30 June 2010

মামলা জামিন-অযোগ্যপ্রমাণ হলে ২ বছরের জেল

আশরাফ-উল-আলম

মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলা জামিন-অযোগ্য। এ মামলার অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামিদের দুই বছরের কারাদণ্ড হতে পারে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গতকাল মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামি ঢাকা মহানগর জামায়াতের আমির রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।

আদালতের সমন পেয়ে হাজির হননি বলে নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী ও রফিকুলের বিরুদ্ধে গতকাল দুপুরে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। পরে প্রথমোক্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, স্পর্শকাতর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার এই মামলা জামিন-অযোগ্য। অভিযোগ প্রমাণিত হলে দুই বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

ঢাকা আইনজীবী সমিতির সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, জামিন দেওয়া-না দেওয়া আদালতের এখতিয়ার। তবে এ মামলার অপরাধ জামিন-অযোগ্য।

মামলার অভিযোগ
গত ২১ মার্চ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে পাঁচ জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলা করেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী। ওই দিনই মামলাটি গ্রহণ করেন আদালত। পরে ৩০ মার্চ প্রত্যেককে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দিয়ে সমন পাঠানো হয়।

গতকাল মামলার ধার্য তারিখে এক আসামি ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগরের (দক্ষিণ) সভাপতি আ স ম ইয়াহিয়া আদালতে হাজির হয়ে জামিন চান। তাঁকে জামিন দেওয়া হয়। কিন্তু আদালতের সমন পেয়ে নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী ও রফিকুল হাজির না হওয়ায় দুপুরের দিকে তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। আদেশের পরপরই তা ইস্যু করা হয় এবং আদালতের বিশেষ বাহকের মাধ্যমে তা সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠানো হয়।

অভিযুক্ত জামায়াত নেতারা ধর্মের অপব্যাখ্যাকারী বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। আরজিতে বলা হয়, গত ১৭ মার্চ (বুধবার) মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে ছাত্রশিবিরের একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর জামায়াত নেতা রফিকুল ইসলাম খান। তিনি মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সঙ্গে নিজামীর তুলনা করে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন। এতে আরো বলা হয়, জামায়াত নেতারা মুক্তিযুদ্ধে বহু নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। এখন রাজনীতি করার সুযোগ পেয়ে ধর্মের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এরা ইসলামের অপব্যাখ্যাকারী। নিজামী ও মুজাহিদসহ আসামিরা মাওলানা মওদুদীর অনুসারী, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী, যুদ্ধাপরাধী, বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী ও নারী নির্যাতনকারী।

দণ্ডবিধির ২৯৫ (ক) ধারা দণ্ডবিধির ২৯৫ (ক) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়। ওই ধারায় বলা হয়েছে, কোনো শ্রেণীর ধর্মীয় বিশ্বাসকে অবমাননা করে উক্ত শ্রেণীর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার উদ্দেশ্যে দুরভিসন্ধিমূলক কাজ করা হলে ওই ব্যক্তি দুই বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ওই ধারায় আরো বলা হয়েছে, মামলাটি ম্যাজিস্ট্রেট আমলে নিতে পারবেন। এ ধারার অপরাধ জামিন-অযোগ্য। এ অপরাধ মীমাংসার অযোগ্য। যেকোনো ম্যাজিস্ট্রেট এ ধারার মামলার বিচার করতে পারবেন।

শিবিরের সভায় রফিকুল ইসলাম যা বলেছিলেন
সীরাতুন্নবী (সা.)-এর এক আলোচনা সভায় গত ১৭ মার্চ ঢাকা মহানগর জামায়াত আমির রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ''বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলন মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শেই চলছে, এর প্রমাণ ওই সময় হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে ইহুদিরা 'আল আমীন', 'সাদিক' উপাধি দেওয়ার পরও যখন তিনি নবুয়ত পেলেন, তখনই তাঁর বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার, বাধা-প্রতিবন্ধকতা শুরু করে।''

রফিকুল ইসলাম খান মহানবীর জীবদ্দশার ঘটনার সঙ্গে তুলনা করে বর্তমানে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, 'আজও ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার-ষড়যন্ত্র চলছে। ইসলামী আন্দোলনের নেতা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী জামায়াতে ইসলামীর আমির হওয়ার পর সাঁথিয়ায় কবরের নিচ থেকে হাড্ডিমাড্ডি নিয়ে উনাকে যুদ্ধাপরাধী-খুনি বলা শুরু হয়। এর আগে তাঁর বিরুদ্ধে কখনো কোনো অভিযোগ উঠেনি।'

রফিকুল ইসলাম খান বলেন, 'ইসলামের শত্রুরা হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর যে অত্যাচার, অপপ্রচার চালিয়েছিল, আজ জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধেও অনুরূপ অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র চলছে।'
মগবাজারের আল-ফালাহ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী প্রধান অতিথি ছিলেন। অনুষ্ঠানে আবু সালেহ মো. ইয়াহহিয়া সভাপতিত্ব করেন। রফিকুল ইসলাম মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে বক্তব্য দিলেও অনুষ্ঠানে উপস্থিত জামায়াত নেতারা এর প্রতিবাদ করেননি। হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর সঙ্গে নিজামীর তুলনা করা হলেও নিজামী পরে এর কোনো প্রতিবাদ করেননি। পরস্পর যোগসাজশে তাঁরা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছেন বলেই বাদী প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন