কমল দে, চট্টগ্রাম
যখন-তখন আত্দীয়স্বজনের সঙ্গে সাাৎ, ভালো ভালো খাবার, কিছু একটার ছুতা ধরেই বাইরের হাসপাতালে ভর্তি_এ রকম নানা অন্যায় আবদারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের কর্মকর্তারা। খুনের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ ও শিবিরের আট ক্যাডার একজোট হয়ে এই আবদার যন্ত্রণা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভবিষ্যতে তি হতে পারে_এ আশঙ্কায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারছেন না কর্মকর্তারা।
এত দিন শুধু শিবিরের ক্যাডাররাই কারা কর্মকর্তাদের নাজেহাল করত। সম্প্রতি তাদের সঙ্গে মতাসীন দলের ক্যাডাররাও যোগ দেওয়ায় কারা কর্মকর্তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কারা কর্মকর্তা বলেন, 'এসব বন্দির অন্যায় আচরণ ও নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে চাকরি ছেড়ে দিতে ইচ্ছা করে।'
এ অবস্থায় কয়েক দিন আগে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক কারা পরিদর্শনে গেলে তাঁকে বিষয়টি অবহিত করা হয় বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আগে যেসব বন্দিকে প্রশাসনিকভাবে অন্য কারাগারে পাঠানো হয়েছিল, তারা আবার ফিরে আসায় আমাদের একটু সমস্যা হচ্ছে। আমরা তাদের জানিয়ে দিয়েছি, এখানে অন্যায় কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। জেল কোড অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।'
কারাগার সূত্র জানায়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে আইনজীবী-পুত্র শ্রীকান্ত রতি হত্যা মামলার ছাত্রলীগের দীপক দত্ত ওরফে ভোলা, বিএনপি নেতা মুক্তিযোদ্ধা শফিউদ্দিন আহমেদ হত্যা মামলার শিপন হাওলাদার ও নাইমুল ইসলাম ওরফে ইমন, মামুন হত্যা মামলার রেজোয়ানুর রহমান রেজু ও রতন শিকদার, বহদ্দারহাট এইট মার্ডার মামলার আসামি ও শিবির ক্যাডার মোহাম্মদ আজম, শেরশাহ এলাকার বাবলু হত্যা মামলার আবদুল মালেক ওরফে সোহেল ও কুমিল্লার মাহবুবুর রহমান ওরফে টিটো কারাগারে এসব অন্যায় আবদারের নেতৃত্ব দিচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কারা কর্মকর্তা জানান, গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে কনডেম সেলের এসব বন্দি বাইরে ঘোরাফেরা করার আবদার জানালে কারা কর্মকর্তারা তা মানতে অস্বীকার করেন। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের কনডেম সেলের বাইরে নেওয়ার বিধান নেই বলে কারা কর্মকর্তারা উল্লেখ করলে তারা অনশন করার হুমকি দেয়। এ ছাড়া আত্দীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা করা নিয়ে প্রায়শ কারা কর্মকর্তাদের সঙ্গে এসব বন্দির বাগ্বিতণ্ডা হচ্ছে।
কর্মকর্তারা বলেন, মাসে মাত্র একবার আত্দীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করার বিধান থাকলেও তারা তা মানতে চাইছে না। আর খাবার নিয়ে প্রতিনিয়ত কারা কর্মকর্তাদের ব্যতিব্যস্ত করে তোলে এসব বন্দি। এ ছাড়া সামান্য অসুস্থ হলেই চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণের জন্যও চাপ দেয় তারা। কয়েক দিন আগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হলেও পরে কারা কর্মকর্তারা তা গোপন করে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন