5 April 2010

স্কুলছাত্রী অপহরণের চেষ্টাঃ হাটহাজারীতে গণপিটুনিতে শিবির ক্যাডার নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

হাটহাজারীতে আইয়ুব আলী ওরফে রাশেদ (২৭) নামে ইসলামী ছাত্রশিবিরের এক দুর্ধর্ষ ক্যাডার গণপিটুনিতে মারা গেছেন। গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় হাটহাজারীর নজু মিয়া হাট এলাকায় এক স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করতে গেলে তিনি গণপিটুনির শিকার হন। এ সময় তাঁর কয়েক সহযোগীও গুরুতর আহত হয়। রাশেদের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে আটটি মামলা রয়েছে।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে পুলিশের হাটহাজারী সার্কেল এএসপি বাবুল আক্তার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'রাশেদ তাঁর কয়েক সহযোগীকে নিয়ে এক স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করতে গেলে গ্রামবাসী মাইকে ঘোষণা দিয়ে তাঁদের প্রতিরোধ করেন। জনতা তাঁদের আটক করে বেদম মারধর করেন। রাশেদ ঘটনাস্থলেই মারা যান। তবে সহযোগীরা মার খেয়েও কৌশলে পালিয়ে যায়।'

হাটহাজারী থানার সন্ত্রাসী তালিকার প্রথমদিকেই আইয়ুব আলী রাশেদের নাম রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়। তিনি হাটহাজারীর পূর্ব শিকারপুর গ্রামের আলী আহমেদের ছেলে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি শামসুদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'হাটহাজারীর নজু মিয়া হাট এলাকায় আইয়ুব আলী রাশেদ নামে তাঁদের কোনো নেতা বা কর্মী নেই।' প্রসঙ্গত, হাটহাজারীতে শিবিরের কার্যক্রম মূলত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়।

জেলা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, সন্ত্রাসী আইয়ুব আলী রাশেদ কিছুদিন আগে জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর হাটহাজারীতে তাঁর দলকে ফের সংগঠিত করেন। এর মধ্যে তিনি দলবল নিয়ে হাটহাজারীর ঐতিহ্যবাহী নজু মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করতেন। তাঁর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ওই ছাত্রী স্কুল ছেড়ে পাশের গ্রামে নানার বাড়িতে আশ্রয় নেয়।

গতকাল সকালে ওই স্কুলে অনুষ্ঠিত ইভটিজিংবিরোধী এক সভায় স্কুলের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানানো হয়। রাশেদ এ খবর পেয়ে গতকাল বিকেলে একটি মাইক্রোবাসে করে নজু মিয়া হাট এলাকায় আসেন ওই স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করতে। গ্রামবাসী রাশেদের উপস্থিতি টের পেয়ে স্থানীয় মসজিদের মাইক থেকে 'গ্রামের মেয়েকে অপহরণ করতে ডাকাত এসেছে' বলে ঘোষণা দেন। এ ঘোষণায় গ্রামের শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে এসে রাশেদ ও তাঁর সঙ্গীদের আটকে ফেলেন।

পুলিশ জানায়, রাশেদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি আলী মুর্তজা, আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক মোহাম্মদ সিদ্দিকী, সোলায়মান, ছাত্রলীগ নেতা মনসুর হত্যা মামলা, গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান বেইস টেক্সটাইলের ৫৬ লাখ টাকা লুটের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। বেইস টেক্সটাইলের টাকা লুট মামলায় ২০০৪ সালে পুলিশ একবার তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল। এরপর তিনি জামিনে মুক্ত হয়ে এলে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে পুলিশ তাঁকে আবারও গ্রেপ্তার করে। তবে সর্বশেষ কখন তাঁর জামিন হয়েছিল তা পুলিশ বা অন্য কোনো সূত্র জানাতে পারেনি।

গতকাল রাতে এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত রাশেদের লাশ পুলিশের হেফাজতে ছিল। রাতেই ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানোর কথা।


খবরের লিংক

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন