30 June 2010

আদালতের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কাম্য নয়: পুলিশ, ঢাকায় জামায়াতের বিক্ষোভের চেষ্টা পণ্ড


নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ০১-০৭-২০১০

জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ তিন নেতার গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল দলটি। রাজধানীতে গতকাল বুধবার বিকেলে বিক্ষোভ করার ঘোষণা দিলেও কোথায় তা করবে, সে বিষয়ে সাংবাদিকদেরও কিছু জানায়নি জামায়াত। পরে বিজয়নগর পানির ট্যাংকির মোড়ে মিছিল করার চেষ্টা করে তারা। কিন্তু পুলিশের বাধায় তা পণ্ড হয়ে যায়।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মিছিল শুরু করতে চাইলে পুলিশ এসে ধাওয়া দেয়। ধাওয়ার মুখে আমি তিনটা কথা বলে মিছিল শেষ করে দিই।’
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে গত ২১ মার্চ তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব রেজাউল হক জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম খান ও শিবির নেতা আ স ম ইয়াহিয়াকে আসামি করে মামলা করেন। এই মামলায় আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পর গত মঙ্গলবার পুলিশ জামায়াতের আমির, সেক্রেটারি জেনারেল ও নায়েবে আমিরকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ওই রাতে জামায়াত গতকাল সারা দেশে বিক্ষোভ করার ঘোষণা দেয়।

গতকাল বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, জামায়াত নেতাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ আদালতের আদেশ পালন করেছে মাত্র। আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে কোনো রকম বিক্ষোভ করা কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়।

জামায়াত কোথায় বিক্ষোভ করবে, এ বিষয়ে জানতে দুপুর থেকেই ঢাকা মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি আবদুল হালিম ও নুরুল ইসলামের সঙ্গে দফায় দফায় যোগাযোগ করেন সাংবাদিকেরা। তাঁরা বিক্ষোভের সময় ও স্থান বলেননি। বিকেল পাঁচটার দিকে বড় মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গেলে নিরাপত্তারক্ষী সাংবাদিকদের ভেতরে ঢুকতে দেননি। তিনি জানান, সাংবাদিকদের ভেতরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দু-একজন নেতা-কর্মী উপস্থিত থাকলেও কোথায় বিক্ষোভ হবে, সে বিষয়ে তাঁরা কিছুই বলতে পারেননি। জামায়াতের প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি তাসনীম আলমের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনিও কিছু বলতে পারেননি।

বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুজিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিজয়নগর পানির ট্যাংকির মোড় থেকে তাঁরা মিছিল করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পুলিশ ধাওয়া দিলে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়ে তাঁরা সেখান থেকে চলে আসেন।

বক্তব্যে কী বলেছেন জানতে চাইলে মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমি বলেছি, তিনজনকে গ্রেপ্তার করলেও আমাদের আন্দোলন থেমে থাকবে না। হাজারো মানুষ এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

পুলিশের বিজ্ঞপ্তি: ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শহীদুল হকের পক্ষ থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২১ মার্চ তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী, রফিকুল ও ইয়াহিয়াকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে তাঁদের গত ৩০ মার্চ, ২৮ এপ্রিল ও ২৯ জুন আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করেন। ২৯ জুন আসামি ইয়াহিয়া আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে তাঁকে জামিন দেওয়া হয়। কিন্তু অন্য আসামিরা আদালতে হাজির না হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কপি থানায় পৌঁছালে পুলিশ গতকাল (মঙ্গলবার) বিকেলে প্রেসক্লাব এলাকা থেকে নিজামী, আশুলিয়া থেকে মুজাহিদ ও শহীদবাগ থেকে সাঈদীকে গ্রেপ্তার করে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পুলিশ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল করে গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের আদালতে প্রেরণ করার আইনগত বাধ্যবাধকতা পালন করেছে মাত্র। তাই এই গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের বিক্ষোভ সমাবেশ কোনো অবস্থায়ই কাম্য নয়। আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করা ও অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্য প্রদান আদালত ও দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা ও অবজ্ঞা প্রদর্শনের শামিল। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের ফলে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না হয়, সে বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ সবার সহযোগিতা কামনা করছে।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন