9 February 2010

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের হামলায় নিহত ছাত্রলীগ কর্মীর লাশ উদ্ধার: পুলিশসহ আহত ৫০


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক | তারিখ: ০৯-০২-২০১০

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের হামলায় নিহত এক ছাত্রলীগ কর্মীর লাশ আজ মঙ্গলবার ভোরে উদ্ধার করা হয়। তাঁর নাম ফারুক হোসেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
ছাত্রশিবিরের হামলায় গত সোমবার রাত থেকে আজ মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় মুহুর্মুহু গুলির শব্দে ক্যাম্পাস প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।

দফায় দফায় চলা সংঘর্ষে আহত হয় পুলিশসহ ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী। হামলার সময় শিবির ক্যাডাররা ছাত্রলীগ কর্মী বাদশা, রুহুল আমিন ও ফিরোজের পায়ের রগ কেটে দেয়। আহতদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গুরুতর আহত হয়েছেন ছাত্রলীগ কর্মী ফিরোজ, শফিউল্লাহ, লুত্ফর রহমান, তৌফিক, রুহুল আমিন, নিজাম, নাদিম, বাদশাহ, জনি, আসাদ, কাওসারসহ আরও অনেকে। আহতদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ নগরের বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার হলে ওঠাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কর্মী আসাদুর রহমান ও কাওসার আলমকে ছাত্রশিবিরের কয়েকজন কর্মী চাপাতি ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এর জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি হলেই ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা অস্ত্রসহ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বঙ্গবন্ধু হলসহ লতিফ হল ও হাবিবুর রহমান হলে তল্লাশি চালিয়ে শিবিরের সদস্য সন্দেহে পুলিশ ১৩ জনকে আটক করে। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছেন—আবদুল্লাহ আল মামুন, আশরাফুল ইসলাম, শাহ হাবিব, মাহফুজুর রহমান, খোরশেদ আলম, মোমিনুল ইসলাম প্রমুখ।

সহকর্মীদের আটকের খবর পেয়ে বিভিন্ন আবাসিক হল থেকে শিবিরের প্রায় ২০০ নেতা-কর্মী ও ক্যাডার সশস্ত্র অবস্থায় মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলের মূল ফটক বন্ধ করে দেওয়া হলেও, শিবিরের নেতা-কর্মী ও ক্যাডাররা সশস্ত্র অবস্থায় আমীর আলী হল, এসএম হল, মাদার বখ্শ হল, হাবিবুর রহমান হল, শামসুজ্জোহা হল, সোহরাওয়ার্দী হলসহ বিভিন্ন হলের মূল ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। হলের ভেতরে প্রবেশ করার পর তারা চাপাতি, ছুরি, লাঠিসহ বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ওই সব হলে অবস্থানরত ছাত্রলীগ কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। শিবিরের এলোপাতাড়ি সশস্ত্র হামলায় বিভিন্ন হলের প্রায় অর্ধশত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী আহত হয়। হামলার সময় তারা কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীর হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয়। পাশাপাশি তারা বিভিন্ন হলে ছাত্রলীগ-নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

পরে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা অন্যত্র আশ্রয় নিলে, শিবির ক্যাডাররা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। একপর্যায়ে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। রাত একটা থেকে তিনটা পর্যন্ত একটানা গুলির শব্দে ক্যাম্পাস কেঁপে কেঁপে ওঠে। শেষরাতে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। ক্যাম্পাসে এখন উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেখানে পুলিশ, র্যাব, দাঙ্গা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘কীভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখতে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’


খবরের লিংক

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন