11 May 2010

কালান্তরের কড়চাঃ ব্রিটেনের নির্বাচনেও জামায়াতপন্থী ও তাদের বর্ণবাদী দোসরদের ভরাডুবি

আবদুল গাফফার চৌধুরী

ইংরেজিতে একটা কথা আছে, 'সিলভার লাইনিং ইন দ্য ডার্কেস্ট ক্লাউড' (ঘন কালো মেঘের কোনায় রুপালি আলোর রেখা)। প্রবাদটি ব্রিটেনের এবারের নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে প্রযোজ্য বলে অনেকেই মনে করন। যাঁরা আশা করেছিলেন, নির্বাচনে লেবার পার্টির সম্ভাব্য পরাজয় সত্ত্বেও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি বা লিব ডেম এবার পার্লামেন্টে অধিক আসন পাবে এবং লেবারের সঙ্গে কোয়ালিশন করে সরকার গঠন দ্বারা টোরিদের ক্ষমতায় আসা ঠেকাবে, তাঁরা আশাহত হয়েছেন। লিব ডেম নির্বাচনে ভালো করতে পারেনি। তবে হাঙ পার্লামেন্ট হওয়ায় দুটি বড় দলের সঙ্গে কোয়ালিশন করার ব্যাপারে তাদের দরকষাকষির শক্তি বেড়েছে।

আজ ১০ মে (সোমবার) সকাল ৮টায় বসে যখন এই লেখা লিখছি, তখন পর্যন্ত জানি, লিব ডেমের সঙ্গে টোরিদের কোনো ডিল এখনো হয়নি। তবে আলোচনা চলছে। ডিল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। যদি ডিল হয় এবং টোরি-লিব ডেম সরকার গঠিত হয়, তাহলে একটাই সান্ত্বনা হবে, সরকারে উদারনৈতিক লিব ডেমের অবস্থানের ফলে নতুন টোরি প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন হয়তো রাথলেস থ্যাচারাইট পলিসি বা কঠোর থ্যাচার নীতিতে পুরোপুরি ফিরে যেতে পারবেন না।

যদি তিনি পারেন তাহলে ব্রিটেন ও ইউরোপের জন্য চরম দুর্দিন ঘনিয়ে আসবে। সাম্প্রতিক মহামন্দা থেকে রিকভারির জন্য ব্রাউন ফর্মুলা অনুযায়ী ইউরোপ ধীরে হলেও যেভাবে আগাচ্ছে, তা হয়তো ব্যাহত হবে। আর তা হলে বর্তমান গ্রিক ট্র্যাজেডির ছায়া সারা ইউরোপে ছড়াবে। এই আশঙ্কার ঘনকৃষ্ণ মেঘের কিনারে ক্ষীণ রুপালি আশার রেখা হচ্ছে সম্ভাব্য টোরি সরকারে লিব ডেমের সম্ভাব্য উপস্থিতি।

ব্রিটেনের বর্তমান নির্বাচনী ফলাফলে আরেকটি সিলভার লাইনিং আছে। তা হলো, বাঙালি অধ্যুষিত বৃহত্তর পূর্ব লন্ডনের বিভিন্ন কেন্দ্রে বিশেষ করে জামায়াতের শক্তিশালী ঘাঁটি টাওয়ার হ্যামলেটস ও নিউহ্যাম এলাকায় ছদ্মবেশী বাংলাদেশি জামায়াত প্রার্থীদের পার্লামেন্ট ও পুরসভাগুলোর (কাউন্সিল) নির্বাচনে পরাজয় ও সম্পূর্ণ ভরাডুবি। আবার ব্রিটেনের কট্টর বর্ণবাদী দল বিএনপি (ব্রিটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি) এ নির্বাচনে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তাদের নেতা নিক গ্রিফিন শুধু পরাজিত হননি, পরাজিত প্রার্থী হিসেবে তৃতীয় স্থানে নেমে গেছেন। একই অবস্থা হয়েছে এককালের বিপুল জনপ্রিয়তার অধিকারী এবং ব্রিটেনে বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি জামায়াতপন্থীদের বর্তমান নেতা হিসেবে পরিচিত জর্জ গ্যালাওয়ের (রেসপেক্ট পার্টির নেতা)। তিনি এবার প্রগতিশীল লেবার প্রার্থী জিম ফিজপেট্রিকের কাছে গোহারা হেরেছেন। পরাজিত প্রার্থী হিসেবে তাঁর স্থানও নিক গ্রিফিনের মতো তৃতীয় স্থানে।

লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকা ব্রিটেনের এবারের নির্বাচনে মৌলবাদী ও বর্ণবাদী ফ্যাসিস্টদের এ পরাজয়ের খবরের হেডিং দিয়েছে 'Council and Parliamentary defeats for far right parties' (পার্লামেন্ট ও কাউন্সিল নির্বাচনে চরম ডানপন্থী দলগুলোর পরাজয়)। লেবার পার্টির বামপন্থী এমপি হিসেবে ইরাকযুদ্ধের তীব্র বিরোধিতা করে যে জর্জ গ্যালোয়ে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন এবং লেবার পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর দলত্যাগ করে রেসপেক্ট পার্টি নামে নতুন দল গঠন করে আগের নির্বাচনে বাঙালি অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনেই লেবার দলের সিটিং এমপি ও প্রার্থী উনা কিংকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন, এবারের নির্বাচনে তাঁর শোচনীয় পরাজয় কাউকে বিস্মিত করেনি। তিনি গত কয়েক বছর ধরেই তাঁর প্রগতিশীল বাম চরিত্র হারিয়ে লন্ডনের বাংলাদেশী জামায়াতপন্থী ও তাদের সমমনা উগ্র মৌলবাদী দলগুলোর সঙ্গে ভিড়ে গিয়ে তাদের সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন।

বাঙালি অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনের ধর্মীয় উগ্র মৌলবাদীদের_বিশেষ করে বাংলাদেশের জামায়াতি ও জামায়াতপন্থীদের অভ্যুত্থান কোনো আকস্মিক ব্যাপার নয়। এটা পূর্বপরিকল্পিত এবং বাংলাদেশ, সৌদি আরব ও পাকিস্তান থেকে পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদারদের পরাজয়ের পর মইনউদ্দীনসহ কয়েকজন প্রধান বাংলাদেশি যুদ্ধাপরাধী ও ঘাতক ব্রিটেনে পালিয়ে আসে এবং বিভিন্ন মসজিদে ধর্মপ্রচারকারী পরিচয়ের আড়ালে আশ্রয় গ্রহণ করে জামায়াতি রাজনীতির কর্মকাণ্ড চালাতে থাকে।
এদের জামায়াতি পরিচয় যাতে ধরা না পড়ে, সে জন্য এরা দাওয়াতুল ইসলাম এবং এ ধরনের বিভিন্ন নামে সংগঠন গড়ে তোলে। বলা হতে থাকে_এগুলো রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। কোনো কোনোটির উদ্দেশ্য নিছক ধর্ম প্রচার। ফলে ব্রিটিশ সরকারের সমর্থন ও সাহায্যও এরা আদায় করতে সমর্থ হয়। এরা তাদের প্রধান ঘাঁটি স্থাপন করে পূর্ব লন্ডনের হোয়াইট চ্যাপেলে ইস্ট লন্ডন মসজিদে এবং সেখানে লন্ডন মুসলিম সেন্টার (এলএমসি) নামে একটি শক্তিশালী কেন্দ্র গড়ে তোলে। এ কেন্দ্রে তারা প্রিন্স চার্লস এবং কেন লিভিংস্টোনের মতো লন্ডনের সাবেক জনপ্রিয় মেয়রকে আমন্ত্রণ জানিয়ে এনে তাঁদের কাছ থেকে সার্টিফিকেট আদায়ে সক্ষম হয়। প্রিন্স চার্লস এবং কেন লিভিংস্টোন দুজনেই লন্ডন মুসলিম সেন্টারে এসেছিলেন এই সরল বিশ্বাসে যে এটি একটি এথনিক রিলিজিয়াস সেন্টার এবং এথনিক মুসলিম কমিউনিটির সামাজিক উন্নয়নই এদের লক্ষ্য। পরে তাঁদের এই ধারণা দূর হয়।
পূর্ব লন্ডনে ছদ্মবেশী জামায়াতিদের এই প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়েছিল সরলপ্রাণ ধর্মভীরু অসংখ্য বাংলাদেশি পরিবার। তাদের নারী-পুরুষ, এমনকি তরুণ-তরুণীরাও এই সেন্টারে যাতায়াত শুরু করে এবং সেন্টারের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ে। এ কর্মকাণ্ড পরিচালনার অর্থ ব্যয়ের প্রধান উৎস ছিল পেট্রোডলার। বাংলাদেশের বহু পরিবার, বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের নানা ধরনের আর্থিক সাহায্যের প্রলোভন দেখিয়ে, চাকরির ব্যবস্থা, ইমিগ্রেশন সমস্যা সমাধানে সাহায্যের নামে এই সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত করা হতে থাকে বলে অভিযোগ শোনা গেছে।

কিছুদিনের মধ্যে এই এলএমসির মুখোশ উন্মোচিত হয় এবং ধরা পড়ে, এটা বাংলাদেশি জামায়াতিদের গোপন রাজনৈতিক তৎপরতার একটি প্রধান বিদেশি আড্ডা। সৌদি আরব ও পাকিস্তানের সাহায্য-সহযোগিতাও এর পেছনে রয়েছে। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বা অন্যান্য জামায়াত-নেতা ব্রিটেনে এলে এই ইস্ট লন্ডন মসজিদই হতো তাদের তথাকথিত 'ওয়াজ মাহফিলের' প্রধান কেন্দ্র। এখান থেকেই তাদের রাজনৈতিক প্রচার-প্রোপাগান্ডা চালানো হতো এবং বাংলাদেশকে তালেবানি রাষ্ট্রে পরিণত করার গোপন ষড়যন্ত্রেও ঘাঁটি হিসেবে এটি অনেকের কাছে চিহ্নিত হয়।

কিছুদিনের মধ্যেই এরা এত শক্তি সংগ্রহ করে যে প্রকাশ্যেই স্বরূপে আবির্ভূত হতে দ্বিধা করেনি। ততদিনে জর্জ গ্যালাওয়ে এদের খপ্পরে পড়েছেন এবং এদের শক্তিশালী সমর্থন লাভের লোভে তাঁর রেসপেক্ট পার্টির টিকিটে এদের বিভিন্ন কাউন্সিলে নির্বাচন-প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। নিজেও বাংলাদেশ সফরে গিয়ে জামায়াতি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে আসেন। ইরাকযুদ্ধ-বিরোধী জনপ্রিয় বাম নেতা জর্জ গ্যালাওয়ে কিছুদিনের মধ্যে পরিচিত হন পূর্ব লন্ডনে কট্টর ডানপন্থী, মৌলবাদী এবং বাংলাদেশের জামায়াতপন্থীদের প্রভাবশালী অভিভাবক হিসেবে।

গ্যালোয়ের রেসপেক্ট পার্টির নমিনেশন নিয়েই ছদ্মবেশী জামায়াতপন্থীদের একটা অংশ টাওয়ার হ্যামলেটস, নিউহ্যাম কাউন্সিলের আগের বারের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যায় জিতে প্রকাশ্যেই তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করে। টাওয়ার হ্যামলেটস বারায় এরা বিভিন্ন বাঙালি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনকে কাউন্সিলের আর্থিক সাহায্যের গ্রান্ট কমিয়ে মসজিদ, ধর্মীয় শিক্ষা ও মৌলবাদী সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর বরাদ্দ বাড়াতে শুরু করে। পূর্ব লন্ডনের জনপ্রিয় বৈশাখী মেলা যাতে অনুষ্ঠিত হতে না পারে, সে জন্য নানা নেপথ্য তৎপরতা চালাতে থাকে।

এই জামায়াতি কর্মকাণ্ডের প্রধান ঘাঁটি হয়ে ওঠে পূর্ব লন্ডনের নিউহ্যাম বারা। এই কাউন্সিল জামায়াতপন্থীরা প্রায় দখল করে নিয়েছিল। এখান থেকেই জামায়াতপন্থী সংগঠনগুলো ইশতেহার ছড়াত, গণতন্ত্র ইসলামবিরোধী, বৈশাখী মেলার অনুষ্ঠান হারাম, মেয়েরা হিজাব ও নেকাব না পরলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে, বাঙালি বলে নিজের পরিচয় দেওয়া ইসলামের অবমাননা ইত্যাদি। পূর্ব লন্ডনের বহু বাংলাদেশি নারী অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচনের সময় তাঁদের বলা হয়েছে, তাঁরা বা তাঁদের বাংলাদেশের আত্দীয় নারীরা যদি আওয়ামী লীগ বা কোনো সেক্যুলারপন্থী দলকে ভোট দেন, তাহলে তাঁদের স্বামী তালাক হয়ে যাবে। এ কথা তাঁরা যেন তাঁদের বাংলাদেশের আত্দীয়দের জানিয়ে দেন।

ইস্ট লন্ডন মসজিদকেন্দ্রিক এই ছদ্মবেশী জামায়াতি তৎপরতা এবং তথাকথিত লন্ডন মুসলিম সেন্টারের কর্মকাণ্ডই ধীরে ধীরে পূর্ব লন্ডনের বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করে এবং তাঁরা এই উগ্র মৌলবাদী এবং বিশেষ করে বাংলাদেশবিরোধী চক্রান্ত প্রতিহত করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হন। এবারের ব্রিটিশ নির্বাচনে মৌলবাদী ও বর্ণবাদীদের পরাজিত করার জন্য পূর্ব লন্ডনসহ ব্রিটেনের আরো অনেক স্থানে সাদা-কালো উভয় সম্প্রদায় বিশেষ করে বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে যে ঐক্য দেখা দেখা গেছে, তা আগে কখনো দেখা যায়নি।

এরই ফল নির্বাচনে সর্বত্র জামায়াতপন্থী প্রার্থীদের এবং বর্ণবাদী বিএনপির সম্পূর্ণ ভরাডুবি। পূর্ব লন্ডনে এবার জামায়াতিদের নির্বাচনী লক্ষ্য ছিল টাওয়ার হ্যামলেটস এবং নিউহ্যাম এ দুটি কাউন্সিল সম্পূর্ণ দখল করা এবং পার্লামেন্টে প্রথম বাংলাদেশি এমপি হিসেবে একজন জামায়াতি অথবা জামায়াতপন্থীকে নির্বাচিত করা। তাহলে ব্রিটেনে বাংলাদেশি কমিউনিটির ওপর তাদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ ভণ্ডুল করা এবং বাংলাদেশে সেক্যুলার গণতান্ত্রিক রাজনীতি ধ্বংস করে মৌলবাদী রাজনীতির আধিপত্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন সফল করার কাজে ব্রিটিশ রাজনীতিকে ব্যবহার করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে বলে তারা ধরে নিয়েছিল।

প্রগতিশীল ব্রিটিশ নাগরিক সমাজ এবং বাংলাদেশি কমিউনিটির সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে তাদের সব স্বপ্ন এবং চক্রান্ত ভণ্ডুল হয়ে গেছে। নিজেদের পরিচয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হলে একটি ভোটও পাবে না, এ কথা জেনে তারা রেসপেক্ট পার্টি ছাড়াও টোরি দলে, এমনকি লিব ডেমেও অনুপ্রবেশ করে তাদের প্রার্থী পরিচয়ে নিজেদের প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে। তাতে ভবি ভোলেনি।

ব্রিটেনের এবারের নির্বাচনে বাংলাদেশি কায়দায় মসজিদ ও ধর্মীয় স্লোগান ব্যবহার, অপপ্রচার, মিথ্যা প্রচারসহ এমন কোনো কর্মকাণ্ড নেই যার আশ্রয় জামায়াতিরা নেয়নি। বেথনাল গ্রিন ও বো পার্লামেন্টারি কেন্দ্রে বাংলাদেশি লেবার প্রার্থী রোশনারা আলীর মতো বিদুষী তরুণীর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত কুৎসা প্রচারেও তারা দ্বিধা করেনি। তা সত্ত্বেও রোশনারা ১২ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রথম বাঙালি সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। রোশনারা মৌলবাদবিরোধী এবং বাংলাদেশের সেক্যুলার গণতান্ত্রিক রাজনীতির একজন দৃঢ় সমর্থক।

ব্রিটিশ নির্বাচনে যা কখনো হয়নি অর্থাৎ রাজপথে মিছিল অথবা র‌্যালি করা_জামায়াতিরা তাদের প্রার্থীকে জেতানোর জন্য মরিয়া হয়ে সেই মিছিল এবং র‌্যালিও এবার করেছে। সচেতন ভোটদাতারা তাদের কোনো প্রচারণার ফাঁদেই পা দেয়নি। টাওয়ার হ্যামলেটসে রোশনারা আলী তো এমপি হয়েছেনই, কাউন্সিল নির্বাচনেও রেসপেক্ট দলীয় জামায়াতপন্থীরা নিদারুণভাবে হেরেছেন। আগে এই কাউন্সিলে তাদের সদস্য ছিলেন ১২-১৩ জন, এবার মাত্র একজন।

জামায়াতি ও জামায়াতপন্থীদের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি ছিল নিউহ্যাম কাউন্সিল। এবারের নির্বাচনে তারা একটি আসনেও জয়ী হয়নি। আগে তাদের সদস্যসংখ্যা ছিল ২০ জন। নিউহ্যাম কাউন্সিলের লিটল ইলফোর্ড ওয়ার্ডে বিশিষ্ট সমাজসেবী খলিল কাজি (ব্রিটিশ সরকারের খেতাবপ্রাপ্ত) ও রহিমা রহমান বিপুল ভোটে জিতেছেন। খলিল কাজি একজন সেক্যুলারিস্ট এবং আওয়ামীপন্থী সমাজসেবী।

অনুরূপভাবে সেন্ট্রাল লন্ডনে ক্যামডেনের কাউন্সিল নির্বাচনে শেখ রেহানার বড় মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক, আসিফ আলী, আবদুল কাদির এবং ওয়েস্টমিনস্টার কাউন্সিলের নির্বাচনে লন্ডনের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মোশতাক কোরেশীর মেয়ে পাপিয়া কোরেশী, আওয়ামীপন্থী যুবনেতা আবদুল আজিজ সহজ বিজয় অর্জন করেছেন। সর্বত্র জামায়াতপন্থী ও বর্ণবাদীদের পরাজয় হয়েছে।

ব্রিটেনের এবারের নির্বাচনে একটি ব্যাপার ছিল লক্ষণীয়, ব্রিটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি বা বর্ণবাদী বিএনপির সঙ্গে একাধিক নির্বাচন কেন্দ্রে, বিশেষ করে বৃহত্তর পূর্ব লন্ডনের বার্কিং ও টাগেনহাম কেন্দ্রে জামায়াতপন্থীদের দহরম-মহরমের খবর। এই বার্কিং কেন্দ্রের পার্লামেন্টারি নির্বাচনেই বর্ণবিদ্বেষী বিএনপি নেতা নিক গ্রিফিন শোচনীয় পরাজয় বরণ করেছেন। বার্কিং থেকে খবর পেয়েছি, বর্ণবাদী এবং 'কিপ ব্রিটেন হোয়াইট' আন্দোলনের এই নেতার পরাজয়ের খবর পেয়ে অনেক বাংলাদেশি ছেলেমেয়ে নাকি বার্কিংয়ের রাস্তায় বেরিয়ে হাততালি দিয়ে সমস্বরে রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতা পড়েছে_'মেঘের কোলে রোদ হেসেছে/বাদল গেছে টুটি/আজ আমাদের ছুটি, ও ভাই/আজ আমাদের ছুটি।'

আমার পাঠকদের অনেকে হয়তো সহজে বিশ্বাস করতে চাইবেন না, কিন্তু আমার বার্কিংয়ের বাঙালি বন্ধুরাই আমাকে জানিয়েছেন, সত্যি সত্যি ঘটনাটি ঘটেছে।

লন্ডন, ১০ মে, সোমবার, ২০১০।


খবরের লিংক

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন