30 June 2010

আমির ও সেক্রেটারি পদে নতুন দায়িত্ব: জামায়াত-বিএনপির যোগাযোগ



ওয়াসেক বিল্লাহ ও তানভীর সোহেল | তারিখ: ০১-০৭-২০১০


জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ শিগগিরই মুক্তি পাবেন বলে আশা করতে পারছেন না দলের নেতারা। এ কারণে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য দলের আমির ও সেক্রেটারি জেনারেল পদে অস্থায়ীভাবে দুজনকে দায়িত্ব দিয়েছে জামায়াত।

এদিকে তিন নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার পরপরই জামায়াতের পক্ষ থেকে বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। বিএনপির নেতারাও জামায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের করণীয় সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। এ ব্যাপারে বিএনপির বৈঠক করার কথা রয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

যদিও গত সংসদ নির্বাচনের পর দুই দলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ ছিল না বললেই চলে। তবে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ৯ জুন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের আগে জামায়াতের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর জামায়াত ওই কর্মসূচি ও গত ২৭ জুনের হরতালের প্রতি সমর্থন জানায়। সর্বশেষ জামায়াতের তিন নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার পর দুই দলের মধ্যে যোগাযোগ আরও বাড়বে বলে উভয় দলের নেতারা মনে করছেন।

সূত্র জানায়, সর্বশেষ পরিস্থিতিতে জামায়াতের নেতারা বিএনপির সঙ্গে কথা বলে সাহায্য চেয়েছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীও জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলে খোঁজখবর নেন।

বিএনপির সঙ্গে কী কথা হয়েছে জানতে চাইলে কামারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের নেতাদের জামিনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে কি না, উকিলের ব্যবস্থা হয়েছে কি না, এসব বিষয়ে তাঁরা জানতে চেয়েছেন। আমরাও তাঁদের সর্বশেষ অবস্থা জানাচ্ছি।’

এদিকে আজকালের মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এ ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণের জন্য বৈঠক হতে পারে। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, এ ব্যাপারে ব্যক্তিগতভাবে কোনো কিছু বলার অবকাশ নেই। দলের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। বিএনপি এই মিথ্যা মামলার নিন্দা এবং আটক নেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য তাঁদের দলের বৈঠক হতে পারে বলে জানান তিনি।

বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা প্রথম আলোকে বলেন, তিন নেতা গ্রেপ্তারের পরপরই জামায়াতের পক্ষ থেকে বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে চেয়ারপারসনের নির্দেশে মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বিবৃতি দিয়েছেন। আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে মামলার ধরন দেখে এ বিষয়ে যা করার করবে বিএনপি।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, জামায়াত নেতাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। এই গ্রেপ্তার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ ব্যাপারে বিএনপির যা করণীয়, তা নিশ্চয়ই করা হবে।

মকবুল ভারপ্রাপ্ত আমির: সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার বিকেলে গ্রেপ্তারের পর জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী দলের নায়েবে আমির মকবুল আহমাদকে ভারপ্রাপ্ত আমির ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল নিয়োগ করে যান।

জামায়াতের জ্যেষ্ঠ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান গতকাল দুপুরে প্রথম আলোর কাছে আলাপকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

জামায়াতের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দলের আমির ছয় মাসের জন্য দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে তিনি আর সে পদে থাকতে পারবেন না। তবে সেক্রেটারি জেনারেলের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে কিছু বলা নেই।

গঠনতন্ত্রে যা আছে: জামায়াতের গঠনতন্ত্রের ১৫(৬) ধারায় বলা আছে, আমিরে জামায়াত যদি অনূর্ধ্ব ছয় মাসের জন্য দায়িত্ব পালনে অক্ষম হন, আমিরের অক্ষমতাকাল ছয় মাসের বেশি হলে বা আকস্মিকভাবে আমিরের পদ শূন্য হলে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ মজলিসে শুরার অনুমোদন-সাপেক্ষে নায়েবে আমিরদের মধ্য হতে কোনো একজনকে অস্থায়ীভাবে ভারপ্রাপ্ত আমির নিযুক্ত করবে। ভারপ্রাপ্ত আমির ছয় মাসের মধ্যে অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য নতুন আমির নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা যুক্তিযুক্ত সময়সীমা পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত আমিরের কার্যক্রম বাড়াতে পারবে।

এই হিসেবে নিজামী যদি আগামী ছয় মাস কারাগারে থাকেন, তাহলে জামায়াতের নতুন আমির নির্বাচন করতে হবে।

হতভম্ব জামায়াত: জামায়াতের নেতারা বলছেন, মানবতা-বিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হলে দলের নেতাদের ওপর আঘাত আসতে পারে—এমন একটি প্রস্তুতি দলে ছিল। কিন্তু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার মামলায় শীর্ষ নেতারা গ্রেপ্তার হবেন—এটা তাঁদের কল্পনায়ও ছিল না। তাঁদের আশঙ্কা, একের পর এক বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানো হতে পারে তাঁদের। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনগত নানা দিক নিয়ে ভাবছেন দলের নেতারা।

জামায়াতের মামলা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুর রাজ্জাক। তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। এ বিষয়টিও জামায়াতকে বেকায়দায় ফেলেছে। অবশ্য জনাব রাজ্জাকের সঙ্গে কথা বলে কৌশল ঠিক করছে জামায়াত।

আর রাজনৈতিকভাবে কতটা করা যাবে—এ বিষয়ে সন্দিহান জামায়াত। কারণ, কয়েক মাসে পুলিশের বাধার কারণে সারা দেশে কোথাও জামায়াত নির্বিঘ্নে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। সর্বশেষ গত সোমবার বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েও পল্টনে কর্মসূচি পালন করতে আসেনি জামায়াত।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা জামিনের আবেদন করব। আর রাজনৈতিক মোকাবিলা কী আছে? আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব, ততটুকুই করব। পুলিশ কঠোর অবস্থান নিয়ে আছে। হুমকি দিচ্ছে, রাস্তায় নামলেই গ্রেপ্তার করা হবে, পেটানো হবে। এর মধ্যেই কর্মীরা বিক্ষোভ করার চেষ্টা করবে।’

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন