ওয়াসেক বিল্লাহ্ ও তানভীর সোহেল | তারিখ: ২৯-০৫-২০১০
এককভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। তাই আপাতত আন্দোলন কর্মসূচি গ্রহণ ও স্থানীয় নির্বাচন বা উপনির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নেবে না দলটি। জোটের আরেক শরিক জামায়াতে ইসলামীও কৌশলগত কারণে একলা চলার নীতি নিয়েছে।
চারদলীয় জোটের প্রধান দুই শরিকের এ অবস্থানে অন্য ছোট দল ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) অনেকটা হতাশ। এ দলগুলো চায়, চার দল জোটগতভাবেই আন্দোলন কর্মসূচি ও নির্বাচনে অংশ নিক।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। তাই জোটবদ্ধ না হয়ে এককভাবে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আপাতত নির্বাচন ও আন্দোলন কর্মসূচি বিএনপি একাই করবে।’
সদ্য সমাপ্ত ভোলা-৩ উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেনি জামায়াত। বিএনপির আহূত হরতালের প্রতিও সমর্থন জানায়নি তারা। বরং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে রীতিমতো জোটের অন্য তিন শরিককে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছে জামায়াত। জামায়াতের সূত্রগুলো জানিয়েছে, ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্যের দিকে যেতে চায় তারা। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাকের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমাদ আবদুল কাদের জনাব মুজাহিদের সঙ্গে তাঁর কথা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনি বলেন, জামায়াতের নেতাকে তিনি কোনো কথা দেননি।
বিএনপির একলা চলার সিদ্ধান্ত: বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, চার দল একটি নির্বাচনী জোট। এখন যেহেতু নির্বাচনের সময় নয়, তাই জোটও থাকছে না। জোটের প্রতিটি দল এককভাবে পরিচালিত হবে। আনুষ্ঠানিকভাবে জোট এখনো ভেঙেও দেওয়া হয়নি, আবার জোট সক্রিয়ও নেই। তাই জোটের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা এখনই বলার সময় আসেনি।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। নিজামী জোটকে শক্তিশালী করে একসঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনার পরামর্শ দেন। কিন্তু খালেদা জিয়া তখন রাজি হননি।
জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, চারদলীয় জোট ভেঙে দেওয়া হয়নি। তাই জোট আছে, আবার নেইও। কবে নাগাদ বিএনপি জোটবদ্ধভাবে রাজনীতিতে নামবে, তা সময়ই বলে যাবে।
বিএনপির সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়টি গত সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল বলে বিএনপি মনে করে। তাই জামায়াতের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব রেখে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে দলটি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি বিষয়ে সরকারের ব্যর্থতা ও যুদ্ধাপরাধের বিচার-প্রক্রিয়ার বিলম্বের কারণে সরকারের প্রতি আস্থা কমে আসছে বলে বিএনপি মনে করে। এসব দিক বিবেচনা করে বিএনপি আগামী ৫ জুন জামায়াতের সঙ্গে আলোচনায় বসবে। তবে এ আলোচনার মাধ্যমে চারদলীয় জোট সক্রিয় হবে, তা বলা যাবে না।
কৌশলগত কারণে আলাদা থাকতে চায় জামায়াত: জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের একজন সদস্য বলেছেন, আপাতত বিএনপির সঙ্গে বেশি মেলামেশা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁর দল। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপাতত এ বিষয়টি নিয়ে আমরা কথা বলতে চাই না।’ অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকারের সঙ্গে জামায়াতের একটি অংশ সমঝোতা করতে চাইছে। এ অবস্থায় বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ আন্দোলন করে সরকারকে চটাতে চায় না তারা।
জামায়াতের জ্যেষ্ঠ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান বলেন, ‘আমি মনে করি, বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এই চারদলীয় জোট একটি স্বাভাবিক ঐক্য। এ নিয়ে নেতৃত্ব পর্যায়ে যে যা-ই ভাবতে পারে, তবে জোটের কোটি কোটি সমর্থক এমনটি মনে করে না।’ তিনি জানান, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দেড় বছরেও চারদলীয় জোটের কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়নি। তবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে যোগাযোগ আছে।
অন্য শরিকেরা যা বলছে: জোটের আরেক শরিক ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আবদুল নেজামী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত চারদলীয় জোটের কোনো কর্মকাণ্ড নেই। তবে ম্যাডাম আমাদের ডেকে বিএনপির কর্মসূচিতে অংশ নিতে বলেছেন।’
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমাদ আবদুল কাদের বলেন, ‘জোট না আছে, না নাই অবস্থায়।’
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) সভাপতি আন্দালিব রহমান বলেন, ‘আমরা আপাতত দল গোছানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছি। জোটকে সক্রিয় করার ব্যাপারে কোনো কথাবার্তা হয়নি।’
ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে এক করার চেষ্টা জামায়াতের: বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল থেকে জামায়াত কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ার চেষ্টা করছে। জামায়াত মনে করছে, সব ধর্মীয় দল এক হলে তাদের একটি বড় শক্তি হবে। সে ক্ষেত্রে রাজনীতিতে দরকষাকষিতে বিশেষ সুবিধা পাবে তারা।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা দাবি করেন, তাঁদের উদ্যোগের অনেকটা অগ্রগতি হয়েছে।
তবে ধর্মভিত্তিক অন্য দলগুলোর সঙ্গে জামায়াতের আদর্শিক বিরোধ দীর্ঘদিনের। দলগুলো জামায়াতকে ইসলামি দল বলে মনেই করে না। দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে আহকামে শরীআহ্ হেফাজত কমিটি নামে একটি সংগঠন তৈরি করে কাজ করছে জামায়াত।
কমিটির মহাসচিব আবদুস সবুর মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ডানপন্থী প্রায় সব দলের সঙ্গে তাঁদের কথা হয়েছে। সবাই একসঙ্গে কিছু করার চেষ্টা চলছে।
খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ্ খান প্রথম আলোকে বলেছেন, আহকামে শরীয়াহ্ হেফাজত কমিটি যে জামায়াতের—এটা তাঁরা জানতেন না।
খবরের লিংক
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন