15 July 2010

কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লা রিমান্ডে

আদালত প্রতিবেদক

মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যার অভিযোগে পল্লবী থানায় দায়ের করা মামলায় জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে (রিমান্ড) নেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালত গতকাল বুধবার এ আদেশ দেন।

কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লাকে গতকাল বিকেল পৌনে ৪টার দিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) আদালতে নিয়ে যায়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক নুরুল ইসলাম সিদ্দিকী তাঁদের ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানালে মহানগর হাকিম রোকসানা বেগম হ্যাপী পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তিনি আসামিদের পক্ষে আইনজীবীদের করা জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন।

জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষপর্যায়ের দুই নেতাকে আদালতে নেওয়া হবে_এ খবর পেয়ে গতকাল দিনভর আদালতপাড়ায় বিক্ষোভ করে ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন। তারা যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি জানায়। কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লাকে প্রিজন ভ্যানে করে আদালত থেকে বের করার সময় অনেকে তাঁদের লক্ষ্য করে জুতা ও ঝাড়ু নিক্ষেপ করে।

আদালতে কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লার আইনজীবীরা রিমান্ডের আবেদন বাতিল ও জামিনের আবেদন জানান। আইনজীবীরা বলেন, '৪০ বছর আগের ঘটনায় করা মামলায় আসামিদের হয়রানি করার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এজাহারে বর্ণিত ঘটনা সম্পর্কে আসামিরা কিছুই জানেন না।'

অন্যদিকে রিমান্ড আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, আসামিরা ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলিত হয়ে আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনী গঠন করে শহর-বন্দর, গ্রামে-গঞ্জে গণহত্যা, অগি্নসংযোগ, লুটতরাজ, নারী ধর্ষণ ইত্যাদি মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন। পল্লবী এলাকার আলোকদী গ্রামে তাঁরা নিরীহ মানুষকে হত্যা করে বলে তদন্তে জানা গেছে। তাঁদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ওই ঘটনায় জড়িতদের নাম প্রকাশ পাবে।

শুনানির পর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। আসামিদের চিকিৎসা ও প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা দেওয়ার বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে। আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট আবদুর রাজ্জাক, কামাল উদ্দিন প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর পিপি আবদুল্লাহ আবু, জেলা জজ আদালতের পিপি খন্দকার আবদুল মান্নান, অতিরিক্ত পিপি শাহ আলম তালুকদারসহ ২০-২৫ জন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা ও অগি্নসংযোগের অভিযোগে মোট ৮০ জনকে আসামি করে ২০০৮ সালের ২৫ জানুয়ারি পল্লবী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। আসামিদের মধ্যে ১০ জনের নাম-পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে ৭০ জনকে। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন মোল্লা বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার আরজিতে নিজামী, মুজাহিদ, কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামানকে হত্যাকারীদের নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

আরো তিন মামলায় গ্রেপ্তার : পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা দেওয়া, পুলিশকে মারধর, ভাঙচুর, রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের গাড়িবহরে বাধা দেওয়ার অভিযোগে কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লাকে পল্টন থানায় দায়ের করা তিনটি মামলায়ও গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে পুলিশ। মহানগর হাকিম ইসমাইল হোসেন গতকাল পুলিশের ওই আবেদন গ্রহণ করেছেন।

জামায়াত-শিবির-যুবদল-ছাত্রদলের ৮২ নেতা-কর্মীর আগাম জামিন : গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ঢাকা, খুলনা ও সিলেটে দায়ের করা ছয়টি মামলায় জামায়াত-শিবির, যুবদল ও ছাত্রদলের ৮২ নেতা-কর্মীকে আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি আফজাল হোসেন আহমেদ ও বিচারপতি মুহাম্মদ আব্দুল হাফিজের বেঞ্চ এবং বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের বেঞ্চ গতকাল আলাদা আদেশে তাদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।

রাজধানীর মতিঝিল থানায় দায়ের করা মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মঞ্জুসহ ছয়জন, বরিশালে করা মামলায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি পারভেজ আকন্দ বিপ্লব এবং পিরোজপুরের একটি মামলায় মাসুদ শেখসহ তিনজনকে আগাম জামিন দেন হাইকোর্ট।

এ ছাড়া সিলেটের চারটি ও খুলনার একটি মামলায় জামায়াত-শিবিরের ৭২ নেতা-কর্মীর জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে। জামায়াত-শিবিরকর্মীদের পক্ষে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন ও অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান এবং ছাত্রদল-যুবদল নেতা-কর্মীদের পক্ষে অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সজল আদালতে শুনানি করেন।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন