19 March 2010

দেশব্যাপী নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলার উদ্যোগ

আহমেদ দীপু ও মনজুরুল আহসান

যুদ্ধাপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে সরকার আধাসামরিক বাহিনী, পুলিশ ও স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে দেশব্যাপী নিরাপত্তাবলয় তৈরি করতে যাচ্ছে। নাশকতার আশঙ্কায় সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পুলিশের পাশাপাশি নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার জন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে চিঠি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিডিআরকে আরো সতর্কাবস্থায় সীমান্ত পাহারা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এনজিওর টাকা যুদ্ধাপরাধের বিচারবিরোধী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখার জন্য ব্যাংকগুলোর ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধের বিচারে জনমত সৃষ্টি এবং স্থানীয় জনগণকে সচেতন করার জন্য সব শ্রেণী ও পেশার মানুষকে নিয়ে জেলায় জেলায় কমিটি গঠন করা হচ্ছে।

এসব প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রসচিব আব্দুস সোবহান সিকদার গত বুধবার কালের কণ্ঠকে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। শুধু পুলিশের একার পক্ষে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এ জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থাকে কাজে লাগাতে বলা হয়েছে। অপরাধীরা যাতে পালিয়ে যেতে না পারে, সে জন্য বিডিআরকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তদন্ত সেলে কাদের নিয়োগ দেওয়া হবে তা চূড়ান্ত করা হয়নি। তবে শিগগিরই তদন্ত কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হবে। একইভাবে অল্প সময়ের মধ্যেই বিচারিক সেলের কর্মকর্তাদের নিয়োগও সম্পন্ন হবে।

চলতি মাসেই যুদ্ধাপরাধের বিচারকাজ শুরু করতে তদন্ত এবং প্রসিকিউশন সেলে কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে। বিচারকাজ পরিচালনার জন্য পুরনো হাইকোর্ট ভবনের সংস্কারকাজ চলছে বলে জানা গেছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের কাছে তথ্য আছে, সরকার যাতে যুদ্ধাপরাধের বিচারকাজ শুরু করতে না পারে, এ জন্য বিশেষ একটি গোষ্ঠী দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তোলার ষড়যন্ত্র করছে। কিছু এনজিওর আর্থিক সহায়তায় যুদ্ধাপরাধীদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা একটি চক্র বিভিন্ন স্থানে হামলা চালাতে পারে।

স্থানীয় এই চক্রটির সঙ্গে বিশেষ একটি দেশের জঙ্গি সংগঠনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। সংগঠনের একাধিক সদস্য বাংলাদেশে গ্রেপ্তারও হয়েছে। গ্রেপ্তার জঙ্গিদের দেওয়া তথ্য আমলে নিয়েই সরকার প্রতিরোধব্যবস্থা হিসেবে নিরাপত্তাবলয় তৈরি করছে। এই বলয়ে আধাসামরিক বাহিনী হিসেবে বিডিআর, পুলিশ, গ্রামপুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য এবং স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।

আরো জানা গেছে, সরকারের কাছে খবর আছে, ষড়যন্ত্রকারী চক্রটি দেশের যেকোনো গ্যাসক্ষেত্র, গ্যাসের সঞ্চালন লাইন, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিড, বড় বড় বিপণিকেন্দ্রসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাকে হামলার লক্ষ্যবস্তু হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ সন্ত্রাসীরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিরীহ মানুষের সঙ্গে মিশে আছে। তারা যেকোনো সময় গ্রাম থেকে বেরিয়ে এসে হামলা চালিয়ে আবার গ্রামে ফিরে যেতে পারে। আবার কেউ কেউ সীমান্ত পার হয়ে অন্য দেশে আত্দগোপন করতে পারে।

এসব মোকাবিলার ক্ষেত্রে আনসার-ভিডিপি এবং কমিউনিটি পুলিশকে কাজে লাগানো হবে। গ্রামের কোনো এলাকায় অপরিচিত কাউকে ঘোরাফেরা করতে দেখলে বা সন্দেহজনক কাউকে দেখা গেলেই স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে খবর দিতে বলা হয়েছে। এ ধরনের লোকজনকে ধরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করাসহ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য গ্রামের সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে ১৪ দলের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট 'যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ জাতি'_এই স্লোগান নিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত শোভাযাত্রা করেছে। আজ ১৯ ও কাল ২০ মার্চ ঢাকা থেকে নীলফামারী পর্যন্ত তারা শোভাযাত্রা করবে। একইভাবে তারা সারা দেশে শোভাযাত্রা করবে। একই উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগও সারা দেশে সাংগঠনিক সফরে বের হবে। ১৪ দলের পক্ষ থেকে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করার জন্য কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের চিঠি দেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার জন্য রাজধানীতে সমাবেশ করা হবে। এরপর থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে গণসংযোগের কর্মসূচি পালন শেষে সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে নিয়ে প্রতিটি জেলায় কমিটি গঠন করা হবে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, এনজিওগুলোর টাকা যুদ্ধাপরাধের বিচারবিরোধী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গত জোট সরকারের সময় জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ সমাজকল্যাণমন্ত্রী থাকার সময় নিবন্ধন নেওয়া এনজিওগুলোর কার্যক্রম ঘনিষ্ঠভাবে মনিটর করা হচ্ছে। এ ছাড়া ওই সময়ে এনজিও ব্যুরোর কাছে নিবন্ধন নেওয়া বেসরকারি সংস্থাগুলোর বিদেশ থেকে আনা টাকা যুদ্ধাপরাধের বিচারবিরোধী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার হচ্ছে কি না সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। চারদলীয় জোট সরকারের সময় ৪৭৫টি বেসরকারি সংস্থা এনজিও ব্যুরোর কাছ থেকে নিবন্ধন নেয় বলে জানা গেছে।

ব্যাংকের মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনের নামে বিদেশ থেকে টাকা আসার প্রমাণ সরকারের হাতে আছে। এ ধরনের কাজে জড়িত থাকার জন্য বেশ কিছু হিসাব নম্বর এরই মধ্যে ফ্রিজ করা হয়েছে। ব্যাংক হিসাবের বাইরে হুন্ডির মাধ্যমেও জঙ্গি সংগঠনগুলোর কাছে বিদেশ থেকে টাকা আসছে। এই টাকা জঙ্গিদের হাতে পেঁৗছে গেছে এবং তারা তা ব্যয় করা শুরু করেছে বলেও জানা গেছে। কোথায়, কিভাবে এই টাকা ব্যবহার হচ্ছে, সে বিষয়ে অনুসন্ধান করছেন বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা।

এ প্রসঙ্গে সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ গতকাল বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, এনজিওর টাকা যুদ্ধাপরাধের বিচারবিরোধী কাজে ব্যবহার হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কিছু ব্যাংক আছে যারা ধর্মীয় নাম ব্যবহার করে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ওই সব ব্যাংকের ওপর কঠোর নজর রাখতে বলা হয়েছে।

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়কমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ গত মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় খুন, ধর্ষণ, অগি্নসংযোগের সঙ্গে জড়িতদের আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ আইনে বিচার করা হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্যে শিগগিরই তদন্ত সংস্থা ও আইনজীবী প্যানেলের নিয়োগ দেওয়া হবে।


খবরের লিংক

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন