নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) হামলার ঘটনা ছিল দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ এবং এ হামলা সফল করতে ৫০ ক্যাডারকে সশস্ত্র ও জঙ্গি প্রশিক্ষণ দেয় শিবির। গত বছর ১৩ মার্চ ছাত্র সংঘর্ষে নিহত শিবিরের রাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান নোমানী হত্যার প্রতিশোধ নিতে শিবির গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাণ্ডব চালায়।
নোমানী হত্যার প্রতিশোধ ছাড়াও এ হামলার আরো একটি বড় উদ্দেশ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিবিরের আধিপত্য অটুট রাখা। র্যাবের হাতে আটক ও বর্তমানে মতিহার থানা পুলিশের রিমান্ডে থাকা রাবির হবিবুর রহমান হল শাখা শিবিরের সভাপতি রাইজুল ইসলাম পুলিশকে এসব তথ্য দিয়েছে। শিবির ক্যাডার রাইজুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে যুক্ত একজন পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, শিবির ক্যাডার রাইজুল
তাঁদের জানিয়েছে, গত বছর ১৩ মার্চ রাবি ক্যাম্পাসে শিবিরের সাধারণ সম্পাদক নোমানী নিহত হলে এপ্রিলের শেষের দিকে রাতের বেলা ইসলামিয়া কলেজে শিবিরের নেতারা এক গোপন সভা করে। ওই সভায় রাবির প্রতিটি হলের দায়িত্বশীল এবং রাবি শাখা শিবিরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অংশ নেয়। সভায় পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে নোমানী হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় শিবির নেতারা। ওই সভায় আরো সিদ্ধান্ত হয়, ১৯৮৯ সালে শিবির যেভাবে গানপাউডার দিয়ে বিভিন্ন হলে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বসবাস করে সেসব হলে তেমন ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হবে। কিন্তু পরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত আরেকটি পরিকল্পনা সভায় শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির নেতাদের সেই ধরনের ব্যাপক কোনো ধ্বংসযজ্ঞ চালানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়। পরে জুনের শেষে আরেকটি সভায় সিদ্ধান্ত হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আধিপত্য ধরে রাখতে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৫০ শিবির ক্যাডারকে সশস্ত্র ও জঙ্গি প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অস্ত্র ও গুলি সংগ্রহের জন্য তিন শিবির নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। বহিরাগত শিবির ক্যাডার জাফর বাবু সীমান্ত পথে অস্ত্রের জোগান দেওয়ার নিশ্চয়তা দেয়। পাশাপাশি শতাধিক শিবির ক্যাডারকে সশস্ত্র ও জঙ্গি প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলা হয় তাকে। বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন শিবির নিয়ন্ত্রিত গ্রাম ও পদ্মার চরাঞ্চলে শিবির ক্যাডারদের প্রশিক্ষণ চলে জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত।
পুলিশের সূত্রগুলো আরো বলছে, নির্বাচিত শিবির ক্যাডারদের কোথায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, এসব তথ্য রাইজুল নিজে জানে না বলে বারবার দাবি করেছে পুলিশের কাছে। তবে সশস্ত্র ও জঙ্গি প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী শিবির ক্যাডারদের অধিকাংশই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের সক্রিয় কর্মী বলে সে জানিয়েছে পুলিশকে। পুলিশ সেসব প্রশিক্ষিত শিবির ক্যাডারের নাম পাওয়ার চেষ্টা করছে রাইজুলের কাছ থেকে।
রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, রাইজুল নিজেও অস্ত্র পরিচালনা ও জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়েছে, আর তা সে স্বীকারও করেছে। ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে জিয়া হলের সামনে রাইজুল তার দলবল নিয়ে পুলিশের ওপর বোমা হামলা ও গুলিবিনিময় করে। ওই রাতে শিবির ক্যাডাররা যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে, সেগুলো উদ্ধারে রাইজুল কিছু কিছু তথ্য দিচ্ছে বলেও গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। মতিহার থানার ওসি তোফাজ্জল হোসেন খান জানান, রাইজুল অস্ত্র উদ্ধার ও শিবিরের জঙ্গি প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী ক্যাডারদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে পুলিশকে। এ তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার ও অস্ত্রের সন্ধান পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, র্যাব-২-এর সদস্যরা ২৫ ফেব্রুয়ারি রাইজুলকে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে। ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর মুখ্য মহানগর হাকিম রাইজুলের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বর্তমানে তাকে মতিহার থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রাইজুল ছাত্রলীগকর্মী ফারুক হোসেন হত্যা মামলার ৭ নম্বর এজাহারভুক্ত আসামি।
খবরের লিংক
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন