24 June 2010

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার: বিদেশে প্রচারণায় নেমেছে জামায়াত, সরকার সতর্ক



শ্যামল সরকার | তারিখ: ২৫-০৬-২০১০


একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করতে জামায়াতে ইসলামী বহির্বিশ্বে নানামুখী তর‌্যাপরতা শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছে সরকার।

প্রাথমিকভাবে তারা ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ত্রুটিপূর্ণ এবং এ আইনে বিচার হলে ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার রক্ষা হবে না বলে প্রচারণা চালাচ্ছে।

এ অবস্থায় সরকার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী কামাল হোসেন, আমীর-উল ইসলাম ও রোকনউদ্দিন মাহমুদের সহায়তা নিচ্ছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিষয়ে সরকারকে এখন বাড়তি সতর্কতা নিতে হচ্ছে।

আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ প্রথম আলোকে জানান, সম্প্রতি আইন কমিশনের কার্যালয়ে কামাল হোসেন, আমীর-উল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদসহ তাঁরা আইনটির চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন। সবাই একমত হয়েছেন, সংশোধন করার পর আইনে এখন কোনো ত্রুটি নেই। এতে মানবাধিকার সুরক্ষাসহ ন্যায়বিচারের সব সুযোগ রয়েছে বলে তাঁরা অভিমত দিয়েছেন। যুদ্ধাপরাধের বিচারে এসব বিশিষ্ট আইনজীবী সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতেও রাজি আছেন বলে জানান আইনমন্ত্রী।

যোগাযোগ করা হলে কামাল হোসেন গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৈঠকে তিনি উপস্থিত ছিলেন। ১৯৭৩ সালের আইনের দক্ষ ও নিরপেক্ষ প্রয়োগের বিষয়ে তিনি গুরুত্বারোপ করেন। অপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে যাতে পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপার না ঘটে, সে বিষয়ে সজাগ থাকতেও তিনি ওই বৈঠকে অভিমত দেন।
সংশ্লিষ্ট সরকারি সূত্র জানায়, জামায়াতের সহযোগিতায় গত ২৩ জুন যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে একটি সেমিনার হয়। যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসে অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ অন হিউম্যান রাইটসের (এপিজিএইচআর) নামে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়। ওই সেমিনারের উদ্দেশ্য নিয়ে খোদ যুক্তরাজ্যেই এখন বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। বেরিয়ে এসেছে এই সেমিনারের অন্যতম উদ্যোক্তা ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা কামাল সিকদার ও চৌধুরী মঈনউদ্দিন। মঈনউদ্দিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ রয়েছে। তিনি যুক্তরাজ্যে নিষিদ্ধ ইসলামি ফোরাম অব ইউরোপের প্রতিষ্ঠাতা।

সূত্র জানায়, এসব উদ্যোগের পেছনে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে গঠিত প্যানেলের প্রধান আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক সক্রিয় রয়েছেন। তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। আবদুর রাজ্জাকের আইন পেশার কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে গত রাতে জানানো হয়, গত ২০ জুন তিনি আমেরিকা গেছেন এবং ৪ জুলাই তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

সরকারি সূত্র স্বীকারও করেছে, এ অবস্থায় যুক্তরাজ্যসহ মধ্যপ্রাচ্যসহ পশ্চিমা দেশ ও মুসলিম দেশসমূহে সরকারের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরতে পক্ষে রোকনউদ্দিন মাহমুদ এবং আমীর-উল ইসলামকে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা এখন যুক্তরাজ্যে আছেন। সেসব দেশে তাঁরা কী বক্তব্য দেবেন, তা ঠিক করার কাজে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, কামাল হোসেন, রোকনউদ্দিন মাহমুদ, আমীর-উল ইসলাম ও ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন যুক্ত ছিলেন।

জানা যায়, সরকারের এই বক্তব্য প্রচারে বিদেশে সব বাংলাদেশি হাইকমিশন এবং দূতাবাসকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সব হাইকমিশন ও দূতাবাসকে এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, জামায়াতে ইসলামী যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার করাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে প্রচারণা চালাচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তারা মূলত ১৯৭৩ সালের আইনটি ত্রুটিপূর্ণ বলে প্রচার করছে। সরকারও প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। তিনি বলেন, সরকার এখন আইনের ব্যাখ্যাসহ বিভিন্ন তথ্যচিত্র ও বক্তব্য প্রচারের কার্যক্রম চালাচ্ছে। বিশিষ্ট আইনজীবীদের এ কাজে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক: এদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত তদন্ত সংস্থা, আইনজীবী প্যানেলের সদস্যদের নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে পর্যালোচনা বৈঠক হয়েছে। আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ এতে সভাপতিত্ব করেন। আইন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আইন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব আনোয়ারুল হকসহ তদন্ত সংস্থা ও আইনজীবী প্যানেলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এখন থেকে আইন প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কমিটি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখবে। তিনি প্রয়োজনীয় বিষয়ে কমিটির কাছে সুপারিশ করে তা সমাধানের উদ্যোগ নেবেন।

আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিচারের পথে অনেক অগ্রগতি হলেও তা তদন্তের স্বার্থে বলা যাবে না। তদন্ত সংস্থা, আইনজীবী প্যানেল ও বিচারকদের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা, জনবল ও সরঞ্জাম দ্রুত সরবরাহ করা হবে বলেও জানান তিনি। আরেক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, দেরি হলেও এ সরকারের মেয়াদেই মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হবে। সরকার সবকিছু স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় শেষ করতে চায়।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন