12 March 2010

গণমাধ্যমের সামনে শিবির নেতাঃ এত দিন পর এই রেওয়াজ বেআইনি ও অসাংবিধানিক!

নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ১২-০৩-২০১০


বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ২০০৫ সালের ১ অক্টোবরই প্রথম আটক ব্যক্তিকে গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হয়েছিল। এরপর এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে অনেকবার। কিন্তু কখনোই বিএনপি-জামায়াতের কেউ এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি।

কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ছাত্রশিবিরের নেতা ইকরাম হোসাইনকে গণমাধ্যমের সামনে হাজির করায় এখন এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, এটা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক ও বেআইনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ইকরাম র্যাব সদর দপ্তরে গণমাধ্যমের সামনে বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি শামছুল আলম জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ এবং ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের নির্দেশনা অনুসারে ক্যাম্পাসে হামলা হয়।

‘অভিযুক্তের কথিত স্বীকারোক্তি মিডিয়ায় প্রচার সংবিধান ও মানবাধিকার লঙ্ঘন’ শীর্ষক বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপি-জামায়াতের নয় নেতা ও আইনজীবী। তাঁদের মধ্যে জমির উদ্দিন সরকার ও মওদুদ আহমদ রয়েছেন। বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বা তার চেয়েও ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড আমাদের দেশে আরও হয়েছে। কিন্তু এ ইস্যুটিকে কেন্দ্র করে একটি বিশেষ মতের-দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি, গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলায় জড়ানো, অভিযুক্তদের কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়, অপপ্রচার সবই সীমা অতিক্রম করেছে। এতে সুস্পষ্ট হচ্ছে যে এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে সরকার ও কিছু স্বার্থান্বেষী মহল।’

বিবৃতিদাতা নয় আইনজীবীর মধ্যে আটজন বিএনপির ও একজন জামায়াতের। বিবৃতিদাতা অন্যরা হলেন বিএনপির রফিকুল ইসলাম মিয়া, খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল আ জা মোহাম্মদ আলী ও মোহাম্মদ আলী এবং জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য আবদুর রাজ্জাক।

এ প্রসঙ্গে মওদুদ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযুক্তদের গণমাধ্যমের সামনে হাজির করে কথিত স্বীকারোক্তি দেওয়া গর্হিত কাজ। আমি এর প্রতিবাদ করেছি।’ আগেও এমন ঘটেছে, তখন বিবৃতি দেননি কেন? উত্তরে তিনি বলেন, ‘বিএনপির বা অন্য সময়ে এমন ঘটনার প্রতিবাদ করিনি। তাই বলে এখন করা যাবে না, তা তো নয়। আমি এখন থেকে এ কাজের বিরুদ্ধে থাকব।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘শিবির হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে দেখতে হবে। আমি শিবিরের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছি তা বলা হচ্ছে কেন? আমি তো মানুষ বিবেচনা করে বিবৃতি দিয়েছি। তা ছাড়া শিবিরের অনেক কার্যকলাপ আমি পছন্দও করি না।’

দলীয় সিদ্ধান্ত নয়: বিএনপির এক আইনজীবী নেতা প্রথম আলোকে বলেন, শিবিরের পক্ষে যায় এমন কোনো বক্তব্য দেওয়ার ব্যাপারে দলের বিধিনিষেধ আছে। বিএনপির নেতারা যে বিবৃতি দিয়েছেন তা ব্যক্তিগত। তবে দল এ ব্যাপারে অবগত আছে। বিবৃতিকে শুধু শিবিরের পক্ষে না বলে এ ধরনের সব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বলাই ভালো।

বিবৃতিদাতা রফিকুল ইসলাম মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিবৃতিটিকে সার্বিকভাবে বিবেচনা করেছি। স্বাক্ষর করার আগেই বলেছি এটা যেন শুধু শিবিরের ওই নেতার পক্ষে না যায়। সবাই আশ্বস্ত করেছে এটা সবার পক্ষে যাবে। তারপর স্বাক্ষর করেছি।’

সাড়ে চার বছর পর বোধোদয়: ২০০৫ সালে জোট সরকারের সময় র্যাব গঠনের পর থেকেই অভিযুক্তদের গণমাধ্যমের সামনে হাজির করার রেওয়াজ শুরু হয়। ওই বছরের ১ অক্টোবর ঢাকার বাড্ডা থেকে জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানকে গ্রেপ্তারের পর গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হয়। এর পর থেকে নানা ঘটনায় গণমাধ্যমের সামনে অভিযুক্তদের হাজির করে স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দি দেওয়ার রেওয়াজ চালু হয়।
জোট সরকারের আমলে শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলায় জজ মিয়াকে জড়িত করে পুলিশ তাঁর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রচার করতে থাকে। জজ মিয়ার ওই জবানবন্দি তখন বিএনপি নেতারাও বিভিন্ন সভা-সমাবেশে এবং গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন।

বিবৃতিদাতা মাহবুব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ওই সময় জজ মিয়ার কাহিনি প্রচার করাও বেআইনি ছিল।

ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার-সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তি, ১৯৬৬-এর ৭ ও ১০ নং অনুচ্ছেদ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণাপত্র ১৯৪৮-এর ৫নং অনুচ্ছেদ ব্যক্তির প্রতি অমানবিক আচরণ ও নিষ্ঠুরতা, জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় নিষিদ্ধ করেছে। তার পরও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইকরামের কথিত স্বীকারোক্তি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করা হলো।’



খবরের লিংক

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন