নিজস্ব প্রতিবেদক
বিদেশে পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে ঢাকায় বিদেশি দূতাবাসগুলোতে যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। তাদের ভিসা না দিতে ঢাকায় বিদেশি মিশনগুলোকে অনুরোধ জানাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল রবিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিবাসন (ইমিগ্রেশন) পুলিশের কাছে চিহ্নিত ৪০ যুদ্ধাপরাধীর ছবিযুক্ত তালিকা পাঠিয়েছে। ইমিগ্রেশন অফিসের বোর্ডে ওই তালিকা সাঁটিয়ে দিতেও বলা হয়েছে। দেশের সব বন্দরে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা পাঠানো হয়েছে। এ তালিকায় জামায়াতের শীর্ষ নেতা গোলাম আযম, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, মীর কাসেম আলী, বিএনপির সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নামও রয়েছে।
জানা গেছে, স্থল, নৌ ও আকাশ_কোনো পথেই যাতে যুদ্ধাপরাধীরা পালাতে না পারে, সে লক্ষ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সংস্থাগুলো কাজ করছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দরসহ সংশ্লিষ্ট সব জায়গায়ই তালিকা পাঠানো হয়েছে। আদালতে অভিযোগ দায়েরের আগ পর্যন্ত তারা যেন বিদেশে পালাতে না পারে, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এদিকে ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভিবাসন শাখার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা রবিবার সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠের কাছে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর তালিকা পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, তালিকায় স্থান পাওয়া ব্যক্তিদের কেউ বিদেশে যেতে চাইলে তাৎক্ষণিকভাবে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তাদের জানাতে বলা হয়েছে।
আমাদের বেনাপোল প্রতিনিধিও দেশের প্রধান স্থলবন্দর বেনাপোলে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা পাঠানোর খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, তালিকা পাওয়ার পরপরই বেনাপোল সীমান্ত এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। ইমিগ্রেশন পুলিশের পাশাপাশি সীমান্তরক্ষা বাহিনী বিডিআরকেও রাখা হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায়।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী আজম খান জানান, তাঁরা ইতিমধ্যে চিহ্নিত ৪০ যুদ্ধাপরাধীর ছবিযুক্ত তালিকা ইমিগ্রেশন অফিসের বোর্ডে সাঁটিয়ে দিয়েছেন। চেকপোস্ট এলাকায় ইমিগ্রেশন পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। জামায়াতের তিন শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার পর যুদ্ধাপরাধীদের দেশ ত্যাগের আশঙ্কায় সরকার ওই তালিকা পাঠাল। তালিকা পাওয়ার পর পাসপোর্ট যাত্রীর চেহারার সঙ্গে ছবি মিলিয়ে যাত্রীকে ভারত গমনের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, তালিকায় স্থান পাওয়া চিহ্নিত ৪০ যুদ্ধাপরাধী হলো : জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সাবেক আমির গোলাম আযম, জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা নুরুজ্জামান, শেরপুরের কামারুজ্জামান, যশোরের কেশবপুরের শাখাওয়াত হোসেন, রংপুরের এ টি এম আজহারুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার ডা. আবদুল জব্বার, সাতক্ষীরার রিয়াসাত আলী বিশ্বাস, গাজী নজরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আনছার আলী, ফরিদপুরের আব্দুল কাদের মোল্লা, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু মিয়া, ডা. কাজী ইমদাদুল হক, চট্টগ্রামের সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তাঁর ভাই গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম, মানিকগঞ্জের মীর কাসেম আলী, জয়পুরহাটের আবদুল আলীম, খুলনার কয়রার শাহ মো. রুহুল কুদ্দুস, ঠাকুরগাঁওয়ের মাওলানা আবদুল হাকিম, চুয়াডাঙ্গার মাওলানা হাবিবুর রহমান, সিলেটের মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, মাওলানা হাবিবুর রহমান, পাবনার মাওলানা আবুল বাশার মো. সুবহান মিয়া, খুলনার মিয়া গোলাম পরওয়ার, দিনাজপুরের আফতাব উদ্দিন, গাইবান্ধার আবু সালেহ মো. আজিজ মিয়া ওরফে ঘোড়া আজিজ, সিরাজগঞ্জের রফিকুল ইসলাম খান, ময়মনসিংহের ফজলুর রহমান সুলতান, আবদুল মতিন ভঁূইয়া, নোয়াখালীর আমির আহম্মেদ, গোলাম সরোয়ার, চাঁদপুরের এ বি এম খালেক মজুমদার, হবিগঞ্জের সৈয়দ মো. কাওসার, বাগেরহাটের এ কে এম ইউসুফ, টাঙ্গাইলের ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল বাসেদ ও জামালপুরের শাহজাহান।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আসবে। যুদ্ধাপরাধের বিচার ও জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন রাজনীতিককে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিদেশি রাষ্ট্রগুলো কোনো আপত্তি জানিয়েছে কি না_এ ব্যাপারে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাঁদের কাছে কেউ কোনো আপত্তি জানাননি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, বিদেশে যাওয়ার জন্য ভিসা পেতে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসে আবেদন করতে হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা পেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই ব্যক্তিদের ভিসা না দেওয়ার জন্য বিদেশি দূতাবাসগুলোকে অনুরোধ করতে পারে। গোলাম আযমের পাসপোর্ট সম্পর্কে সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পাসপোর্ট প্রদানের দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের।
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন