12 March 2010

পুঠিয়ায় জামায়াতের চাষি কল্যাণ সমিতিঃ ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী | তারিখ: ১২-০৩-২০১০


জামায়াতে ইসলামী নিয়ন্ত্রিত চাষি কল্যাণ সমিতির বিরুদ্ধে প্রায় ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে পুলিশ। এই অভিযোগে রাজশাহীর পুঠিয়ায় ওই সমিতির একজন মাঠকর্মী জেলার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা করেন। তদন্ত করে পুলিশ অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পায়। সম্প্রতি এ ব্যাপারে একই আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে পুলিশ।

সমিতির সদস্যরা জানান, চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর জামায়াতের উদ্যোগে চাষি কল্যাণ সমিতি নামে একটি সমিতি প্রতিষ্ঠা করা হয়। একটি নির্দিষ্ট হারে মুনাফা দেওয়ার নামে সমিতির ১০ জন মাঠকর্মী পুঠিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের লোকজনকে সদস্য করে তাঁদের কাছ থেকে সঞ্চয়ের টাকা সংগ্রহ শুরু করেন।

সমিতির মাঠকর্মী উপজেলার নামাজ গ্রামের ফেরদৌসী খানম জানান, একজন মাঠকর্মী চলে যাওয়ায় ২০০১ সালে তিনি এই সমিতিতে যোগ দেন। এরপর ২০০৫ সালের দিকে সমিতির আটজন মাঠকর্মী সদস্যদের টাকা আত্মসাত্ করে চলে যান। তিনি বলেন, সমিতিতে রাজশাহী জেলার (পূর্ব) সভাপতি হচ্ছেন হাফিজুর রহমান, উপজেলার সভাপতি জালালউদ্দিন ও উপদেষ্টা শহীদুল ইসলাম। তাঁদের মধ্যে হাফিজুর রহমান জেলা জামায়াতের রোকন, জালালউদ্দিন বানেশ্বর ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি এবং শহীদুল ইসলাম উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি।

ফেরদৌসী খানমের অভিযোগ, তিনি এবং বেলপুকুর ইউনিয়নের মাঠকর্মী আয়েজ উদ্দিন সদস্যদের সঞ্চয়ের টাকা তুলে নিয়মিত জমা দিচ্ছিলেন, কিন্তু সদস্যদের মুনাফা বা আসল টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছিল না। গত নভেম্বরে সদস্যরা মুনাফাসহ টাকা দাবি করলে এ দাবির কথা তিনি ও আয়েজ উদ্দিন সমিতির ওই তিন নেতাকে জানান। কিন্তু ওই তিন নেতা বলেন, সদস্যদের কাছ থেকে কোনো টাকা তাঁরা নেননি। এ ব্যাপারে একজন নারী সদস্য থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। পুঠিয়া থানার ওসি আবদুল হামিদ অভিযোগ দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করেন। এ অভিযোগ দায়েরের পর ২০০৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর জামায়াতের এই তিন নেতা থানায় বসে লিখিত অঙ্গীকারনামা দেন। এতে তাঁরা বলেন, টাকা নেওয়ার কোনো অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে তাঁরা ১০ লাখ টাকা সুদে-আসলে দিয়ে দেবেন। ফেরদৌসী অভিযোগ করেন, এ ব্যাপারে পুলিশ কোনো তদন্ত করেনি। অথচ তাঁর কাছে রসিদ দিয়ে টাকা নেওয়ার সব প্রমাণপত্রই রয়েছে।

ফেরদৌসী রসিদ বই বের করে দেখান, ২০০৮ সালের ১৬ নভেম্বর তিনটি রসিদে যথাক্রমে এক লাখ ২৮ হাজার ২২৪ টাকা, এক লাখ ১৭ হাজার ৩২৪ টাকা ও নয় হাজার টাকা তাঁদের দেওয়া হয়েছে। তিনি এসব প্রমাণপত্র দিয়ে কিছুদিন পর আদালতে মামলা করেন। আদালত থেকে পুঠিয়া থানাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। সম্প্রতি থানা থেকে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল হামিদ বলেন, তাঁরা ফেরদৌসীর অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন এবং সেই আলোকে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।

গত মঙ্গলবার সদস্যরা সভাপতি হাফিজুর রহমানকে আটক করে তাঁর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নেওয়ার স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ তাঁকে থানায় নিয়ে পরে ছেড়ে দেয়।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য হাফিজুর রহমান ও তাঁর সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁদের পাওয়া যায়নি।



খবরের লিংক

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন