সেলিম জাহিদ
জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী গ্রেপ্তার হওয়ার পর দলটির প্রকাশ্য কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। মামলা ও পুলিশি আতঙ্কে জামায়াত অধ্যুষিত এলাকাগুলোতেই কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালনে শৈথিল্য দেখা গেছে। ঝটিকা মিছিল ছাড়া ঢাকাতেই জামায়াত-শিবির স্থির হয়ে কোনো কর্মসূচি পালন করছে না। সারা দেশে তাদের মাঠের রাজনীতি আরো স্থবির।
এ বছরের শুরুতে রাজধানীকে সংগঠনের 'প্রাণকেন্দ্র' হিসেবে উপস্থাপন করার ঘোষণা দিয়েছিল জামায়াত। ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৯০ ওয়ার্ডকে ১১০টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডে ভাগ করে জামায়াত তৎপরতা চালাচ্ছে। আত্দগোপনে থাকা ঢাকা মহানগর আমির রফিকুল ইসলাম খান গত মার্চ মাসে এ প্রতিবেদককে আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অন্তত ৫০টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী দেওয়ার কথা বলেছিলেন। সংগঠনের বিগত গণসংযোগ অভিযানে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি পৌনে এক লাখ লোক সহযোগী সদস্য ফরম পূরণ করে জামায়াতে শরিক হয়েছে বলেও দাবি করেছিলেন রিমান্ডে থাকা সেক্রেটারি জেনারেল। কিন্তু জামায়াতের তিন প্রধান নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার পর ঢাকায় যে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, তাতে ওই জনশক্তির প্রকাশ ঘটেনি।
জামায়াতের কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালনে এখন পর্যন্ত রাজধানীর পল্টন, মতিঝিল ও রমনা থানা কমিটিকে মাঠে তৎপর দেখা গেছে। এ ছাড়া উত্তরা, মিরপুর, পল্লবী, উত্তর ও দক্ষিণ বাড্ডা, পশ্চিম রামপুরা, খিলগাঁও, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী, মিরহাজিরবাগেও বিক্ষিপ্তভাবে মিছিল হয়েছে। অন্য এলাকায় কোনো কর্মসূচি পালন করা হয়নি।
জামায়াতের সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আযাদ এর সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করে বলেন, 'পুলিশের এত নির্যাতনের পরও আমরা মাঠে আছি। কোনো কর্মসূচিই ব্যর্থ হয়নি। হয়তো কর্মসূচি পালনের প্রকৃতি পরিবর্তন হয়েছে।'
জামায়াত প্রভাবাধীন এলাকা হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের পূর্বাঞ্চল, রাজশাহী, সিলেট মহানগর ও খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় জামায়াতের প্রকাশ্য রাজনৈতিক কার্যক্রমেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বিক্ষোভ করতে গিয়ে খুলনা মহানগর আমির মিয়া গোলাম পরোয়ার গ্রেপ্তার হওয়ার পর স্থানীয় নেতাদের অনেকে গা ঢাকা দিয়ে চলছেন। রাজশাহী মহানগর আমির আতাউর রহমানসহ শীর্ষ নেতারা ফারুক হত্যা মামলায় আটক থাকায় মাঠের রাজনীতি থমকে গেছে আরো আগে থেকেই।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমদের নিজ জেলা ফেনী এবং ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামের রংপুরের বদরগঞ্জেও সেভাবে সফল বিক্ষোভ হয়নি বলে খবর পাওয়া গেছে। তিন নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার দিন দুই স্থানে ঝটিকা বিক্ষোভ মিছিল বের করা হলেও পুলিশ আর কোনো মিছিল হতে দেয়নি।
দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেন, 'পুলিশ ও সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হামলা চালিয়ে জামায়াতের মিছিল-সভা পণ্ড করে সরকার নিজেই সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে।'
বিভিন্ন এলাকা থেকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
চট্টগ্রামে মোবাইল সিম বদল : গ্রেপ্তার আতঙ্কে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা অবস্থান পরিবর্তনের পাশাপাশি মোবাইল ফোনের সিমও পরিবর্তন করছেন। দলের মাঠপর্যায়ে হতাশা নেমে এসেছে। নগরীর দেওয়ান বাজারে দলীয় কার্যালয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অপরিচিত কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। নগর জামায়াত আমিরসহ দায়িত্বশীল নেতারা প্রকাশ্যে অফিসে আসছেন না। চন্দনপুরায় মহানগর শিবিরের কার্যালয়েও গতকাল কাউকে পাওয়া যায়নি। দুপুরে জামায়াতের দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে কোনো নেতাকে পাওয়া যায়নি। দলীয় কার্যালয়ের নিচতলায় উত্তর জেলা জামায়াতের অফিস, তৃতীয় তলায় মহানগর আমিরসহ দায়িত্বশীলদের কার্যালয়ও ফাঁকা ছিল। এ তলার নিরাপত্তাকর্মী হাছিনুর রহমান জানান, কয়েক দিন ধরে অফিসে লোকজনের যাতায়াত কমে গেছে। বিকেল সাড়ে ৫টায় গিয়ে দেখা যায়, নগর জামায়াত আমির মাওলানা শামসুল ইসলাম এমপি নগরীর হালিশহর ও ডবলমুরিং থানায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহারের কপি পড়ছেন।
এ ঘটনায় মাওলানা শামসুল ইসলাম ছাত্রলীগকে দায়ী করে বলেন, 'আওয়ামী লীগ বাকশাল কায়েম করতে জামায়াত-শিবিরকে দমন করছে। গণতান্ত্রিক দেশে প্রতিবাদ জানানোর অধিকার থাকলেও আমাদের নেতা-কর্মীরা রাস্তায় বেরোতে পারছেন না।' সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জামায়াত-শিবির কাজ করছে। যত বাধা আসুক, তারা হতাশ হয় না। এখন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।'
সিএমপির কমিশনার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, জামায়াত-শিবির বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বজায় রাখতে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার অভিযান চলছে।
রাজশাহীতে লুকোচুরির মিছিল : রাজশাহী মহানগর জামায়াত কেন্দ্রের কোনো কর্মসূচিই সফলভাবে পালন করতে পারছে না। পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি করে নগরীতে ক্ষণস্থায়ী মিছিল বের করছে। তবে রাজশাহী মহানগর পুলিশের বিশেষ শাখার সহকারী কমিশনার তারিকুল ইসলাম বলেছেন, শিবির ভেতরে ভেতরে সক্রিয় হয়ে নাশকতার চেষ্টা করতে পারে। পুলিশি তৎপরতায় তারা এগোতে পারছে না। এর পরও তারা সজাগ দৃষ্টি রাখছে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি শিবিরের হামলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগকর্মী ফারুক হোসেন হত্যাকাণ্ড এবং ছাত্রলীগের চার নেতার রগ কাটার ঘটনায় স্থানীয়ভাবে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি কঠিন সংকটে পড়ে। ওই ঘটনার পর রাজশাহী মহানগর, জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াত-শিবির একঝাঁক নেতা গ্রেপ্তারের পর দলটির রাজনীতি বিপর্যয়ের মুখে। উপজেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা সক্রিয় থাকলেও গ্রেপ্তার এড়াতে অনেকেই এখন গা ঢাকা দিয়ে চলছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, রাজশাহীর রাজনীতিতে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মূলে ছিল জামায়াত-শিবির। তাদের তাণ্ডব আগের চেয়ে এখন নিয়ন্ত্রিত। জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর জামায়াতের এক নেতা জানান, কৌশলগত কারণেই তাঁরা বেশি সময় ধরে মাঠে মিছিল নিয়ে থাকছেন না।
সিলেটে হঠাৎ মিছিল: সিলেট মহানগর জামায়াত তিন নেতার মুক্তির দাবিতে তারা কঠোর ও কৌশলী ভূমিকা পালন করছে। জমি ও হাউজিংসহ ব্যবসা-বাণিজ্যে মনোযোগী নেতারা এখন দলকে সময় দিচ্ছেন। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, বিভিন্ন ব্যানারে জামায়াত মাঠপর্যায়ে সংগঠিত হচ্ছে।
সিলেটে দলের ভেতরে নেতৃত্ব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ বিরাজ করছে। বিশেষ করে মহানগর জামায়াতে হঠাৎ করে অভিজ্ঞ ও প্রবীণ নেতৃত্বকে বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্ব সামনে আসায় প্রবীণ নেতাদের মধ্যে এই ক্ষোভ দেখা দেয়। ফলে দলের কার্যালয়ে নিয়মিত সভা-সমাবেশ হলেও রাজপথে দুর্বল উপস্থিতি ছিল জামায়াতের। এখন এ সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে দলটি।
নিজামী, মুজাহিদ ও সাঈদী গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার বন্দরবাজারে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হলে জামায়াত কৌশল বদলায়। ঝামেলা এড়াতে আগাম ঘোষণা না দিয়ে মিছিল বের করে। পুলিশ বাধা দেওয়ার আগেই তারা মিছিল শেষ করে চলে যায়।
গত দুই দিনে রাজপথে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে দলের নেতা-কর্মীরা যে মিছিল ও সমাবেশ করছেন তাতেই দলের নতুন কৌশল সম্পর্কে সবাই অবগত হয়ে গেছে। 'জামায়াত এখন রাজপথে তাদের সম্পূর্ণ শক্তির প্রদর্শন করবে না। মাঝেমধ্যে সুযোগ বুঝে নিজেদের অবস্থানের জানান দেবে'_এমন দাবি করছেন একজন জামায়াত নেতা।
শুক্রবার সকাল থেকে নগরীর মোড়ে মোড়ে পুলিশ ও র্যাব সতর্ক অবস্থায় থাকলেও জামায়াত কোনো মিছিল বের করেনি। কিন্তু রবিবার নগরবাসী ও পুলিশ যখন ঘুমিয়ে, তখন সকাল ৮টায় হঠাৎ করেই জামায়াত নগরীতে মিছিল বের করে। পুলিশ ঘুম থেকে উঠে প্রস্তুতি নিতে নিতেই তাদের মিছিল শেষ হয়ে যায়। গত সোমবারও সকাল ৯টায় নগরীর পূর্ব প্রান্তে শাহজালাল উপশহর এলাকায় মিছিল করে জামায়াত। জামায়াতের এই কৌশলের কাছে পুলিশ একাধিকবার মার খেয়েছে।
মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ফখরুল ইসলাম বলেন, 'আমরা কোনো সংঘাত চাই না। সরকারের ফ্যাসিবাদী আচরণের প্রতিবাদ করা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার।'
ঝিনাইদহে দায়সারা কর্মসূচি : হামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে ঝিনাইদহে জামায়াত-শিবিরের প্রকাশ্য কোনো কর্মকাণ্ড দেখা যাচ্ছে না। গেরিলা কায়দায় হঠাৎ খণ্ড খণ্ড মিছিল আর ঘরোয়া গোপন বৈঠক করেই কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ছাত্রলীগের আন্দোলনের মুখে জামায়াত-শিবির কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। ঝিনাইদহ জেলা জামায়াত কার্যালয়টি শহরের হামদহ এলাকায়। নতুন হাটখোলায় সংগঠনের শহর কার্যালয়। দুটি কার্যালয় খোলা থাকলেও নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি কম। গত ১৩ জুন নতুন হাটখোলায় ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে উভয় সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ জামায়াত-শিবিরের ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করে। পরে তারা জামিনে বেরিয়ে এলেও প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাদের খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। বিক্ষোভসহ অন্যান্য কর্মসূচি দায়সারাভাবেই পালন করছে জেলা জামায়াত ও ছাত্রশিবির।
জেলা আমির মুজাম্মিল হক বলেন, 'আমাদের সাংগঠনিক রুটিন ওয়ার্ক নিয়মিত চলে এবং এখনো চলছে। শহরে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনে নেতা-কর্মীরা নানা রকম বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। আজ হোক, কাল হোক, আমরা ঝিনাইদহ শহরে শোডাউন করবই।'
সাতক্ষীরায় নড়বড়ে : শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারের পরও মামলা ও পুলিশের ভয়ে সফলভাবে বড় ধরনের কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি সাতক্ষীরা জামায়াত। গোপনে নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়ে ঝটিকা মিছিল বের করলেও প্রকাশ্যে কোনো তৎপরতা নেই। জামায়াতের দুর্গ বলে পরিচিত সাতক্ষীরায় দলের অবস্থা এখন অনেকটা নড়বড়ে।
জামায়াত নেতা-কর্মীদের দাবি, পুলিশের অতিরঞ্জন, বাড়াবাড়ি ও সরকারের জুলুম-অত্যাচারের কারণেই তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে পারছে না। গত ৮ এপ্রিল জামায়াত সেক্রেটারি আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ সাতক্ষীরা আসতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা-জনতার প্রতিরোধের মুখে ঢুকতে পারেননি। এ সফরকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষের মামলায় প্রায় ৪০ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়। নিজামী, মুজাহিদ ও সাঈদীর গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করতে গিয়ে কলারোয়া উপজেলায় পুলিশের হাতে জামায়াত শিবিরের আট নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়।
জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি নূরুল হুদা 'দৌড়ের ওপরে আছেন' মন্তব্য করে বলেন, 'কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখে পালন করতে চাই। কিন্তু তাতেও পুলিশের বাধা।'
চাঁপাইনবাবগঞ্জে গোপন বৈঠক : জামায়াত প্রভাবাধীন চাঁপাইনবাবগঞ্জেও সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারের পর তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ-সমাবেশ, মহাসড়কে কিছুক্ষণ ব্যারিকেড দেওয়া ছাড়া আর কোনো কর্মসূচি নিয়ে ঘোষণা দিয়ে রাস্তায় নামতে পারেনি নেতা-কর্মীরা। অর্ধদিবস হরতাল আহ্বান করে পরে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। মামলা ও পুলিশের ভয়ে বিভিন্ন মাদ্রাসা, মেসসহ দুর্গম এলাকায় অত্যন্ত সন্তর্পণে দলের সাংগঠনিক বৈঠক হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। জেলা সদরের বাইরের উপজেলাগুলোতেও দলটির প্রকাশ্য তেমন কোনো কর্মসূচি নেই। তবে নাচোল বিএম মাদ্রাসা ও পল্লী দাতব্য চিকিৎসাকেন্দ্রে সঙ্গোপনে জামায়াতের বৈঠক হচ্ছে। এ ছাড়া শিবগঞ্জের ধাইনগর ইউনিয়নের দুর্গম এলাকায় দলের গোপন বৈঠক হয়।
গত সোমবার দুপুরে অপরিচিত লোকদের নিয়ে শহরের পুরনো বাজার এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেছে জামায়াত-শিবির। দুপুর পৌনে ২টার দিকে ২০-৩০ জন পুরনো বাজার জামে মসজিদ থেকে বের হয়ে পুরনো বাজার মোড়ে জমায়েত হয়। হঠাৎ স্লোগান দিয়ে মিছিল শুরু হয়। অল্প সময়ের মধ্যেই আবার শেষ।
পুলিশ বলছে, 'মিছিলকারীরা অপরিচিত, এরা এ এলাকার নয়।' চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ওমর ফারুক জানান, কেন্দ্রের নির্দেশে জামায়াতের কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। সময়মতো জামায়াত প্রকাশ্য কর্মসূচি চালাবে।
কক্সবাজারে নীরবতা : তিন নেতা গ্রেপ্তারের পর করণীয় নিয়ে দলটির মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছেন। কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে অত্যন্ত সন্তর্পণে। সোমবারের বিক্ষোভ-সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছে জেলা কার্যালয় প্রাঙ্গণে মাইক লাগিয়ে। ধারণা করা হয়েছিল, কেন্দ্রীয় নেতারা গ্রেপ্তার হলে জামায়াতের প্রভাবাধীন কক্সবাজারে তুলকালাম কাণ্ড ঘটবে, কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, জামায়াত এ ব্যাপারে জনসমর্থন পাচ্ছে না।
গত শুক্রবার কক্সবাজারের বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজ শেষে নিজামী, সাঈদী ও মুজাহিদের মুক্তি কামনায় দোয়া করার জন্য স্থানীয় নেতারা তৎপর ছিলেন। কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চল, বিশেষ করে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকা এবং মহেশখালী ও কুতুবদিয়া দ্বীপাঞ্চলের কিছু কিছু এলাকা ছাড়া অন্য মসজিদগুলোতে দোয়া হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব মসজিদের বেশির ভাগেই দোয়া হয় সাঈদীর জন্য। দীর্ঘদিন সাঈদী এসব এলাকায় তাফসির মাহফিল করেন।
শুক্রবার কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া জামে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে সাঈদীর জন্য দোয়া করতে গেলে ইমামকে নিয়ে হট্টগোল বাধে। পরে প্রবীণ মুসলি্লরা ইমামকে রক্ষা করেন। মসজিদের ইমাম মাওলানা শফিউল আলম বলেন, 'মহল্লার জামায়াতের নেতা-কর্মীরা কয়েক দিন ধরে জুমার নামাজে নেতাদের জন্য দোয়া করতে বলে আসছিলেন। একজন আলেম হিসেবে সাঈদীর জন্য দোয়া চাইতে গিয়ে আমি এ পরিস্থিতির সম্মুখীন হই।'
কক্সবাজার জেলা জামায়াত আমির মুহম্মদ শাহজাহান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করতে চেয়েছি, কিন্তু সরকার বাকশালী কায়দায় আমাদের রাজপথে যেতে দেয়নি।'
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন