21 March 2010

 যুদ্ধাপরাধের মামলাঃ জজকোর্ট ফাঁসি দিলে হাইকোর্টে যাবেন জামায়াতের নেতারা

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের মামলায় জজকোর্ট জামায়াতের নেতাদের ফাঁসি দিলে তাঁরা হাইকোর্টে যাবেন। হাইকোর্ট ফাঁসি বহাল রাখলে তাঁরা সুপ্রিম কোর্টে যাবেন। এর আগে কেউ তাঁদের ফাঁসি দেওয়ার কথা বললে হবে না।

দলের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ অবশ্য বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াতের নেতাদের ফাঁসাতে হলে সাজানো বাদী ও সাক্ষী জোগাড় করতে হবে। তিনি ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করেন। জামায়াতের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় দেশের গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে বিষোদ্গারও করেন তিনি। গতকাল রোববার বিকেলে পুরানা পল্টনে ঢাকা মহানগর জামায়াতের কার্যালয়ে কথিত মিথ্যাচার, অত্যাচার ও ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে আয়োজিত আলোচনা সভায় জামায়াতের নেতারা এ কথা বলেন।

পত্রিকার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার: প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ অভিযোগ করেন, গণমাধ্যমগুলো একজোট হয়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের জেলে ঢোকানোর ষড়যন্ত্র করছে। তিনি দাবি করেন, জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অপপ্রচার, মিথ্যাচার করা হচ্ছে। বড় ধরনের ষড়যন্ত্র না থাকলে এটা হতে পারে না।

জামায়াত নেতা বলেন, ‘জেএমবির বোমা হামলার পর থেকে কয়েকটি পত্রিকা সব দোষ আমাদের ঘাড়ে দেওয়ার জন্য লেগে আছে। নিজামী-মুজাহিদকে জেলে না পোরা পর্যন্ত তাদের ভাত হজম হবে না।’

মুজাহিদ অভিযোগ করেন, কয়েকটি পত্রিকার অপপ্রচারের কারণেই বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুর্নীতির অভিযোগে তাঁকে ও তাঁর দলের আমির মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিডিআর বিদ্রোহের পর কয়েকটি পত্রিকা এ ঘটনার সঙ্গে জামায়াতকে জড়িয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করেছিল বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে সাংবাদিকদের প্রতি নাখোশ: যুদ্ধাপরাধের বিচার বিষয়ে মুজাহিদ বলেন, ‘কয়েকটি পত্রিকা যুদ্ধাপরাধী বিষয়ে জামায়াতকে জেলে ঢোকাতে চায়। যুদ্ধাপরাধী একটি চমত্কার, চটকদার বিষয়। কয়েকজন সাংবাদিক-বন্ধু আছেন, যাঁরা সব সময় এটা নিয়েই থাকেন। তাঁরা গ্যাসের আলোচনায় যুদ্ধাপরাধীর বিষয়ে বলতে থাকেন। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে দেলোয়ার সাহেব (বিএনপির মহাসচিব) স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বেরোচ্ছেন, সাংবাদিকেরা তাঁকে বললেন—যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে কিছু বলুন। সেমিনারে খাদ্যমন্ত্রী কথা বলছেন, তাঁকেও গিয়ে বলা হয়—যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে কিছু বলুন।’

আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে বিচারের বিরোধিতা: জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধের ব্যাপারে জামায়াতকে জড়িত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা করতে মিথ্যা বাদী, মিথ্যা সাক্ষী জোগাড় করতে হবে। এ জন্য তারা ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) দমন আইনের ভিত্তিতে বিচার করতে চায়। কাগুজে প্রতিবেদন দেখিয়েই জামায়াতের নেতাদের বিচার করার জন্য এটা করা হচ্ছে।’

মুজাহিদ বলেন, ‘একাত্তর সালে জামায়াত যে কাজ করেছে, বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টিও তো সে কাজই করেছে। তাহলে কেবল জামায়াতকে ধরছে কেন?’

উচ্চ আদালতে যাবে জামায়াত: কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যের উল্লেখ করে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা মন্ত্রী, বিচারের আসনে নাই। আপনি যদি আমাদের গ্রেপ্তার করেন, এরপর জজকোর্ট ফাঁসি দিলে হাইকোর্টে যাব। হাইকোর্ট ফাঁসি দিলে সুপ্রিম কোর্টে যাব। তার আগেই আমাদের ফাঁসি দিয়ে দিলেন?’

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর জামায়াতের আমির রফিকুল ইসলাম খান বলেন, কয়েকটি পত্রিকা একজোট হয়ে তাঁর একটি বক্তব্যের বিকৃত সংবাদ প্রকাশ করেছে। তিনি দাবি করেন, মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর সঙ্গে জামায়াতের আমির নিজামীর তুলনা করেননি। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বক্তৃতা দিয়েছি আমি, মামলা হয় নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী সাহেবের নামে। ওনারা তো জানেনইনি আমি কী বক্তব্য দিয়েছি।’ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা ও অধ্যাপক মুজিবুর রহমান আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন।


খবরের লিংক

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন