29 May 2010

জামায়াতের একাধিক শুরা সদস্য জেএমবি করেন : সাইদুর

নিজস্ব প্রতিবেদক

জামায়াতের একাধিক শুরা সদস্য নিষিদ্ধ ঘোষিত জামা'আতুল মুজাহিদীনের (জেএমবি) সঙ্গে জড়িত আছেন। একই সঙ্গে তাঁরা জামায়াত ও জেএমবির রাজনীতি করছেন। নেপথ্যে থেকে যোগাযোগ রেখে নানাভাবে জেএমবিকে সহযোগিতা করেন এসব নেতা। দেশের বাইরে থেকে যারা মাঝে মধ্যে জেএমবিকে অর্থ সহায়তা করেন তাঁদের সবাই জামায়াতে ইসলামী কর্মী-সমর্থক বলেই পরিচিত। বিদেশে থেকেই স্বেচ্ছায় যোগাযোগ করে জেএমবিকে অর্থ সহায়তা পাঠিয়ে থাকেন তাঁরা। বর্তমানে জেএমবির তাত্তি্বক গুরু মজিবুর রহমান। তবে তিনি দেশের বাইরে আছেন। তিনিও এক সময় জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। জেএমবি জামায়াতের 'বি' টিমের মতোই চলে আসছিল। জিজ্ঞাসাবাদে জেএমবি প্রধান সাইদুর রহমান এসব তথ্য দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।

গতকাল শনিবার ছিল সাইদুরের রিমান্ডের তৃতীয় দিন। পুলিশের বিশেষ একটি দল সাইদুর ও তার সহযোগীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মনিরুল ইসলাম গতকাল কালের কণ্ঠকে জানান, জেএমবি প্রধান সাইদুর জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্যই দিচ্ছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে।

সূত্র জানায়, রিমান্ডে আনার পর থেকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও সাইদুর একবারের জন্য মনোবল হারাচ্ছে না। তার বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে দায়েরকৃত বিস্ফোরক আইনে আরো পাঁচটি মামলার খোঁজ পাওয়া গেছে। প্রথম দফায় রিমান্ড শেষ হলে ওইসব মামলায় আরো রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে তাকে। ফলে প্রথম দফায় অনেকটা গল্পের ছলেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বর্তমানে জেএমবির সাংগঠনিক কাঠামো, নিয়োগ, অর্থ ও বিস্ফোরকের উৎস, নেপথ্য নায়ক কারা ইত্যাদি বিষয় সাইদুরের কাছ থেকে জানার চেষ্টা চলছে।

জিজ্ঞাসাবাদে সাইদুর বলেছে, জামায়াত ও জেএমবির সাংগঠনিক কাঠামো অভিন্ন। জেএমবি ক্যাডার ভিত্তিক একটি সংগঠন। সমর্থক থেকে যাচাই-বাছাই শেষে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দিয়ে নেতৃত্বে নিয়ে আসা হয়। এসব ধারা জামায়াতকে অনুসরণ করেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। সমর্থক থেকে শুরুর পর ১০টি ধাপ পার হলে কর্মীদের অপারেশনে পাঠানো হয়।

সূত্র জানায়, সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের আগে কুমিল্লায় বেগম খালেদা জিয়ার সমাবেশস্থল থেকে যেসব বোমা উদ্ধার হয়েছিল ওইসব জেএমবির পরিকল্পনায়ই করা হয়েছিল। মূলত 'সামান্য রক্তপাতহীন' একটি হামলার মাধ্যমে নির্বাচনের বিরোধিতার জানান দেওয়াই জেএমবির লক্ষ্য ছিল।

জিজ্ঞাসাবাদে সাইদুর জামায়াতের সঙ্গে জেএমবির সম্পর্কের বর্ণনা করতে গিয়ে দাবি করে, দেশব্যাপী সিরিজ বোমা (১৭ আগস্ট) বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেপ্তার হয়েছিল সাতক্ষীরা আদালতপাড়ায় হামলায় অংশগ্রহণকারী দুজন। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে একজন ওই জেলার একটি উপজেলা জামায়াতের এক নেতার ছেলেও ছিল। ওই দুজনকে গ্রেপ্তারের সূত্র ধরেই ১৭ আগস্ট ঘটনার রহস্য খুব তাড়াতাড়ি উন্মোচিত হয়। ধড়া পড়ার পর সে (সাইদুর) প্রথম জানতে পারে ওই এলাকার হামলাকারীর রাজনৈতিক পরিচয়। তার মতে জেএমবিতে জামায়াত শিবিরের ধারা শায়খ আবদুর রহমান ও বাংলা ভাইয়ের আমল থেকে শুরু হয়েছিল_যা এখনো চলছে।


সাইদুরকে গ্রেপ্তার করায় যুক্তরাষ্ট্রের অভিনন্দন

ইউএনবি জানায়, জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ_জেএমবির প্রধান মাওলানা সাইদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করায় বাংলাদেশ সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মন্ত্রী রবার্ট ও ব্লেক জুনিয়র শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, 'জেএমবি নেতা সাইদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করায় বাংলাদেশ সরকারকে আমরা অভিনন্দন জানাই।'

বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িকতার চর্চায় জেএমবিকে হুমকি আখ্যায়িত করে ব্লেক বলেন, সংগঠনটি বাংলাদেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলাসহ বিচারক, পুলিশ ও বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় বহু লোক হতাহত হয়েছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের ধরতে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাম্প্রতিক দিনগুলোতে যে সাফল্য দেখিয়েছে সাইদুর রহমানের গ্রেপ্তার তার অন্যতম।
প্রসঙ্গত, নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবির আমির সাইদুরকে ২৩ মে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আদালতের অনুমতি নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

সন্ত্রাস দমন এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় ওয়াশিংটন আগামীতেও বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে চায় বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেন ব্লেক।


খবরের লিংক

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন