30 June 2010

জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল, সেক্রেটারি আজহার

সেলিম জাহিদ

একসঙ্গে তিন শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার হওয়ায় নেতৃত্ব সংকটে পড়েছে জামায়াতে ইসলামী। প্রতিষ্ঠার পর এমন সংকটে আর কখনো পড়েনি জামায়াত। দলের নীতি-নির্ধারকরাও আকস্মিক ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার রাতেই জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মকবুল আহমদকে ভারপ্রাপ্ত আমির ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর একজন নীতি-নির্ধারক রাতে কালের কণ্ঠকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে অন্তর্বর্তীকালীন এ দায়িত্ব বণ্টন সম্পর্কে কোনো কোনো দায়িত্বশীল নেতা অবহিত নন বলে জানান।

জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের আটকাদেশ দীর্ঘ হলে দলের নেতৃত্বে আরো পরিবর্তন আসতে পারে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র আভাস দিয়েছে। গতরাতে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের জরুরি সভায় নিজামী ও সাঈদীর অনুপস্থিতিতে 'ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব' নিয়ে আলোচনার পর দুই নেতাকে প্রাথমিক দায়িত্ব দেওয়া হয়।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি অধ্যাপক তাসনীম আলম বিষয়টি স্বীকার করে গতরাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতে একসঙ্গে তিন শীর্ষ নেতার গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনা অতীতে আর হয়নি।'

তিন শীর্ষ নেতার অনুপস্থিতিতে দলের নেতৃত্বে বড় কোনো পরিবর্তন আসছে কি না জানতে চাইলে তাসনীম আলম বলেন, 'আমরা এ মুহূর্তে তিন নেতার মুক্তি নিয়ে ভাবছি। নির্বাহী পরিষদ জরুরি বৈঠকে বসে সে লক্ষ্যে কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। বাকি বিষয়ে পরিস্থিতি বুঝে নিশ্চয়ই আলোচনা হবে।'
১৯৪১ সালে জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠিত হলেও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে 'জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ' নামে ১৯৭৯ সালে গোলাম আযমের নেতৃত্বে নতুন করে কার্যক্রম শুরু করে। ২০০৮ সালে দলটির নামে সামান্য পরিবর্তন এনে 'বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী' করা হয়।

এর আগে জামায়াতের আমির গোলাম আযমের অনুপস্থিতিতে আব্বাস আলী খান দীর্ঘদিন ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পালন করেন। গোলাম আযম নাগরিকত্ব মামলায় ১৯৯২ সালের ২৪ মার্চ গ্রেপ্তার হন।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের ১৮ মে দুর্নীতির মামলায় জামায়াত আমির মতিউর রহমান নিজামী এবং একই বছরের ১০ নভেম্বর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ গ্রেপ্তার হন। নিজামী গ্রেপ্তার হলে জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পালন করেন।

গতকাল নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে এ কে এম ইউসুফ উপস্থিত থাকলেও সভাপতিত্ব করেন নায়েবে আমির মকবুল আহমদ। সন্ধ্যায় তিনিই সংবাদ সম্মেলন করে দলের পক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করেন। দলের পাঁচজন নায়েবে আমিরের মধ্যে জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী মকবুল আহমদ দ্বিতীয়।

অন্যদিকে পাঁচ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম তৃতীয়। তাঁর আগে জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লা রয়েছেন। কামারুজ্জামান গতকাল নির্বাহী পরিষদের প্রথম দফার বৈঠক ও সংবাদ সম্মেলন কোনোটিতেই উপস্থিত ছিলেন না। অবশ্য সংবাদ সম্মেলন-উত্তর নির্বাহী পরিষদের দ্বিতীয় দফার বৈঠকে তিনি উপস্থিত ছিলেন।
রাতে যোগাযোগ করা হলে কামারুজ্জামান বলেন, দলের অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব বণ্টন সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। নির্বাহী পরিষদের বৈঠকেও এ ধরনের কোনো তথ্য তিনি পাননি বলে জানান কামারুজ্জামান। তবে আবদুল কাদের মোল্লা মকবুল আহমদের ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পাওয়ার কথা নিশ্চিত করলেও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারির দায়িত্ব সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে জানান।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন