28 May 2010

জামায়াতের সমাবেশে ১৪৪ ধারা ইউএনও, ওসির ওপর হামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া | তারিখ: ২৯-০৫-২০১০


বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার সাজাপুর ফুলতলা মাদ্রাসার মাঠে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেওয়ান আবদুস সামাদ ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিছুর রহমানের ওপর হামলা হয়েছে। ইউএনও সামাদ গতকাল শুক্রবার জামায়াতের সমাবেশে ১৪৪ ধারা জারি করলে জামায়াতে ইসলামীর বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা এ ঘটনা ঘটান বলে জানা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বগুড়া জেলা জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা আবদুর রহমান ফকীর তিন বছর আগে মারা যান। তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করে গতকাল ফুলতলা মাদ্রাসার মাঠে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে রাজনৈতিক সমাবেশের আদলে বক্তৃতার মঞ্চ তৈরি ও ব্যানার টানানো হয়। ব্যানারে প্রধান অতিথি হিসেবে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও বিশেষ অতিথি হিসেবে দলের জেলা কমিটির আমির শাহাবুদ্দিনের নাম লেখা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকেই জামায়াতের নেতা-কর্মীরা ওই মাঠে জড়ো হতে শুরু করেন। দুপুর সাড়ে ১২টায় আলী আহসান মুজাহিদ অনুষ্ঠানস্থলে আসেন। এ খবরে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ তৎপর হয়ে ওঠে। দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে মুজাহিদ মঞ্চে উঠে বক্তৃতা দিতে শুরু করেন। এর পরপরই শাজাহানপুরের ইউএনও দ্রুত মঞ্চে উঠে মাঠে ১৪৪ ধারা জারির কথা জানান এবং মুজাহিদকে বক্তব্য না দিতে অনুরোধ করেন। মুজাহিদ মঞ্চ থেকে নেমে যাওয়ার পরপরই ইউএনও মাইক হাতে নিয়ে সেখানে ১৪৪ ধারা জারির কথা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘দোয়া মাহফিলের নামে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সমাবেশ করার কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। তাই এই মুহূর্তে ১৪৪ ধারা জারি করা হলো।’

ইউএনও সমাবেশে আসা জামায়াতের সাত-আট হাজার নেতা-কর্মীকে মাঠ ছাড়ার নির্দেশ দেন। তখন মঞ্চে উপস্থিত জামায়াতের স্থানীয় নেতারা জানান, জুমার নামাজ আদায় না করা পর্যন্ত তাঁরা মাঠ ছাড়বেন না। ইউএনও এতে আপত্তি জানিয়ে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের পাশের মসজিদে নামাজ পড়ার অনুরোধ করেন। তাঁর ওই বক্তব্যে মাঠে উপস্থিত জামায়াতের কয়েক শ নেতা-কর্মী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তাঁরা মঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকা ইউএনওর দিকে তেড়ে যান। একপর্যায়ে মঞ্চে থাকা দুপচাঁচিয়া উপজেলা জামায়াতের আমির ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল গনি মণ্ডল ইউএনওকে নামিয়ে সমাবেশের বাইরে নেওয়ার চেষ্টা করেন। আর তখনই জামায়াতের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা ইউএনওকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারেন। অবস্থা বেগতিক দেখে সঙ্গে থাকা শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিছুর রহমানসহ পুলিশ কর্মকর্তারা ইউএনওকে উদ্ধার করে দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। জামায়াতের কর্মীরা তখন ইউএনও এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে প্রচুর ইট নিক্ষেপ করেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা জামায়াতের সদস্য ও শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইয়াছিন আলীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে জানান। পরে তাঁর ব্যক্তিগত মুঠোফোন ও বাসার ফোনে কয়েকবার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

জামায়াতের বগুড়া জেলা শাখার আমির শাহাবুদ্দিন ইউএনওর ওপর হামলার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘তাঁকে (ইউএনও) কেউ মারেননি। জুমার নামাজের প্রস্তুতির মুহূর্তে ১৪৪ ধারা জারি করায় মুসল্লিরা কিছুটা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিলেন। পরে সেখানে নামাজ পড়ে তাঁরা শান্তভাবেই চলে যান।’
একাধিকবার চেষ্টা করেও শাজাহানপুরের ইউএনও দেওয়ান আবদুস সামাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে ইউএনওর সঙ্গে থাকা শাজাহানপুর থানার ওসি আনিসুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

ওসি বলেন, ‘আমরা জানতাম সেখানে জামায়াতের সাবেক নেতার দোয়া মাহফিল হবে। কিন্তু মাঠে বিশাল সমাবেশ করা হবে এবং সেখানে দলের সেক্রেটারি জেনারেল উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেবেন, এ বিষয়টি জানানো হয়নি এবং কোনো অনুমতিও নেওয়া হয়নি। বিষয়টি জানার পর ইউএনওকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে গিয়ে সমাবেশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। একপর্যায়ে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা আমাদের দুজনের ওপর চড়াও হয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন।’ ওসি বলেন, ‘জামায়াত দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানের নামে গোপনে রাজনৈতিক সমাবেশ করতে চেয়েছিল। এ বিষয়ে মামলা করা হবে।’


খবরের লিংক

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন