27 March 2010

প্রয়োজনে রক্ত ঝরাতেও প্রস্তুত জামায়াত

সেলিম জাহিদ

যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় জামায়াতে ইসলামীর নীতি-নির্ধারকরা এখন মোটামুটি নিশ্চিত, তাঁদের পুরোভাগের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতা শিগগিরই আটক হতে যাচ্ছেন।

এ পরিস্থিতিতে জামায়াত যুদ্ধাপরাধের বিচারকে দলের জন্য মারাত্দক অস্তিত্বের সংকট হিসেবে বিবেচনা করে এর মোকাবিলায় আইনি এবং কিছু রাজনৈতিক কৌশল চূড়ান্ত করেছে।

জামায়াতদলীয় সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আযাদ এর ইঙ্গিত করে বলেন,
'দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যা যা প্রয়োজন, তার সবই করা হবে ইনশআল্লাহ_এ বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত।'


জামায়াতের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে সরকার জামায়াত প্রধানসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের আটক করার সঙ্গে সঙ্গেই জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা সরকারকে চ্যালেঞ্জ দিয়েই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে এর প্রতিবাদে মাঠে নামবে। দেশের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলতে এ সময়টাতে তারা বেপরোয়া আচরণও করতে পারে। প্রয়োজনে সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গেও তারা সংঘাতে জড়াবে। এতে নিজ দলের বা প্রতিপক্ষের বড় ধরনের রক্তপাত ঘটাতেও পিছপা হবে না বলে জানিয়েছে ওই সূত্র।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা জামায়াতের সঙ্গে সরকারের অন্যায় আচরণ ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ভবিষ্যৎ পরিস্থিতির বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, 'আমরা আইনের অংশটা আদালতে, আর রাজনৈতিক বিষয়টি রাজনৈতিক নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মোকাবিলার চেষ্টা করছি। সরকার যদি আমাদের নেতৃত্ব শূন্য করতে চায়, তাহলে আমাদের লাখ লাখ কর্মী ঘরে বসে থাকবে না।'

সূত্র জানিয়েছে, জামায়াতকেন্দ্রিক যুদ্ধাপরাধের বিচারে সরকারের কৌশলগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন দলের নীতি-নির্ধারকরা। জামায়াতের কাছে তথ্য আছে, পুলিশ ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে সরকার সারা দেশে জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে ময়দানে ভূমিকা রাখতে সক্ষম_তালিকায় এ ধরনের কর্মীদেরই অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

তাঁদের ধারণা, জামায়াত আমির মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ শীর্ষ নেতাদের আটকের আগে সরকার জামায়াত-শিবিরের এসব একনিষ্ঠ নেতা-কর্মীদের আটক করবে।

তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর আগামী দুই-এক মাসের মধ্যে ধরপাকড় শুরু হতে পারে বলে জানান জামায়াতের মাঝারি পর্যায়ের এক নেতা। তবে সরকারের আটকাভিযান শুরু হওয়ার আগেই নাগরিক দুর্ভোগ, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অগি্নমূল্য ও ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির আলোকে জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক কিছু ইস্যু নিয়ে আসছে এপ্রিল মাস থেকে রাজপথের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে দলটি। এসব কর্মসূচি পালনে সরকারের পক্ষ থেকে বাধা আসাটা স্বাভাবিক ধরে নিয়ে জামায়াত যেকোনো মূল্যে মাঠে থাকার চ্যালেঞ্জ নিচ্ছে। তাতে যেকোনো ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষের জন্যও মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছে দলের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী।

ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও জামায়াতে ইসলামীর পল্টন থানা শাখার আমির ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন,
'আদর্শিক সংগঠনের জন্য বড় বিপদে বড় সাহায্য আসে। ২৮ অক্টোবরসহ বড় বড় ঘটনায় আমরা এর নজির পেয়েছি। আশা করি সামনেও পাব_এটা হয়তো আপনার বিশ্বাস হবে না।'



সরকার ধরপাকড় করবে তা মাথায় রেখেই ময়দানের কর্মসূচি তৈরি করছে জামায়াত। সরকার তাদের ব্যাপারে নমনীয় না হলে শিগগিরই এসব কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

আবদুল কাদের মোল্লা বলেন,
'যে সরকারের ধান রাখার গুদাম নেই, তারা কত লোককে জেলে রাখবে। আর এখন তো জেলখানা আর বাড়ির মধ্যে খুব একটা তফাৎ নেই। দেখা যাক, তারা কত লাখ লোককে জেলে নিতে পারে।'


তিনি বলেন,
'মুসলিম লীগের যন্ত্রণায় এমন সময় গেছে, যখন আমেনা বেগম ছাড়া আওয়ামী লীগের অফিসে বাতি দেওয়ারও কেউ ছিল না। আজ সেই মুসলিম কোথায়। আমি এখনো মনে করি সরকার বিরোধীদলকে দমনের ভুল পথ থেকে ফিরে আসবে।'


জানা গেছে, রাজপথে আন্দোলনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে জামায়াত। ঢাকায় অবস্থিত বিদেশি রাষ্ট্রদূততের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান।

জামায়াতের শীর্ষপর্যায়ের একজন নেতা বলেন, নির্যাতন যত বাড়বে, সরকারের পতন তত দ্রুত হবে।


খবরের লিংক

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন