9 February 2010

‘পুলিশের পায়ে পড়ে বলেছিলাম ভাই, বাঁচান’


নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী | তারিখ: ১০-০২-২০১০

‘দরজা ভেঙে বাইরে গিয়ে পুলিশের পায়ের ওপরে পড়ে বলেছিলাম, ভাই, বাঁচান। পুলিশ পা ঝাড়া দিয়ে ফেলে চলে যায়। তারপর শিবির ক্যাডাররা এসে আমার বাম ঊরু চায়নিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে জখম করে।’ এভাবেই বলছিলেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন শফিউল্লাহ। তিনি ছাত্রশিবিরের হামলায় নিহত ফারুক হোসেনের রুমমেট। তাঁরা দুজনই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
শফিউল্লাহ হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিত্সাধীন। তিনি গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, গত সোমবার রাত নয়টার দিকে তিনি ও ফারুক একসঙ্গে ভাত খেয়েছেন। এর কিছুক্ষণ পর শিবিরের ক্যাডাররা ফটক ভেঙে শাহ মখদুম হলের ভেতরে ঢুকে পুলিশের সহায়তায় ছাত্রদের পরিচয়পত্র দেখে। এই অবস্থা দেখে তিনি হলের প্রাধ্যক্ষ দুলালচন্দ্র রায়কে ফোন করেন।

শফিউল্লাহ বলেন, ‘স্যার সবাইকে নিজ নিজ কক্ষে যেতে বললে আমরা কক্ষে চলে যাই। কিন্তু শিবির ক্যাডাররা চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। এ অবস্থায় আমরা নিজদের কক্ষে থাকতে অনিরাপদ বোধ করছিলাম।’ তিনি জানান, রাত একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা গোলাম সাব্বির সাত্তার, প্রক্টর চৌধুরী জাকারিয়া ও তারেক নূর স্যার এলে তাঁরা নিরাপত্তাহীনতার কথা জানান। তাঁদের মধ্যে শফিউল্লাহ, নিজাম, লুত্ফর, মুন্না, মশিউর, তৌফিক, রবিউল, বকুল, রব্বানী ও নিহত ফারুক নিরাপত্তার কারণে টিভি কক্ষে একসঙ্গে থাকতে চান। শফিউল্লাহ আরও জানান, এ সময় হলে কর্তব্যরত পুলিশকে প্রক্টর নির্দেশ দেন, তাঁদের যেন কোনো ক্ষতি না হয়। পুলিশের হাতে অস্ত্র আছে। প্রয়োজনে ব্যবহার করারও নির্দেশ দেন প্রক্টর। তখন পুলিশ সদস্যরা তাঁদের এই বলে নিশ্চয়তা দেন, তাঁদের মেরে তারপর ছাত্রদের গায়ে আঘাত করতে হবে।

শফিউল্লাহ জানান, রাত একটা ৪০ মিনিটের সময় শিবিরের হল শাখার সাবেক সভাপতি আনিস, বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে শিবিরের ২০-২৫ জন ক্যাডার তাঁদের ওপর হামলা চালায়। শফিউল্লাহ আরও জানান, শিবিরের ক্যাডাররা তাঁর মাথায় চায়নিজ কুড়াল দিয়ে আঘাত করে। প্রাণ বাঁচাতে তিনি সজোরে লাথি দিলে দরজা খুলে যায়। তিনি বাইরে দৌড়ে গিয়ে একজন পুলিশের পায়ের ওপর উপুড় হয়ে পড়েন। পুলিশ পা ঝাড়া দিয়ে ফেলে যাওয়ার পর শিবির ক্যাডাররা এসে তাঁর ঊরুতে আঘাত করে।

সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর হলে শিক্ষার্থী আসাদকে কুপিয়ে জখম করার মাধ্যমে শিবিরের তাণ্ডব শুরু হয়। হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিত্সাধীন আসাদ অভিযোগ করে বলেন, শিবিরের কর্মীরা তাঁকে মারধর করতে শুরু করলে তিনি হলের পুলিশ বক্সে ঢোকার চেষ্টা করেন। দুই পুলিশ সদস্যের সামনে থেকেই তাঁকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়।

গতকাল দুপুর দুইটার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবদুস সোবহান ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা হাসপাতালে আসাদের শয্যাপাশে গেলে আসাদ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। উপাচার্যের উদ্দেশে আসাদ বলেন, ‘আমার ওপর হামলা করার ছয়-সাত ঘণ্টা পর অন্য হলে হামলা চালিয়ে ছাত্রলীগের ভাইকে হত্যা করা হলো। আপনারা কী করলেন?’ শিক্ষকদের একজন বললেন, ‘এ প্রশ্নের জবাব আমরাও খুঁজছি।’ আরেকজন বলেন, ‘পুলিশ রে বাবা।’ উপাচার্য কোনো কথা না বলে আসাদের ব্যান্ডেজ মোড়ানো মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। ছাত্র উপদেষ্টা গোলাম সাব্বির সাত্তার আসাদকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে রাজশাহীর পুলিশ কমিশনার নওশের আলী গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি খোঁজখবর নিয়ে এ ব্যাপারে কথা বলবেন।


খবরের লিংক

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন