রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি | তারিখ: ১০-০৬-২০১০
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে গত মঙ্গলবার রাতে ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা হঠাৎ মিছিল বের করেন। এ সময় তাঁরা গ্রেপ্তারকৃত জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেন। এর পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও বিনোদপুর বাজার এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কর্মী ফারুক হোসেন খুন, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর থেকে শিবির নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে ছিলেন। মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ তাঁরা ক্যাম্পাসে এসে মিছিল বের করায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ওই মিছিলের প্রতিবাদে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ওই রাতেই বিনোদপুর বাজারে কয়েক দফা মিছিল ও সমাবেশ করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত পৌনে আটটার দিকে ছাত্রশিবিরের দুই শতাধিক নেতা-কর্মী বিনোদপুর বাজারে মিছিল বের করেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত সাধারণ লোকজন আতঙ্কে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। শিবিরের ঝটিকা মিছিলটি বিনোদপুর বাজার প্রদক্ষিণ শেষে মসজিদের কাছে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে এক শিবিরকর্মী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাতের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেন। দাবি মানা না হলে বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা ছাত্রশিবিরের ওই কর্মীর নাম জানাতে পারেননি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, দ্রুত সমাবেশ শেষ করে শিবির নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে বিনোদপুর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ এসে ছাত্রশিবির-নিয়ন্ত্রিত স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার, মহানন্দাসহ বিভিন্ন ছাত্রাবাসে তল্লাশি চালায়। তবে গতকাল বুধবার দুপুরে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আউয়াল কবির ও সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম জানান, যেকোনো মূল্যে জামায়াত-শিবির চক্রকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করা হবে। ছাত্রশিবির যেন কোনোভাবেই ক্যাম্পাসে ঢুকতে না পারে, সে লক্ষ্যে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন। ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁদের কাউকেই পাওয়া যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর চৌধুরী মেহাম্মদ জাকারিয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘ছাত্রশিবিরের জঙ্গি ও ঝটিকা মিছিলের বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা জোরদারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের বলেন, ‘মিছিলের খবর পাওয়ার পরপরই ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়।’
গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়ে ছাত্রলীগের কর্মী ফারুক হোসেনকে খুন করেন। ওই রাতে ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা ছাত্রলীগের চার কর্মীর হাত ও পায়ের রগ কেটে দেন। সশস্ত্র ওই হামলায় পুলিশসহ ছাত্রলীগের অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হন। এসব ঘটনায় নগরের মতিহার থানায় দায়ের করা ১৪টি মামলায় পুলিশ রাজশাহীতে জামায়াত-শিবিরের দেড় শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে। ওই ঘটনার পর থেকে বাকিরা আত্মগোপনে ছিলেন।
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন