9 February 2010

নব্বইয়ের পরে নিহত ১৪ শিক্ষার্থীর নয়জনই শিবিরের শিকার


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি | তারিখ: ১০-০২-২০১০

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯০ সালের পর থেকে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৪ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে নয়জনই মারা গেছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের হামলায়। ১৯৫৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ২৮ জন নিহত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সর্বশেষ হত্যাকাণ্ড ঘটে গত সোমবার রাতে। ছাত্রশিবিরের ক্যাডারদের হামলায় নিহত হন গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কর্মী ফারুক হোসেন। গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম আবাসিক হল সংলগ্ন ম্যানহোল থেকে ফারুকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

১৯৯৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে শিবিরের ক্যাডারদের সশস্ত্র হামলায় নিহত হন আমানুল্লাহ আমান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের (জাসাস) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৫ সালে শিবিরের হামলায় ছাত্রমৈত্রীর নেতা জুবায়ের হোসেন নিহত হন।

১৯৯৩ সালে এক বছরেই শিবিরের হামলায় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের পাঁচজন নেতা-কর্মী নিহত হন। জানুয়ারিতে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল দখলকে কেন্দ্র করে শিবিরের হামলায় নিহত হন ছাত্রলীগের বিশ্বজিত্ ও নতুন। একই ঘটনায় আহত হয়ে কিছু দিন পরে মারা যান ছাত্র ইউনিয়নের নেতা তপন। ওই বছর ছাত্রমৈত্রীর রুপম ভট্টাচার্য ও ছাত্রলীগের নেতা মঞ্জুর এলাহীকে হত্যা করে শিবিরের ক্যাডারেরা। আর ১৯৯২ সালের ১৭ মার্চ শিবিরের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন জাসদ ছাত্রলীগের কর্মী ইয়াসির আরাফাত।
১৯৯০ সালের পর ছাত্রলীগ, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ছাত্রমৈত্রীর সঙ্গে সংঘর্ষে শিবিরেরও পাঁচ নেতা-কর্মী নিহত হন। এর মধ্যে গত বছরের ১৩ মার্চ ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান নোমানী। বিগত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের জানুয়ারিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন শিবিরের কর্মী সাইফুদ্দিন আহমেদ। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় নিহত হন শিবিরের নেতা সাব্বির, হামিদ, আইয়ুব।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের উত্থান: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ১৯৮০ সালে শিবির তাদের কার্যক্রম শুরু করে। তারা ক্যাম্পাস দখলের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রথমে মসজিদভিত্তিক কার্যক্রম শুরু করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর, বুধপাড়া, কাঁটাখালী, মেহেরচণ্ডীসহ বিভিন্ন এলাকায় ছাত্রাবাসগুলোয় অবস্থান নিতে থাকে। স্থানীয় লোকজনের বাড়িতে শিবিরকর্মীদের লজিং রাখা হয়। এদের কেউ কেউ ওই সব বাড়িতে বিয়ে করে। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে তাদের অবস্থান পাকাপোক্ত হয়।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, নব্বইয়ের দশকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন জামায়াতপন্থী হিসেবে পরিচিত ইউসুফ আলী। সে সময় শিবির প্রশাসনিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পায় বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সভাপতি শামসুল আলম শিবিরের বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, ছাত্রশিবির সন্ত্রাস ও দখলের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। শিবিরের বিরুদ্ধে খুনসহ অন্যান্য অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব ঘটনা সম্পর্কে তিনি তেমন কিছু জানেন না।
উপাচার্যের ভাষ্য: বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবদুস সোবহান বলেন, শিবিরের বিভিন্ন অপতত্পরতা সম্পর্কে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন মহল অবগত আছে। তিনি বলেন, এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


খবরের লিংক

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন