানিয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন সম্পর্কে তার ভালো ধারণা রয়েছে। সে ভারতসহ কয়েকটি দেশে কমান্ডো ট্রেনিং নিয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে শহীদ দিনাজপুর থেকে ঢাকায় গিয়ে এক সপ্তাহ এক আত্দীয়ের বাড়িতে ছিল। সেই আত্দীয় সরকারের একটি বিশেষ বাহিনীতে কর্মরত। তার ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু হয়েছে।

জামাই রফিকও ছিল মোস্ট ওয়ান্টেড
ভাগ্নে শহীদের মতো পুলিশের তালিকায় মোস্ট ওয়ান্টেড হিসেবে ছিল জামাই রফিকের নাম। জেএমবির রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বে ছিল রফিক। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ছদ্মবেশে সে অবস্থান করেছে দিনের পর দিন। জিজ্ঞাসাবাদে রফিক জানায়, ফেরিওয়ালা বা রিকশাওয়ালা সেজে সে পুলিশের সামনে দিয়েই ঘুরেছে।

জামাই রফিক ওরফে হাসান (২৮) এবং জেএমবির গাইবান্ধা জেলার প্রধান জয়পুরহাট জেলার সদর উপজেলার গিয়াস ওরফে রাসেল (২৫) সম্পর্কে ভায়রা ভাই। তারা দুজন প্রেম করে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাখালবুরুজ ইউনিয়নের আয়শা সিদ্দিকা ও সুমি বেগমকে বিয়ে করে। আয়শা ও সুমি মামাতো-ফুফাতো বোন। সেই সূত্রে রফিক ও গিয়াস প্রায় এক মাস আগে জামাই হিসেবে পৌরসভার প্রধান পাড়ায় রাজা মাস্টারের বাড়ি ১১ শ টাকায় ভাড়া নেয়। আয়শা ও সুমি বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় বাড়িওয়ালাকে জানায়, তাদের স্বামীরা ওষুধ কম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি।

বাসার মালিক রাজা মিয়ার স্ত্রী লাইজু বেগম কালের কণ্ঠকে জানান, তিনি কখনো ভাড়াটিয়া মহিলাদের মুখ দেখতে পাননি। সব সময় তারা বোরকায় মুখ ঢেকে বাড়ির বাইরে ও ঘরের মধ্যে চলাফেরা করত। তাদের স্বামীরা প্রতিদিন ভোরে বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়ে গভীর রাতে ফিরত। পুলিশ গত মঙ্গলবার রাতে ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বোমা তৈরির সরঞ্জাম, ধারালো অস্ত্র ও জিহাদি বই উদ্ধার করে। তবে অভিযানের সময় রফিকের স্ত্রী আয়শা এবং রাসেলের স্ত্রী সুমি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

আমাদের গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, জামাই রফিকসহ গাইবান্ধা থেকে আটক পাঁচ জেএমবি জঙ্গিকে গতকাল বুধবার সিনিয়র বিচারিক হাকিম আজিজুর রহমানের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাদের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। জামাই রফিক ছাড়া অন্য চার জঙ্গি হলো_গিয়াস উদ্দিন ওরফে রাসেল (২৫), এহসার সদস্য শাকিল (২২), আব্দুল মজিদ (৫০) ও সাবেক সেনা সদস্য আনোয়ার হোসেন ওরফে আর্মি আনোয়ার (৪৮)। পুলিশ সুপার মো. শাহাদাত হোসেন জানান, আটক জেএমবি জঙ্গিদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন