নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ০৪-০৪-২০১০
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের প্রতি ইঙ্গিত করে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী বলেছেন, ‘জীবন-মৃত্যুর মালিক আল্লাহ। তাঁর ফয়সালা ছাড়া কোনো মৃত্যু হবে না। আল্লাহর ফয়সালা থাকলে রাষ্ট্রের হাতে আমাদের মৃত্যু হবে, আমাদের পরোয়া নেই।’
১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের আগে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ ও রাজধানীর ইডেন কলেজে ছাত্রী নিগ্রহের বিচার করার দাবিও জানিয়েছেন নিজামী। এ জন্য তিনি ‘লেট ট্রেনের’ উদাহরণও দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে দেখেছি, যে ট্রেনটি লেট (দেরি) থাকে, সেটি দাঁড়িয়েই থাকে। কারেন্ট (নতুন) ট্রেন এলে সেটিকে আগে ছেড়ে দেওয়া হয়।’
গতকাল শনিবার দুপুরে বড় মগবাজারের আল-ফালাহ মিলনায়তনে জামায়াতের সমর্থক আইনজীবীদের ফোরাম ইসলামিক লইয়ার্স কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নিজামী এসব কথা বলেন। তিনি দাবি করেন, শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকলে এখন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের প্রসঙ্গ উঠত না।
নিজামী বলেন, সার্বিক ব্যর্থতাকে ঢাকা দেওয়ার জন্য সরকার ৩৯ বছর আগে স্বাধীনতার স্থপতি যে বিষয়টির সমাধান করেছেন, তাকে আবার পুনরুজ্জীবিত করতে চাচ্ছে। আইনমন্ত্রী হঠাৎ ঘুরে গেছেন। তিনি বলছেন, যুদ্ধাপরাধী নয়, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার করা হবে। এর মধ্যে আইনের কী মারপ্যাঁচ আছে, কেন তাঁরা এ পথে গেলেন, জাতির কাছে তা পরিষ্কার হওয়া দরকার।
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩-এর বিষয়ে নিজামী বলেন, ‘আমরা বুঝি, সেটা একটি মারাত্মক কালো আইন। যুদ্ধের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও সহযোগী বাহিনীর সবাইকে তদন্ত করে ১৯৫ জনকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু তাদের বিচার করা হয়নি। ভারত-পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ত্রিদেশীয় সমঝোতার মাধ্যমে তাদের দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর আর যুদ্ধাপরাধী চিহ্নিত করা হয়নি। এখন বিচার করবেন কার?’
সুষ্ঠু বিচার ও তদন্ত হবে না—আশঙ্কা করে জামায়াতের আমির দাবি করেন, মন্ত্রীদের কথাবার্তায় বোঝা যায়, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করার জন্য একটি তালিকা আছে, তদন্ত কমিটিকে তা ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই তদন্ত হবে ফরমায়েশি। বিচারকদের হাতেও একটি রায় ধরিয়ে দেওয়া হবে। বিচারও হবে ফরমায়েশি।
জামায়াতের স্বাধীনতার বিরোধিতার প্রতি ইঙ্গিত করে নিজামী বলেন, ‘সে সময় জামায়াতের ভিন্ন রাজনৈতিক অবস্থান ছিল। কিন্তু জামায়াত লুটপাটে শরিক হয়নি, ধর্ষণের প্রশ্নও ওঠে না। লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের একটি ঘটনাও যদি ঘটত, তাহলে সেই সময়ে জামায়াতের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হতো। ৩৯ বছর পর যদি কিছু ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে মামলা তৈরি করা হয়, সেটি হবে সাজানো মামলা।’
নিজামী দাবি করেন, ‘মামলা করা হবে মিথ্যার ভিত্তিতে। বাদী হবে মিথ্যা, সাক্ষী হবে মিথ্যা। আমরা বিভিন্ন জেলা থেকে খবর পেয়েছি, সাক্ষী ও বাদী বানানোর জন্য লোভ-লালসা, ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নামে এটিই হবে মানবতাবিরোধী কাজ।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের নেতারা কোনো অপকর্ম করেনি বলে দাবি করেন নিজামী।
খবরের লিংক
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন