নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ০৯-০৩-২০১০
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মী ফারুক হোসেন হত্যার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে ইকরাম হোসাইন নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আমির আলী হল শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি। তাঁকে গত রোববার রাতে ঢাকার ধামরাই উপজেলার কালামপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ইকরামকে গতকাল সোমবার র্যাবের সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। এ সময় তিনি জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি শামছুল আলম গোলাপ জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ এবং ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের দিকনির্দেশনা অনুসারে ক্যাম্পাসে হামলা হয়।
র্যাব জানায়, ইকরাম ছাত্রলীগের নেতা ফারুক হত্যা মামলার আসামি। তিনি গতকাল র্যাবের সদর দপ্তরে মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এ সময় র্যাবের জনসংযোগ ও আইন শাখার পরিচালক কমান্ডার সোহায়েল আহমেদ, গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান, র্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রাশিদুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
র্যাব জানায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংস ঘটনায় ইকরামকে নিয়ে এ পর্যন্ত শিবিরের ২৮ জন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হলো। তাঁদের মধ্যে র্যাব নয়জনকে ও পুলিশ ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করে।
ইকরামের বক্তব্য প্রসঙ্গে মন্তব্য জানতে চাইলে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ প্রথম আলোকে বলেন,
‘এ ধরনের অসত্য কথা প্রচার করে র্যাব নিজেদের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। এসব তথ্য সঠিক নয়। আমরা এমন অকাম-কুকাম করে বেড়াই না।’
র্যাবের গোয়েন্দা ইউনিটের পরিচালক জানান, গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের তাণ্ডবের পর ইকরাম পালিয়ে যান। ওই রাতে তিনি ছাত্রলীগের কর্মীদের ওপর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। রাত তিনটার দিকে ইকরাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে কর্মরত হামীমের বাসায় অবস্থান নেন। ওই বাসায় শিবিরের অনেক কর্মীই তখন অবস্থান নেন। সে সময় ইকরাম শিবিরের বিতর্কবিষয়ক সম্পাদক শিহাবের কাছ থেকে জানতে পারেন, শাহ মখদুম হল শাখা শিবিরের সাবেক সভাপতি আনিস রড দিয়ে ফারুকের মাথায় আঘাত করেন। ঘটনাস্থলে ফারুক মারা গেলে শাহ মখদুম হল শাখার বর্তমান সভাপতি আহাদ, একই হলের শিবিরের সেক্রেটারি বাপ্পী, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রশিক্ষণ সম্পাদক সুমন গাজী ও শাহ মখদুম হলের ছাত্র রাজুসহ ১০-১২ জন শিবিরকর্মী প্রথমে লাশটি টেনে হলের গেট পর্যন্ত আনেন। লাশটি কোথায় রাখা হবে তা নিয়ে তাঁরা পরিকল্পনা করতে থাকেন। একপর্যায়ে আহাদ জানান, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদকে হত্যার পর লাশ যেভাবে ম্যানহোলে ফেলা হয়েছিল, ফারুকের লাশটিও সেভাবে ফেলে দেওয়া হোক। পরে আমীর আলী হলে যেতে পূর্ব-দক্ষিণ দিকের একটি ম্যানহোলে লাশ ফেলা হয়।
র্যাবের কর্মকর্তারা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে ইকরাম স্বীকার করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে গন্ডগোল শুরু হওয়ার আগেই এক সভায় হামলার পরিকল্পনা করা হয়। এতে ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তিনিও অংশ নেন। ওই সভায় ছাত্রলীগের কর্মীদের ওপর হামলা করার এবং প্রশাসন বাধা দিলে প্রয়োজনে তাদেরও প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইকরাম জানান, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী শিবিরের কর্মীরা পাঁচটি দলে বিভক্ত হয়ে রাত ১২টার দিকে সব হলে একযোগে হামলা চালান। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সভাপতি গোলাপ এতে নেতৃত্ব দেন। তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার সঙ্গে মোবাইল ফোনে এ নিয়ে কথাও বলেন। যাঁদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছিলেন, তাঁদের একটি তালিকাও র্যাব সংগ্রহ করেছে।
খবরের লিংক
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন