প্রশ্নকারীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, 'একাত্তর নিয়ে আমাদের এত কথা বলেন, কিন্তু একাত্তরের পর আমরা বারবার এমপি নির্বাচিত হয়েছি; আপনারা অনেকে তখন মায়ের পেটেও ছিলেন না। একাত্তর নিয়ে এখন কী প্রশ্ন করেন?'
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বড় মগবাজারে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নে উত্তেজিত হয়ে স্বাধীনতাবিরোধী মাওলানা সুবহান এসব কথা বলেন।
বুধবার রাতে সাতক্ষীরা যাওয়ার পথে খুলনার জিরো পয়েন্টে জামায়াতের সেক্রেটারি আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের গাড়িবহর আটক ও আল-ফারুক সোসাইটিতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনের হাতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা অবহিত করতে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
খুলনায় জামায়াত নেতাদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা একাত্তরের পাল্টা শোধ কি না জানতে চাইলে মাওলানা আবদুস সুবহান রেগে গিয়ে উলি্লখিত মন্তব্য করলেও জামায়াতের সেক্রেটারি আলী আহসান মুজাহিদ বলেন, 'সবকিছুতে একাত্তরের গন্ধ তালাশ করা ঠিক না। এর সঙ্গে একাত্তরের কোনো সম্পর্ক নেই।'
মুজাহিদ খুলনার জিরো পয়েন্টে ও আল-ফারুক সোসাইটিতে অবস্থানকালীন সাদা ও পোশাকধারী পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণের বর্ণনা দেন।
তিনি বলেন, 'পুলিশ জনসভা ভণ্ডুলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো আমাদের ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এভাবে যদি দুষ্টকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে কী হবে_এ ব্যাপারে আমরা উদ্বিগ্ন।'
এক প্রশ্নের জবাবে মুজাহিদ বলেন, 'আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, না হয় ১৪৪ ধারা কোনো ব্যাপার না। সাতক্ষীরায় আমাদের গণভিত্তি অত্যন্ত মজবুত। ইচ্ছে করলে জনসভা করতে পারতাম. প্রতিহতকারীরা মাঠে নামারই সাহস পেত না। কিন্তু আমরা সংঘাতে যাইনি।'
মুজাহিদ অভিযোগ করেন, আল-ফারুক সোসাইটিতে অবস্থানকালে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের লোকেরা জামায়াত নেতাদের ওপর আক্রমণ করে। এতে তাঁদের কয়েকজন আহত হন। তিনি এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।
সরকার জনগণের ওপর আস্থা হারিয়ে পুলিশনির্ভর হয়ে পড়েছে মন্তব্য করে মুজাহিদ বলেন, 'আমরা চ্যালেঞ্জও দিচ্ছি না, হুমকিও দিচ্ছি না, সরকার পুলিশের আশ্রয় বাদ দিক, ১৪৪ ধারা তুলে নিয়ে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোক, তারপর দেখা যাবে...।'
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মকবুল আহমদ, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লা, এ টি এম আজাহারুল ইসলাম, হামিদুর রহমান আযাদ এমপি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পথে পথে ব্যারিকেড
এদিকে সাতক্ষীরা থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানিয়েছেন, পথে পথে মুক্তিযোদ্ধা জনতার বাধার মুখে জামায়াতের কথিত দুর্গ বলে খ্যাত সাতক্ষীরায় ঢুকতে পারেননি দলের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ। শহরে ১৪৪ ধারা জারি থাকায় জামায়াত ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে মিছিল-সমাবেশও করতে পারেনি। মুজাহিদ সমাবেশে যোগ দেওয়ার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেও শেষ পর্যন্ত পথে পথে ব্যারিকেডের খবর শুনে সাতক্ষীরায় পা রাখেননি। তবে জেলা জামায়াতের নেতারা মুজাহিদকে সাতক্ষীরায় ঢুকতে না দেওয়ার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে দায়ী করেছেন।
গতকাল সকাল ১০টার দিকে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আহ্বানে প্রগতিশীল সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শহরের রাজ্জাক পার্কে জড়ো হতে শুরু করে। এরপর পুলিশ আলোচনার মাধ্যমে পার্কের নিয়ন্ত্রণ নিলে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির লোকজন বেলা ১১টায় জেলা জামায়াত অফিসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের আমির মুহাদ্দেস আব্দুল খালেক সাতক্ষীরায় আলী আহসান মুজাহিদকে ঢুকতে না দেওয়ার জন্য প্রশাসনকে দায়ী করেন। শহরে ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকায় পরবর্তী ঘোষনা না দেওয়া পর্যন্ত সমাবেশ স্থগিত রাখা হয়েছে বলে জামায়াত জানিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক ইনামুল হক বিশ্বাস জানান, মুক্তিযোদ্ধা জনতার প্রতিরোধের মুখে মুজাহিদ যেহেতু সাতক্ষীরায় ঢুকতে পারলেন না, তাই আগামীতে দেশের কোথাও তিনি সমাবেশ করতে পারবেন না।
মাগুরায় রাত জেগে গাড়িতে গাড়িতে তল্লাশি
যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের সাতক্ষীরার জনসভায় অংশগ্রহণ প্রতিহত করতে জেলার ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি বুধবার রাতে জেলায় বিভিন্ন প্রতিরোধ কর্মসূচি পালন করে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা বুধবার সারা রাত ও গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে মাগুরার বিভিন্ন পয়েন্টে মুজাহিদের খোঁজে গাড়িতে তল্লাশি চালায়।
সকাল থেকেই শহরের পিটিআইর সামনে নির্মূল কমিটির নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ এসে জড়ো হয়। সেখানে একইভাবে গাড়ি তল্লাশির পাশাপাশি চলতে থাকে প্রতিবাদ সভা। সেলিম খানের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন এ টি এম মহব্বত আলী, আবুল কালাম আজাদ, আবু রেজা নান্টু, ওহিদুজ্জামান, আনিসুর রহমান, রূপক আইচ, সাজ্জাদুল ইসলাম বিপু, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, নাজমুল হাসান জেন্টেল, আহম্মদ আলী, ফারুক মোল্যা, রেজাউল ইসলাম ও পার্থ সাহা। প্রতিবাদ শেষে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ও এলাকাবাসী শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
খবরের লিংক
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন