9 March 2010

অনুমোদন নেই, তবু ক্ষুদ্রঋণ দিচ্ছেন জামায়াত নেতারা!

মামুনুর রশিদ, বাগমারা (রাজশাহী) | তারিখ: ০৯-০৩-২০১০


রাজশাহীর বাগমারায় একটি সংগঠনের নামে জামায়াতের নেতারা ১০ বছর ধরে অবৈধভাবে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চালাতে ‘আত-তিজারা’ নামের সংগঠনটি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো অনুমোদন নেয়নি। কিন্তু সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা দাবি করেছেন, রাজশাহী জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে তাঁরা অনুমোদন নিয়েছেন। তবে এ সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র তিনি দেখাতে পারেননি।

অনুসন্ধানে ও সংগঠনটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলা সদরের ভবানীগঞ্জে ২০০০ সালে স্থানীয় জামায়াতের নেতারা সংগঠনটি গঠন করেন। তখন থেকে তাঁরা ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। তবে জামায়াতের নেতাদের দাবি, এটি একটি সুদমুক্ত প্রতিষ্ঠান।

সংগঠনের পরিচালক তাহিরএকডালা গ্রামের আবদুল হাকিম জানান, তাঁদের সংগঠনের সদস্য পাঁচ শতাধিক। তাদের ১০০ টাকার বিনিময়ে সংগঠনের সদস্য হতে হয়। তারপর চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী ও ঋণ দেওয়া হয়। এ জন্য তাদের কাছ থেকে নামমাত্র লাভ নেওয়া হয়। তিনি এটাকে সুদ বলতে নারাজ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবীদেরই শুধু ঋণ দেওয়া হয়। পরিচালক আবদুল হাকিম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা সংগঠনের নিয়ম না, সহজে কিস্তি আদায়ের জন্য তাদের ঋণ দেওয়া হয়।’

সংগঠনের একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাঁদের কাছ থেকে ১৪ শতাংশ হারে সুদ নেওয়া হয়। টাকার বিনিময়ে সদস্য হয়ে ঋণ নিতে হয় তাঁদের। ঋণ দেওয়ার সময় তাঁদের কাছ থেকে প্রতি হাজারে ২০০ টাকা করে কেটে নেওয়া হয়। এটা তাঁরা জামানত হিসেবে রাখেন। ঋণের কিস্তি এক বছরে শেষ হওয়ার পর জামানতের সে টাকা ফেরত দেওয়া হয়।

ঋণগ্রহীতা এক কলেজের শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘২০০৮ সালে আমি ১০০ টাকা দিয়ে ওই সংগঠনের সদস্য হয়েছি। ঋণ নেওয়ার সময় আমার কাছ থেকে এক বছরের ১২টি চেক নেওয়া হয়। বেতন ব্যাংকে আসার পর তাঁরাই ওই চেক দিয়ে মাসিক সুদসহ কিস্তির টাকা তুলে নেন।’

জানা যায়, সংগঠনটির জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তর, বাগমারা কার্যালয় থেকে কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবু তাহের প্রথম আলোকে জানান, সংগঠনটির কোনো কাগজপত্র বা তথ্য তাঁর দপ্তরে নেই। ক্ষুদ্রঋণ পরিচালনা করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করতে হবে।

বাগমারায় শুধু ‘ওসেড’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থার এ অনুমোদন আছে। সংগঠনের পরিচালক আবদুল হাকিম দাবি করেন, তাঁরা রাজশাহী জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে অনুমোদন নিয়েছেন (যার নং রাজ সি ২৩১/২০০০)। তবে এ সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র তাঁরা দেখাতে পারেননি। সমাজসেবা কর্মকর্তা আবু তাহের বলেন, ‘জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে নিবন্ধন নিলে তারা ব্যবসা করতে পারবে, ঋণ কার্যক্রম চালাতে পারবে না।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আত-তিজারার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল হালিম। তিনি উপজেলা জামায়াতের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। বর্তমানে তিনি জঙ্গি মদদদানের মামলায় জেলহাজতে আছেন। পবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জামায়াতের নেতা মকবুল হোসেন জানান, সংগঠনের পরিচালকদের একজন আক্কাছ আলী। তিনি পবা উপজেলা জামায়াতের নেতা। এ ছাড়া অন্য পরিচালক আবদুল হাকিম, তাহরিমা, জহুরুল ইসলাম, দুরুল হুদা, শরিফুল ইসলাম (চাঁপাইনবাবগঞ্জ), তৈয়বুন্নাহার (রাজশাহী), আবদুল বারী, সৈয়দ আলী, শাহাদত হোসেন ও আব্বাস আলী সবাই জামায়াতের কর্মী-সমর্থক বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। কাচারীকোয়ালীপাড়া ইউনিয়ন জামায়াতের আমির আবু তালেব জানান, ‘আত-তিজারা’র পরিচালক আব্বাস আলী সংগঠনের কর্মী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জামায়াতের নেতা জানান, উপরিউক্ত সবাই দলের কর্মী-সমর্থক। এ প্রসঙ্গে উপজেলা জামায়াতের আমির সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘এই সংগঠনের সঙ্গে জামায়াতের কোনো সম্পর্ক নেই। ওটা একটা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান।’ পরিচালকেরা জামায়াতের কর্মী-সমর্থক কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সংগঠনে অনেক ধরনের লোক থাকে। কেউ সমর্থক থাকতে পারে।’

বাগমারা সচেতন নাগরিক ফোরামের আহ্বায়ক আশরাফুল ইসলাম মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইসলামধর্মে সুদ খাওয়া হারাম। ওরা ধর্মের নামে এ ধরনের ব্যবসা কীভাবে করছে তা বোধগম্য নয়।’ এ ব্যাপারে যথাযথ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।


খবরের লিংক

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন