কুদরাত-ই-খুদা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় | তারিখ: ১০-০২-২০১০
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রক্তের দাগ মুছতে না মুছতেই রক্তে রঞ্জিত হলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। গত সোমবার রাতে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ক্যাডারদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ঝরে গেছে একটি তাজা প্রাণ। তাঁর নাম ফারুক হোসেন (২৫)। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সম্মান শেষবর্ষের ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মী। খুনিরা তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ ম্যানহোলে ফেলে দেয়। গতকাল মঙ্গলবার সকালে তাঁর মরদেহ শাহ মখদুম হলের পাশে একটি ম্যানহোলে পাওয়া যায়। গত সপ্তাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের কারণে মারা যান ইসলামের ইতিহাস বিভাগের মেধাবী ছাত্র আবু বকর সিদ্দিক।

হত্যার পর ম্যানহোলে ফেলে দেওয়া হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কর্মী ফারুক হোসেনের লাশ। এর আগে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তাহের আহমেদকে হত্যা করে লাশ ফেলে দেওয়া হয়েছিল সেপটিক ট্যাংকে। অধ্যাপক তাহেরের সেই ছবি ছাপা হয়নি। কিন্তু বর্বরতার ধরন তুলে ধরতে ছাপা হলো এই ছবিটিঃ প্রথম আলো
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মী ও ক্যাডারদের সশস্ত্র হামলা চলে সোমবার রাত থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত। এ সময় মুহুর্মুহু গুলির শব্দ শোনা যায়। শিবিরের হামলায় পুলিশসহ কমপক্ষে ৫০ জন আহত হন। তাঁদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ নগরের বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে কমপক্ষে ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। শিবিরের ক্যাডাররা ছাত্রলীগের তিন কর্মীর হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাতভর ক্যাম্পাসসহ আবাসিক হলগুলোতে কয়েক শ কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করলেও পুলিশের সঙ্গে শিবিরের নেতা-কর্মী ও ক্যাডারদের রাতভর গুলিবিনিময় চলে। গতকাল সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব লতিফ হলের সামনে থেকে একটি এলজি ও তিনটি অবিস্ফোরিত শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করে পুলিশ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা না করলেও গতকাল সকাল থেকে বিভিন্ন আবাসিক হল ও ক্যাম্পাসসংলগ্ন বেসরকারি ছাত্রাবাস ও মেসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা এলাকা ছাড়েন। দুপুরের মধ্যে ক্যাম্পাস প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। সন্ধ্যায় সহকারী প্রক্টর মুসতাক আহমেদ জানান, সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ১১ ফেব্রুয়ারি ও সব পরীক্ষা ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে হল ও ক্যাম্পাস খোলা থাকবে। ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব ও ভূবিদ্যা অনুষদের ডিন গোলাম কবিরের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে অতি দ্রুত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদ গতকাল বিকেলে রাজশাহী পৌঁছেছেন।
ঘটনা শুরু যেভাবে: প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কর্মী আসাদুর রহমান সোমবার রাত আটটার দিকে বঙ্গবন্ধু হলে ঢোকার সময় ফটকের সামনে শিবিরের নেতা-কর্মীরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। তিনি শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান নোমানী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ তোলেন তাঁরা। শিবিরের নেতা-কর্মীরা তাঁকে ওই হলের অনাবাসিক ছাত্র উল্লেখ করে হলে উঠতে বাধা দেন। এ নিয়ে আসাদ ও তাঁর সঙ্গে থাকা ছাত্রলীগের অপর কর্মী কাওসার আলমের সঙ্গে শিবিরের নেতা-কর্মীদের বাগিবতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে বঙ্গবন্ধু হল শাখা শিবিরের সাধারণ সম্পাদক খালিদ হোসাইনের নেতৃত্বে ১০-১৫ জন কর্মী চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ও রড দিয়ে পিটিয়ে তাঁদের গুরুতর আহত করেন। হলের কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা তাঁদের উদ্ধার করে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিত্সাকেন্দ্র এবং পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাঁরা চিকিত্সাধীন রয়েছেন।
হলে হলে শিবিরের হামলা: এ ঘটনার কথা দ্রুত ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি ছাত্র হলেই শিবির ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মুখোমুখি অবস্থান নেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ক্যাম্পাসে যায়। বঙ্গবন্ধু হল, নবাব লতিফ হল ও শহীদ হবিবুর রহমান হলে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ আবদুল্লাহ আল মামুন, আশরাফুল ইসলাম, শাহ হাবিব, মাহফুজুর রহমান, খোরশেদ আলম, মোমিনুল ইসলামসহ শিবিরের ১৩ কর্মীকে আটক করে।
এ খবর পেয়ে বিভিন্ন হল থেকে শিবিরের দুই শতাধিক নেতা-কর্মী ও ক্যাডার সশস্ত্র অবস্থায় মিছিলসহ ক্যাম্পাসে জড়ো হন। মিছিল শেষে তাঁরা একে একে শহীদ হবিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, শামসুজ্জোহা হলসহ অন্যান্য হলের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে ছাত্রলীগের কর্মীদের ওপর এলোপাতাড়ি হামলা চালান। এতে ছাত্রলীগের অনেক নেতা-কর্মী আহত হন। শিবিরের ক্যাডাররা হবিবুর রহমান হলের ছাত্রলীগের কর্মী বাদশা, লতিফ হলের ফিরোজ ও ছাত্রলীগের অপর কর্মী রুহুল আমীনের হাত ও পায়ের রগ কেটে দেন। পরে তাঁরা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত ২২১, ২২২, ২২৬ থেকে শুরু করে ২৩৬ নম্বর কক্ষে ভাঙচুর চালান। ওই হলের ২৭৫ ও ২৭৬ নম্বর কক্ষে ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
শিবিরের হামলায় পুলিশ সদস্য ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী মিলিয়ে কমপক্ষে ৫০ জন আহত হন। তাঁদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের চিকিত্সা কর্মকর্তা দেবাশীষ রায় বলেন, ফিরোজ, শফিউল্লাহ, লুত্ফর রহমান, তৌফিক, রুহুল আমিন, নিজাম, নাদিম, বাদশা, জনি, আসাদ, কাওসারসহ বেশ কয়েকজন হাসপাতালে চিকিত্সাধীন আছেন। কয়েকজন পুলিশ সদস্যও চিকিত্সা নিচ্ছেন। বাদশা, রুহুল আমিন ও ফিরোজের হাত-পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের শিগগির ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে।
পুলিশ ও শিবিরের বন্দুকযুদ্ধ: হলগুলোতে শিবিরের একের পর এক হামলার একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। পরে শিবিরের ক্যাডাররা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। একপর্যায়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে তাঁরা বোমা ও ককটেল ছুড়লে পুলিশ পাল্টা গুলি, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। শিবিরের ক্যাডাররা গুলিও ছোড়ে। রাত একটা থেকে তিনটা পর্যন্ত প্রায় চার-পাঁচ শ গুলির শব্দ শোনা যায়।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপকমিশনার সরদার নূরুল আমিন সাংবাদিকদের জানান, ছাত্রলীগ ও পুলিশের ওপর হামলা চালাতে শিবির বোমা, আগ্নেয়াস্ত্রসহ সব ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ৩০০ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছাড়াও শতাধিক ফাঁকা গুলি ছোড়ে। শিবিরের হামলায় সাত-আটজন পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন। তাঁদের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
ফারুক যেভাবে খুন হলেন: শিবিরের হামলায় আহত শাহ মখদুম হলের ছাত্রলীগের কর্মী তৌফিক সাংবাদিকদের জানান, হলে হলে হামলার একপর্যায়ে তাঁরা ১০-১২ জন হলের টিভি কক্ষে আশ্রয় নেন। রাত একটার দিকে হল শাখা শিবিরের সভাপতি আনিসুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আহাদের নেতৃত্বে প্রায় ২৫-৩০ জন সশস্ত্র ক্যাডার টিভি কক্ষের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে চাপাতি, রড, হাতুড়ি ও চায়নিজ কুড়াল দিয়ে হামলা চালায়। এ সময় ফারুক ছাড়া সবাই ওই কক্ষ থেকে পালিয়ে যান। সকালে পুলিশ ওই হলসংলগ্ন ম্যানহোল থেকে ফারুকের মরদেহ উদ্ধার করে। সেখান থেকে লাশ তোলার পর বুকপকেটে থাকা পরিচয়পত্র দেখে তাঁর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। গতকাল ওই টিভি কক্ষে গিয়ে মেঝেতে জমাট বাঁধা ছোপ ছোপ রক্ত দেখা যায়।
নিহত ফারুক হোসেন জয়পুরহাট সদর উপজেলার খোর্দ্দ সগুনার মাঝিপাড়া গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে। ফারুক শাহ মখদুম হলের ১০৯ নম্বর কক্ষে থাকতেন।
লাশের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।
শাহ মখদুম হলের প্রাধ্যক্ষ দুলাল চন্দ্র রায় জানান, সোমবার রাতে নৈশপ্রহরী আবদুল হামিদ ও গিয়াস হলের পাহারায় ছিলেন। এ ছাড়া সাতজন পুলিশ সদস্য ওই হলে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বললে ঘটনা সম্পর্কে জানা সম্ভব বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান। কথা বলার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করেও হামিদ ও গিয়াসকে পাওয়া যায়নি।
জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, ফারুকের মরদেহ গতকাল তাঁর গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাটের সদর উপজেলার ভাদসা ইউনিয়নের খোর্দ্দ সগুনা গ্রামে পৌঁছালে হূদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। উপস্থিত গ্রামবাসী কান্নায় ভেঙে পড়ে। সন্ধ্যা সাতটার দিকে ছোট মাঝিপাড়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর মরদেহ দাফন করা হয়।
বর্তমান পরিস্থিতি: বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া, সহকারী প্রক্টর মুসতাক আহমেদ, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা রাজশাহী মহানগর পুলিশের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালান। পুলিশের উপকমিশনার সরদার নুরুল আমিনের নেতৃত্বে তিনজন সহকারী কমিশনার ও তিন থানার তিন ওসি কয়েক শ পুলিশ সদস্য নিয়ে রাতভর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালান। পরে রাজশাহী র্যাব-৫-এর সদস্যদেরও ক্যাম্পাসে আনা হয়। ক্যাম্পাসে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও র্যাব সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য: ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আওয়াল কবির ও সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম বলেন, শিবির পূর্বপরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছাত্রলীগের কর্মীদের ওপর অতর্কিতে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে। তাঁরা অবিলম্বে ফারুক হত্যার বিচারসহ এই সশস্ত্র হামলা, বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার বিচার দাবি করেন। নইলে শিবিরের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দেন তাঁরা।
ছাত্রশিবির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি শামসুল আলম দাবি করেন, ছাত্রলীগের কর্মীরা বঙ্গবন্ধু হলে অবৈধভাবে সিট দখলের চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। শিবিরের নেতা-কর্মীরা এর প্রতিবাদ করতে গেলে সংঘর্ষ বাধে।
রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় মতিহার থানায় কোনো মামলা বা অভিযোগ করা হয়নি।
উপাচার্য এম আবদুস সোবহান ক্যাম্পাসে পড়াশোনার সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
চারঘাটে জামায়াতের কার্যালয় ভাঙচুর: আমাদের রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, ফারুক হত্যার প্রতিবাদে ছাত্রলীগের ক্ষুব্ধ কর্মীরা গতকাল মিছিল ও পথসভা শেষে চারঘাট পল্লী বিদ্যুতের মোড়ে উপজেলা জামায়াতের কার্যালয়ের দরজা ও আসবাব ভাঙচুর করেন। চারঘাট থানার ওসি হামিদুর রশিদ জানান, ছাত্রলীগের ক্ষুব্ধ কর্মীরা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, তবে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি: ইউএনবি জানায়, কুয়েত সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহিংস ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা ছাত্রলীগ বা ছাত্রশিবির যে সংগঠনের হোক না কেন তারা রেহাই পাবে না। কুয়েতে বায়ান প্রাসাদে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি দোষীদের গ্রেপ্তার ও যেকোনো মূল্যে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
নিন্দা: এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়ে মিছিল-সমাবেশ করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। ঘটনার প্রতিবাদে নীলফামারী জেলা ছাত্রলীগ শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। এর আগে সকালে ছাত্রলীগের কর্মীরা নীলফামারী সরকারি কলেজে ছয়জন শিবিরের কর্মীকে মারধর করেন।
মুজাহিদের বিবৃতি: নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, ছাত্রশিবিরের হামলায় ছাত্রলীগের কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস বন্ধের লক্ষ্যে ছাত্র হত্যার সব ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে যাকেই জড়িত পাওয়া যাবে, তাকেই উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া উচিত।
খবরের লিংক
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন