নিজস্ব প্রতিবেদক
যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে আপিলের সুযোগ রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী সমর্থক আইনজীবীরা।
গতকাল শুক্রবার ন্যাশনাল ফোরাম ফর প্রটেকশন অব হিউম্যান রাইটস (এনএফপিএইচআর) আয়োজিত এক সেমিনারে তাঁরা এ দাবি জানান। তাঁরা বলেন, এ আইনে বিচার হলে তা ন্যায়বিচারের নামে প্রহসন হবে।
রাজধানীর শেরাটন হোটেলে আয়োজিত 'লিগালিটি অব দি ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট-১৯৭৩' শীর্ষক এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিচারপতি আবদুর রউফ।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিচারপতি টি এইচ খান বলেন, 'এ আইনে আন্তর্জাতিক শব্দটির অপব্যবহার হচ্ছে। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে সারা পৃথিবী থেকে বিচারপতি নির্বাচন করে বিচারকাজ সম্পন্ন করা হয়। আমাদের এখানে তা হচ্ছে না। ফলে বিচারে কোনো স্বচ্ছতা থাকছে না।'
টি এইচ খান আরো বলেন, 'বিচারের জন্য শুধু ট্রাইব্যুনাল গঠন করলেই হবে না, সেখানে আপিলের সুযোগও থাকতে হবে।' আইনটি সংশোধনের জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বিচারপতি বলেন, 'এ আইনে সাক্ষী মিথ্যা সাক্ষ্য দিলেও তার কোনো সাজা হবে না। ফলে শত শত ভুয়া সাক্ষী বানানো যাবে।'
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের যদি উদ্যোগ নিতেই হয়, তাহলে রক্ষীবাহিনী ও তার নেতাদের বিচার হতে হবে। তাদের হাতেই হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছিলেন।
ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, আইনটির প্রতিটি ধারাই মানবাধিকার ও সংবিধানের পরিপন্থী। এ আইনে বিচার করা যাবে না। গায়ের জোরে বিচার করতে গেলে উল্টো বিচারের উদ্যোক্তারাই আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াবেন। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কেননা, কোনো কালো আইন দিয়ে বিচার করা আদালতের কাজ নয়।
সভাপতির বক্তব্যে বিচারপতি আবদুর রউফ বলেন, 'আইনটি ত্রুটিমুক্ত নয়। বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এটি প্রণয়ন করা হয়েছে। এ আইনের অধীনে বিচারপ্রক্রিয়া যে সন্দেহাতীতভাবে নিরপেক্ষ হবে তা বলা যাবে না। আন্তর্জাতিক আইনের কোনো সংজ্ঞা এখানে মানা হয়নি।'
বিচারপতি রউফ সরকারের উদ্দেশে আরো বলেন, 'প্রহসনের বিচার করলে এ দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। এতে করে আপনাদেরও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতে পারে। ফলে আইনটি সংশোধন করুন।'
সেমিনারে আরো বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এমপিসহ অনেকে। অনুষ্ঠানে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এ জে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার ফিদা এম কামালসহ চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট আইনজীবী সমিতিসহ বিভিন্ন জেলা আইনজীবী সমিতির প্রতিনিধিরা সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ন্যাশনাল ফোরাম ফর প্রটেকশন অব হিউম্যান রাইটসের সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
খবরের লিংক
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন