নিজস্ব প্রতিবেদক
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযম নিষিদ্ধ ঘোষিত জামা'আতুল মুজাহিদীনের (জেএমবি) প্রধান সাইদুর রহমান ওরফে জাফরকে জামায়াত না ছাড়ার অনুরোধ করেন। জামায়াতের রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে চাইলে গোলাম আযম তাকে রাজধানীর মগবাজারে নিজ বাসভবনে ডেকে পাঠান। তিনি সাইদুরকে জামায়াতের রাজনীতিতে সক্রিয় থেকে ইসলামী 'হুকুমত' কায়েম করার আহ্বান জানান। ২০০৫ সালের প্রথম দিকের ঘটনা এটি।
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানিয়েছে সাইদুর রহমান। গতকাল শুক্রবার ছিল রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র মতে, জিজ্ঞাসাবাদে সাইদুর বলেছে, জামায়াতের কিছু কর্মকাণ্ডের জন্য সে দলের প্রতি ক্ষুব্ধ হয় এবং একপর্যায়ে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু জামায়াত থেকে বারবারই তাকে দলের কাজে সক্রিয় থাকার অনুরোধ জানানো হয়। হবিগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমিরের পদ ছাড়ার পর সাইদুর রহমান কিছু দিন ব্যবসাও করে। পরে তাকে ডেকে নিয়ে জামায়াত সমর্থিত 'ওলামা-মাশায়েখ কমিটি'র জন্য কাজ করতে বলা হয়। ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রকাশ্যে এই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিল সাইদুর রহমান।
জিজ্ঞাসাবাদে জেএমবিপ্রধান আরো বলেছে, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে জড়িত হওয়ার মাধ্যমে সে 'জিহাদ'-এর মাধ্যমে 'ইসলামী হুকুমত কায়েম' প্রতিষ্ঠার দীক্ষা পায়। সাইদুর বলেছে, ঘরোয়া কর্মসূচিসহ প্রত্যেকটি আলোচনা সভায় শিবিরকর্মীদের জিহাদের স্বপ্ন দেখানো হয়। তার মতে, ইসলামী ছাত্রশিবিরই দেশে তরুণদের 'জিহাদে' উদ্বুদ্ধ করে। ধর্মীয় উগ্রবাদ বা মৌলবাদী বললে জামায়াত-শিবিরের নাম সবার আগে আনতে হবে বলেও জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে সাইদুর।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, দ্বিতীয় দিনের জিজ্ঞাসাবাদে সাইদুর জামায়াত-শিবিরের প্রতি ব্যাপক বিষোদ্গার করেছে। সাইদুর রহমান বলেছে, শিবিরই কিশোর ও তরুণদের বিপথে আনে। তদের এমনভাবে জিহাদের স্বপ্ন দেখানো হয় যেন কিছু দিনের মধ্যে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা হয়ে যাবে। পরে স্বপ্ন ফিঁকে হয়ে গেলে তরুণদের মাথা বিগড়ে যায়। জেএমবিতে এ ধরনের অনেক কর্মী আছে বলে সাইদুর দাবি করে।
সূত্র মতে, সাইদুরের ছেলে বাশার এখন জেএমবির নীতিনির্ধারকদের একজন। বাশারের ব্যাপারে গোয়েন্দারা জানতে চাইলে সাইদুর দাবি করে, ছেলের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে তার কোনো যোগাযোগ নেই। তার আরেক ছেলে শামীম বর্তমানে কারাগারে।
এদিকে গতকাল শুক্রবার সকালে ডিএমপি সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার এ কে এম শহীদুল হক বলেন, জেএমবি বা ধর্মীয় জঙ্গি সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী ছিল। এসব জঙ্গি সংগঠনের অর্থ সহায়তা করে কিছু প্রবাসী। তারা ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে বসবাস করেন। তাদের পাঠানো অর্থ এ দেশে অবস্থানকারী জঙ্গিদের কাছে হুন্ডির মাধ্যমে আসে। এভাবে অর্থ সহায়তাদানকারীদের বেশির ভাগই জঙ্গিদের অত্দীয়স্বজন বা সমর্থক। এ ক্ষেত্রে অন্য কোনো রাষ্ট্র বা বিদেশি সংস্থা জঙ্গি কার্যক্রমের জন্য অর্থ পাঠায় না বলেও ডিএমপি কমিশনার দাবি করেন। আর পাঠালেও ওই অর্থের পরিমাণ খুব বেশি নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শহীদুল হক বলেন, জেএমবিতে মহিলা সদস্য রয়েছে। তারা আত্দঘাতী দলেরও সদস্য। এ ব্যাপারে সাইদুরকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে।
খবরের লিংক
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন